এ আই কে কে এম এস-এর রাজ্য সম্মেলন সফল করুন

কৃষক ও খেতমজুরদের একমাত্র সংগ্রামী সংগঠন

 কেন্দ্রের বিজেপি এ আই কে কে এম এস-এর রাজ্য সম্মেলন সফল করুন

 

সরকারের তিনটি কালা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দিল্লির কৃষক আন্দোলনের ঐতিহাসিক জয় দেশের শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনে বিপুল প্রেরণার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে কৃষক খেত মজুর আন্দোলনের গতি বৃদ্ধি ঘটেছে বহুগুণ। সকল কৃষিপণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আইনসঙ্গত করা, খরা-বন্যা রোধ, কৃষি জমিতে সেচের ব্যবস্থা, সার বীজ কীটনাশকের দাম কৃষকের নাগালের মধ্যে রাখা ইত্যাদি দাবিতে কৃষক খেত মজুররা আজ সর্বত্র সোচ্চার। এই প্রেক্ষিতেই এ আই কে কে এম এস-এর অষ্টাদশ রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ১-৩ জুন নদীয়া জেলার দেবগ্রামে।

অতীতে এ রাজ্যে তেভাগা আন্দোলন, খাস-বেনাম জমি উদ্ধার ও বন্টন আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন ইত্যাদি বহু বড় বড় গণআন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। জয়ও অর্জিত হয়েছে বহুক্ষেত্রে। কিন্তু স্বাধীনতার বয়ঃবৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে জনজীবনের সংকটও বেড়েছে দ্রুত গতিতে। কৃষক জীবনের মৌলিক দু’টি সমস্যা, ১) ফসলের ন্যায্য দাম না পাওয়া, ২) চাষের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ যথা সার-বীজ-কীটনাশক, বিদ্যুৎ, ডিজেল ইত্যাদির লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি।

আমাদের দেশে কৃষি বা কৃষক মজুর জীবনে সীমাহীন সংকটের কেন্দ্রবিন্দুতে কে বা কারা? কী কারণে কৃষি উপকরণের দাম এত আকাশছোঁয়া? চাষির ফসলের লাভজনক দাম পাওয়ায় বাধা কোথায়, এ সবের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ কার হাতে? কৃষক আন্দোলনের সামনে এগুলি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই প্রশ্নে আমাদের দেশে যথেষ্ট বিভ্রান্তি রয়েছে।

স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে জাতীয় পুঁজিপতি শ্রেণি দেশের শাসন ক্ষমতা করায়ত্ত করে। এরপর কংগ্রেস বিজেপি (পূর্বের জনসংঘ) ইত্যাদি তাবৎ বৃহৎ শক্তিশালী দক্ষিণপন্থী দলগুলি পর্যায়ক্রমে ভোটে জিতে পার্লামেন্টে মন্ত্রীত্বে আসে এবং কৃষিক্ষেত্রে নানা নীতি গ্রহণের মাধ্যমে এই পুঁজিপতিদের পৃষ্ঠপোষকতা করে এদের পুঁজি বৃদ্ধিতে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করেছে। প্রত্যক্ষভাবে এরা তাদের সহযোগী শক্তি, অন্য কথায় সেবকও। এদের চেনা সহজ। কিন্তু কমিউনিস্ট নাম নিয়ে সিপিআই, সিপিআই(এম), সিপিআই (এম, এল) এবং তাদের কৃষক সংগঠনগুলি এই প্রশ্নে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে সবচেয়ে বেশি। তাদের বিপ্লবের তত্তে্ব তারা সাম্রাজ্যবাদ আর সামন্ততন্ত্রকে শত্রু চিহ্নিত করে জাতীয় বুর্জোয়াদের মিত্র চিহ্নিত করেছে। তাই শিল্প কিংবা কৃষিতে যেখানে জাতীয় বুর্জোয়ারাই শোষণের হোতা, সেখানে তাদের বিরুদ্ধে তারা যথার্থ কোনও লড়াই গড়ে তুলতে পারেনি। গ্রামে বড় বা মাঝারি জোতের মালিকরা, যারা কংগ্রেস ছিল, তারাই সিপিএম সরকারের আমলে হয়ে ওঠে তাদের মিত্র শক্তি। কৃষি প্রধান এই রাজ্যে কোটি কোটি গ্রামীণ সর্বহারা, গরিব, নিম্ন-মধ্য চাষি, খেত-মজুরদের সমর্থন তারা পেলেও তাদের সংগঠিত করে, বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে যে শ্রেণি সংগ্রামের সূচনা হতে পারত, তা করা হয়নি। কলকারখানার মতো গ্রামেও মজুরি বৃদ্ধি, আরও কিছু সুযোগ-সুবিধা নিয়ে সভাসমিতি কিংবা ধর্মঘট হয়়েছে, কিন্তু মূল শত্রু কে, মিত্র কারা এসব প্রশ্ন নিয়ে তারা মাথা ঘামায়নি। বিপরীতে এ আই কে কে এম এসের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা জোতদার বিরোধী কৃষক আন্দোলনগুলি ধ্বংস করতে সমাজ বিরোধী ও পুলিশ দিয়ে ব্যাপক আক্রমণ করেছে। দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা সহ কয়েকটি জেলায় পুলিশের গুলি চালনায় এবং এদের আশ্রিত সমাজবিরোধীদের আক্রমণে কৃষক খেতমজুর আন্দোলনের নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন দেড় শতাধিক। এই মেকি কমিউনিস্টদের শ্রেণি-মিত্র জাতীয় বুর্জোয়ারা আজ শোষণের জাঁতাকলে শ্রমিক-কৃষকদের পেষণ-শোষণ করে বৃহৎ পুঁজির একচেটিয়া মালিকে পরিণত হয়েছে। তারাই লগ্নি পুঁজির জন্ম দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী চরিত্র অর্জন করেছে। তাদের শাসনে ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্যগুলিও প্রকাশ পেয়েছে। সারা দেশব্যাপী গড়ে উঠেছে শোষণ-পীড়নের এক পাকাপোক্ত ব্যবস্থা। তার ফলে আজ দেশের মোট সম্পদের ৭৪ শতাংশের মালিক ১ শতাংশ পুঁজিপতি শ্রেণি। স্বাধীনতার প্রাক্কালে এ আই কে কে এম এস-এর প্রতিষ্ঠাতা মহান মার্কসবাদী চিন্তানায়ক কমরেড শিবদাস ঘোষ ক্ষমতাসীন এই পুঁজিপতি শ্রেণির শোষণমূলক চরিত্র সম্পর্কে বিশেষভাবে সতর্ক করেন।

তিনি দেখান শিল্পক্ষেত্রের মতো কৃষিক্ষেত্রেও পুঁজির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। শোষণের ফলে জমি স্বল্প সংখ্যক গ্রামীণ মালিকদের হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়া, জমি হারিয়ে অধিকাংশ গরিব চাষির খেতমজুর তথা গ্রামীণ সর্বহারায় পরিণত হওয়া, কৃষি উৎপাদন জাতীয় বাজারের পণ্যে পরিণত হওয়া এবং কৃষি উৎপাদনে মালিক-মজুর সম্পর্ক ইত্যাদি পুঁজিবাদী বৈশিষ্ট্যগুলির সম্যক ব্যাখ্যা করেন তিনি। ফলে এ দেশে শিল্প-কৃষি উভয় ক্ষেত্রেই যে পুঁজির শোষণের জাল বিস্তৃত এবং দেশের মুক্তি সংগ্রাম পরিচালিত হবে সামগ্রিক ভাবে তারই বিরুদ্ধে। গ্রামাঞ্চলে কৃষক, মজুর, সর্বহারা শ্রেণির মুক্তি সংগ্রাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নানা রাজনৈতিক অর্থনৈতিক দাবি আদায় করা, গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা ও সম্প্রসারণ করা নিয়ে যে সব লড়াই আপনারা প্রতিদিন করে চলেছেন, সেগুলিকে পুঁজিবাদ উচ্ছেদের লড়াই হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। এই সঠিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি যখন আপনারা আয়ত্ত করতে পারবেন, একমাত্র তখনই আপনারা বর্তমান অবস্থাকে পাল্টাতে পারবেন। …যার সাহায্যে শেষপর্যন্ত এই শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থা এবং পুঁজিবাদী রাষ্ট্রকে উচ্ছেদ করতে পারবেন। (শিবদাস ঘোষ নির্বাচিত রচনাবলী, তৃতীয় খণ্ড, পৃ. ২৩৯)

পুঁজির সেবায় নিয়োজিত কংগ্রেস ১৯৯০-এর দশকে বিশ্বায়ন ও তথাকথিত আর্থির্ক সংস্কারের পথ গ্রহণ করে। তারই উপযোগী করে কৃষিক্ষেত্রকে গড়ে তোলার প্রয়োজনে তৃতীয় কৃষিনীতি প্রণয়ন করে। বিজেপি, সিপিআই(এম), সহ বাম-ডান বিভিন্ন দল তা ব্যাপক ভাবে সমর্থন করে। বিস্ময়ের কথা, সেই ‘জাতীয় কৃষিনীতিতে’কৃষকদের সমস্যা সমাধানে একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। তার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হল ১) কৃষিক্ষেত্রে ব্যক্তিগত পুঁজি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, ২) জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন সংশোধন ও বৃহৎ জোত সৃষ্টি করে চুক্তি চাষ, লিজ প্রথায় চাষকে আইনসিদ্ধ করা, ৩) সরকারের হাতে ন্যস্ত পতিত জমি পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেওয়া, ৪) সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি কৃষি উপকরণের উপর সরকারি ভর্তুকি বন্ধ করা, ৫) জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কৃষিপণ্যের আমদানি-রপ্তানির উপর থেকে বিধিনিষেধ বিলোপ ইত্যাদি। এর দ্বারা তারা দেশের সমগ্র কৃষিক্ষেত্রকে একচেটিয়া পুঁজিপতিদের শোষণের লীলাক্ষেত্রে পরিণত করার পরিকল্পনা পাকা করেছে। ২০২০ তে বিজেপি যে কৃষিনীতি নিয়ে আসে, তাতে এর অনেকগুলি বিষয়ই ছিল। এই সর্বনাশা নীতির প্রয়োগ দেখা যায় রাজ্যে রাজ্যে।

এ রাজ্যে পূর্বতন সিপিএম পরিচালিত সরকার সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে যথাক্রমে টাটা এবং ইন্দোনেশিয়ার সালেম গোষ্ঠীর হাতে হাজার হাজার় একর কৃষি জমি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরা জমি উর্ধ্বসীমা আইন তুলে দিতে চায়। এমনকি ভূমি সংস্কার আইনে সংশোধনী এনে শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণে বর্গাদার উচ্ছেদও আইনসঙ্গত করতে চায়। তার পরিণতি হয় ভয়াবহ। রাজ্যে মোট কৃষিজমির পরিমাণ ৫৬.৮০ লক্ষ হেক্টর। এর মধ্যে ৯২.২৩ শতাংশ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জোত। এসব জোত অলাভজনক। পুঁজিবাদী শোষণে এসব জোতের মালিকরাই জমি হারায় বেশি। জমি হারায় পাট্টাদার, বর্গাদারও। ১৯৭৭ সালে সিপিএম শাসনের সূচনাপর্বে রাজ্যে খেত মজুরের সংখ্যা ছিল ৩৮ লক্ষ। আর ২০০৯ সালে তাদের শাসনের শেষপর্বে তা বেড়ে হয় ১ কোটির বেশি। বর্তমানে তৃণমূল শাসনে সে সংখ্যা আরও অনেক বেশি। পুঁজিবাদী শোষণ ও শাসনেই জমি হারিয়ে তারা খেত মজুরে পরিণত হয়েছে।

কংগ্রেস ২০১০ সালে সারে বিনিয়ন্ত্রণ নীতি এনে সার উৎপাদন ও দাম নির্ধারণের সমূহ দায়িত্ব তুলে দেয় একচেটিয়া পুঁজিমালিকদের হাতে। সারে ভর্তুকি যা ছিল তাও দেওয়া হয় তাদেরই। তার উপর চলে ব্যাপক কালোবাজারি। সারের কালোবাজারির বিরুদ্ধে রাজ্যব্যাপী ব্যাপক মারমুখী আন্দোলন সংগঠিত হয় এ আই কে কে এম এসের উদ্যোগে। আন্দোলন বহুলাংশেই জয়যুক্ত হয়।

আবার শুরু হয় সরকারের বীজনীতির অত্যাচার। তা হয় চাষিদের উচ্চফলনের লোভ দেখিয়ে। তারা বীজের দাম প্রভূত বাড়ায়। অপর দিকে উচ্চফলনশীল এই সংকর বীজে জল, সার কীটনাশকের প্রয়োজন বেশি। সে সবের দামও বিপুল। সেখানেও নিয়ন্ত্রণ সেই একচেটে পুঁজির। সেখানেও ব্যবসা চলে রমরমিয়ে। গরিব চাষি ব্যাঙ্ক ঋণের সুবিধা তেমন পায় না। তারা নির্ভর করে মহাজনের কাছে নেওয়া অতি চড়া হারে সুদে নেওয়া ঋণের উপর। ফসলের দাম না পেয়ে ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে যায়। সহায় সম্বলহীন ঋণগ্রস্ত চাষি আত্মহত্যাকেই বাঁচার পথ হিসাবে বেছে নিতে বাধ্য হয়। বিগত দশ বছরে সরকারি মদত পুষ্ট একচেটিয়া পুঁজির ফাঁদে পড়ে চাষির আত্মহত্যার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার লক্ষের উপর। এমনি এক ভয়ঙ্কর অবস্থায় একচেটে পুঁজিপতি গোষ্ঠী বহু অর্থব্যয়ে তাদের ত্রাতা হিসাবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ‘উন্নয়ন বান্ধব’ আখ্যা দিয়ে ক্ষমতায় আনে। তারা তিন কৃষি আইন ও বিদ্যুৎ বিল ২০২১ এনে কৃষিক্ষেত্রকে দেশি বিদেশি একচেটিয়া পুঁজির় শোষণের স্বার্থে পরিণত করার সামগ্রিক পরিকল্পনায় আইনি তকমা দেওয়ার চেষ্টা চালায়। যার বিরুদ্ধে এক বছর ধরে প্রবল কৃষক বিক্ষোভ হয় এবং শেষ পর্যন্ত সরকার নীতি পাল্টাতে বাধ্য হয়।

এ রাজ্যে এখন তৃণমূল শাসনে ধান, পাটের অভাবি বিক্রি করতে চাষি বাধ্য হচ্ছে। নূ্যনতম সহায়ক মূল্য চালু করায় সরকারের কার্যকরী কোনও উদ্যোগ নেই। যা আছে তা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য। একটি ব্লকে একটি মাত্র কিসান মাণ্ডি, নেতাদের ধরে ধান বিক্রির টোকেন সংগ্রহ, বিক্রির লাইন পাওয়া, কুইন্টালে ৫-৮ কেজি ধান বাটা দেওয়া ইত্যাদি নানা হয়রানিতে তিতিবিরক্ত চাষি ৪০০-৫০০ টাকা কম দামে খোলা বাজারে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। পাট বিক্রির জন্য জে সি আই থাকলেও রাজ্যে তা বহু দিন বন্ধ। পাট চাষিরা কখনও একটু বেশি দাম পেলেও প্রায় প্রতিবছর তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা প্রকল্প বা এনরেগা প্রকল্প গ্রামীণ অর্থনীতি গতিশীল রাখার জন্য কার্যকরী হতে পারে। কিন্তু তাও সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতি ও দলবাজিতে ভরা। এই প্রকল্পে জবকার্ড হোষ্প্রররা এখন কাজ করেন খুব কম। কাজ হয় জেসিবি যন্তে্র। জবকার্ড হোষ্প্ররদের নামের তালিকা ধরে মাস্টার রোল পূরণ করা হয়। জবকার্ড হোষ্প্ররদের সামান্য কিছু টাকা দিয়ে বাকিটা চলে যায় পঞ্চায়েত, দলীয় নেতা, আর একদল দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মচারীদের পকেটে। রাসায়নিক সারের দাম বৃদ্ধির কোনও সীমা-পরিসীমা নেই–বাড়াচ্ছে পুঁজিপতিরা সরকারের মদতেই। তার উপর সার এবং কীটনাশক উভয় ক্ষেত্রেই আছে ব্যাপক কালোবাজারি। বন্যা-নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণে সরকার টাকার বরাদ্দ করে, কিন্তু তার বণ্টন ব্যবস্থা দুর্নীতি মুক্ত নয়। তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত নদীবাঁধগুলির মেরামতি এবং রাজ্যে সামগ্রিকভাবে খরা-বন্যায় স্থায়ী সমাধানে তাদের ভূমিকা খুবই দুর্বল। ভোটব্যাঙ্ক ঠিক রাখাই তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। সমস্যার মৌলিক সমস্যা সমাধান তাদের ভাবনার এবং ক্ষমতার অতীত।

মহান নেতা কমরেড শিবদাস ঘোষের শিক্ষায় এ আই কে কে এম এস তার যাত্রার শুরুতেই এ দেশে পুঁজিপতি শ্রেণি তথা তাদের প্রবর্তিত শোষণমূলক ব্যবস্থাকে শত্রু চিহ্নিত করেছে। রাজ্যে তেভাগা আন্দোলন, ভাগচাষিদের অধিকার রক্ষা, বেনাম জমি উদ্ধার ও বণ্টন, খরা বন্যার স্থায়ী সমাধান, ফসলের ন্যায্য দাম, সার-বীজের কালোবাজারি বন্ধ, সারাবছরের কাজ, ন্যূনতম মজুরি ইত্যাদি দাবিতে লাগাতার আন্দোলন পরিচালনায় এ আই কে কে এম এস পালন করছে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। রাজ্যে কৃষক মজুর আন্দোলনে এ আই কে কে এম এস এক পরিচিত নাম– এক বিশ্বস্ত শক্তি। আন্দোলনের এই ধারাবাহিকতায় দিল্লি আন্দোলনের অপূরিত দাবি–সকল কৃষিপণ্যে এম এস পি আইন সঙ্গত করা, সস্তায় কৃষি উপকরণ, গ্রামীণ বেকারদের সারা বছরের কাজ ও ন্যূনতম মজুরি ইত্যাদি দাবিতে রাজ্যব্যাপী কৃষক খেত মজুর আন্দোলনে দুর্বার গতি সৃষ্টি করতে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

গণদাবী ৭৪ বর্ষ ৪১ সংখ্যা ২৭ মে ২০২২