‘‘যে ওদুদের জন্য আপনারা চোখের জল ফেলছেন সে একটা দীর্ঘ সংগ্রামের ফল৷ তিনি ছাত্রজীবন থেকে স্বপ্ন দেখেছেন ব্যক্তিগত জীবন নয়, পারিবারিক জীবন নয়, সমাজকে নিজের বলে গ্রহণ করার৷ কমরেড ওদুদের যে চরিত্র দেখেছেন, তাঁর যে দরদবোধ, যে বিরাট হৃদয়, যে ভালবাসা এখানকার মানুষ অনুভব করেন তা কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাকে হাতিয়ার করে গড়ে ওঠা এক বিশেষ সংগ্রামের ফসল৷’’ ১৭ এপ্রিল নদিয়ার বারুইপাড়ায় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের এক সমাবেশে এ কথা বলেন এস ইউ সি আই (সি)–র সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ৷
এদিন ছিল ‘বীর শহিদ আব্দুল ওদুদ স্মৃতিভবন’–এর উপর নির্মিত ১৫০ আসন বিশিষ্ট একটি মিটিং হলের উদ্বোধন৷ ১৯৯৮ সালের ২৯ মে তিনি শহিদ হন৷ তার আগের দিন ছিল পঞ্চায়েত নির্বাচন৷ সারা দিন রাত পোলিং–এর কাজ করে ২৯ মে সকাল ১০টা নাগাদ শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে বাজারের এক চায়ের দোকানে চা খেতে বসেছিলেন৷ রাস্তায় তখনও বোমা পিস্তল নিয়ে সিপিএম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে৷ চতুর্দিকে এক সন্ত্রস্ত পরিবেশ৷ এমন সময় স্থানীয় এক সিপিএম নেতা গ্রামে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার কথা বলে আব্দুল ওদুদকে পাশেই পঞ্চায়েত অফিসে পুলিশের উপস্থিতিতে আলোচনার জন্য আসতে বলেন৷ বিশ্বাস করে ওদুদ মাস্টার পঞ্চায়েত অফিসে যান৷ পুলিশ তখনই চলে যেতে উদ্যত হয়৷ চক্রান্ত বুঝতে পেরে ওদুদ পুলিশকে থাকার জন্য অনুরোধ করলেও পুলিশ চলে যায়৷ এমন সময় সশস্ত্র মিছিল নিয়ে সিপিএম ঘিরে ধরে এবং শাবল বল্লম দিয়ে উন্মত্ত উল্লাসে তাঁকে হত্যা করে৷
ওদুদকে সিপিএম টার্গেট করেছিল কেন? স্মৃতিভবন রক্ষা কমিটির সম্পাদিকা কমরেড ইসমত আরা খাতুন জানালেন, ওদুদ ছিলেন সংগ্রামের জীবন্ত প্রতীক৷ ১৯৭৬ সালে তিনি এসইউসিআই(সি) দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জোতদার মহাজনদের বিরুদ্ধে গ্রামের মানুষদের সংগঠিত করে আন্দোলন করেন৷ এলাকায় মনীষীদের জীবন চর্চার মধ্য দিয়ে এক উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি করেন৷ তাঁর মাধ্যমে এলাকায় এসইউসিআই(সি)–র দ্রুত শক্তিবৃদ্ধি হচ্ছিল৷ সিপিএমের সৎ কর্মীরাও দলের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছিলেন৷ ফলে এসইউসিআই(সি)–কে নির্মূল করতেই পুলিশি হয়রানি, মিথ্যা মামলা, গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া এবং খুন সবই ওরা করেছে৷
ইতিহাস বলে অত্যাচারীরা শেষ কথা বলে না৷ সমস্ত অত্যাচার মোকাবিলা করেই এসইউসিআই (সি)–র শক্তিবৃদ্ধি ঘটছে৷ এদিনের বিশাল সমাবেশ সে কথাই বলছে৷ সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের রাজ্য কমিটির সদস্য কমরেড সেখ খোদাবক্স৷ জেলা কমিটির সদস্য কমরেড মহিউদ্দিন মান্নান বক্তব্য রাখেন৷
(৭০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ২৭ এপ্রিল, ২০১৮)