মুখ বিকৃত করে, বিড়ি টানতে টানতে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নরেন্দ্র মোদি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ নানা ব্যক্তি সম্পর্কে অশ্লীল ভাষায় ইউটিউব-ভিডিও বানিয়েও যে হাজার হাজার টাকা রোজগার করা যায়, সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া এক ব্যক্তি কিন্তু তা দেখিয়ে দিল। রোজগারের এমন সহজ পন্থা থাকতে মানুষ কেন অন্য কিছু ভাববে? এ তো বেকারত্বের সহজ সমাধান। তাই ইদানীং বেশ কিছু মানুষ, সারাদিন কে কী খাচ্ছে, কোথায় যাচ্ছে, কী কী রান্না করছে, সেসব নিয়ে ইউটিউব ব্লগ বানাচ্ছে এবং সেখান থেকে রোজগার করছে। যদিও সবার পক্ষে ওই কাঙ্খিত স্বপ্ন ছোঁয়া সম্ভব হয় না। তবুও নিজেকে প্রকাশ করার এই সহজ সরল মাধ্যমকে কজনই বা অস্বীকার করতে পারছে?
প্রসঙ্গ সেটা নয়। প্রসঙ্গ হচ্ছে এই অশ্লীল খেউড়ে কেউ কেউ নাকি প্রতিবাদের নতুন রূপ খুঁজে পেয়েছেন এবং সেটাকে জাস্টিফাই করতে নানা যুক্তির অবতারণা করছেন। যুক্তির সেই অদ্ভুত চর্চায় এখন সামাজিক মাধ্যম রমরম করছে। যদিও এটাও ওই ব্যক্তির জনপ্রিয়তাকে একটা উচ্চতা দিচ্ছে। তাকে নিয়ে চর্চা চলছে, কেউ পক্ষে বলছে, কেউ বিপক্ষে। এই সৌভাগ্যই বা ক’জনের হয়েছে! কই আপনাকে নিয়ে তো কেউ চর্চা করে না? প্রচারে থাকতে গেলে সবসময় ভালো কিছু করতে হবে সেটা আপনাকে কে বলেছে? আপনি এরকম গালাগালি দিয়ে একটা ভিডিও আপলোড করে দিন। ব্যাস, দেখবেন আপনি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠেছেন। এটাও সেরকমই একটা চেষ্টা। খুব অবাক লাগে যখন কেউ বলে, কই রবীন্দ্রনাথ- নজরুলকে যখন অপমান করছিল, রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে যখন অশালীন কথা বলছিল, তখন তো তাকে গ্রেফতার করেনি? মানে যেটা দাঁড়াচ্ছে, কারও একটা অন্যায়ের সময় যেহেতু তুমি চুপ ছিলে, তাই অন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধেও তোমাকে চুপ থাকতে হবে। এটা বলছে না যে, এই কদর্য অশ্লীলতা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। প্রতিবাদের নামে এই বিকৃত রুচি, এই ভাষা সত্যিকারের প্রতিবাদকে কলঙ্কিত করবে, তাকে বিপথে পরিচালিত করবে। তাই যে কোনও শর্তে এটা বন্ধ হওয়া উচিত। প্রতিবাদের এই প্যাটার্নকে যদি আমরা মান্যতা দিই, একটা নতুন রূপে দেখার চেষ্টা করি, তাহলে সমাজে সেটার প্রয়োগ কিন্তু বাড়বে। যদি বাড়ে তবে সমাজে হাজার হাজার এমন মানুষ তৈরি হবে। পুঁজিবাদ সবসময় জনগণের ক্ষোভ সামলাতে নতুন নতুন উদ্ভাবনী পন্থা অন্বেষণ করে। তাই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করার পরিবর্তে ফেসবুকে গঞ্জিকাযুক্ত বিড়ি সেবন করতে করতে খেউড়-বিপ্লব করার পথটাকেই যদি আমরা নানা কুযুক্তির মাপকাঠিতে ন্যায়সঙ্গত মনে করি, তবে পুঁজিবাদের পক্ষে তার থেকে উত্তম ব্যবস্থা আর কী হতে পারে?
সূর্যকান্ত চক্রবর্তী, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর