‘এমএসপি আইনসিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলন জোরদার করুন’ কিসান মোর্চার কাছে প্রস্তাব এআইকেকেএমএস-এর

 

দীর্ঘ আন্দোলনের জেরে তিন কালা কৃষি আইন বাতিল ঘোষিত হয়েছে। এই অবস্থায় সংগ্রামী কৃষকদের করণীয় কী? আন্দোলন প্রত্যাহার করা, নাকি অপূরিত দাবিগুলি পূরণের জন্য আন্দোলনকে বৃহত্তর রূপ দেওয়া? সংযুক্ত কিসান মোর্চার অন্যতম সদস্য এ আই কে কে এম এস এ বিষয়ে তার লিখিত বক্তব্য মোর্চার নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছেন। সংগঠনের সর্বভারতীয় সভাপতি কমরেড সত্যবান এবং সাধারণ সম্পাদক কমরেড শঙ্কর ঘোষ তাতে বলেছেন, ২৪ নভেম্বর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলা হয়েছে, সংসদের আসন্ন অধিবেশনে বিদ্যুৎ বিল (সংশোধনী)-২০২১ পেশ করা হবে। উদ্বেগের বিষয় হল, এই বৈঠকে এমএসপি আইনসম্মত করা এবং সরকারি সংগ্রহ করা নিয়ে মন্ত্রিসভা একটি কথাও বলেনি। অথচ এই দুটি কৃষক আন্দোলনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাবি। বিদ্যুৎ বিল (সংশোধনী)-২০২১ শুধু কৃষকদের উপরেই মারাত্মক আক্রমণ নয়, সারা দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থ এতে বিপন্ন হবে। একে প্রতিরোধ করা এই আন্দোলনের অবশ্য করণীয়।

কমরেড সত্যবান ও কমরেড শঙ্কর ঘোষ বলেন, আজকের প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এমএসপি আইনসিদ্ধ করার জন্য একটি কমিটি গড়েছিলেন। ২০০৪-২০০৬ সালে স্বামীনাথনের নেতৃত্বে সরকার-নিয়োজিত যে ফার্মার্স কমিশন গঠিত হয়েছিল, তারও সুপারিশ ছিল উৎপাদন ব্যয়ের উপর ৫০ শতাংশ লাভ যোগ করে কৃষিপণ্যের দাম ধার্য করা। ২০১৪ সালে বিজেপি নির্বাচনী ইস্তাহারেও এমএসপি আইনসিদ্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ক্ষমতায় আসার পর ৭ বছর কাটিয়ে দিয়ে সব কিছুকে ‘জুমলা’ বানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এখন বলছেন এমএসপি নিয়ে কমিটি হবে। কেন আবার কমিটির নামে কাল হরণ? এর উদ্দেশ্য জনগণকে ধোঁকা দেওয়া ছাড়া আর কী? আমাদের দাবি, সংসদের শীতকালীন অধিবেশনেই এমএসপিকে আইনসিদ্ধ করতে হবে।

আন্দোলনের আরও কয়েকটি দাবি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলি হল, ১) আন্দোলনে যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাঁদের পরিবারবর্গকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, ২) সংগ্রামী কৃষকদের উপর থেকে সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, ৩) লখিমপুরে কৃষকহত্যার জন্য দায়ী অজয় মিশ্র টেনিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার করতে হবে। কমরেড সত্যবান ও কমরেড শঙ্কর ঘোষ বলেন, এসকেএম নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের অনুরোধ এই দাবিগুলি দ্রুত পূরণ না হলে এই আন্দোলন শুধু চালিয়ে যাওয়া নয়, দেশব্যাপী সংগঠিত রূপে গড়ে তুলতে হবে। সেই উদ্দেশ্যেই যথাযথ কর্মসূচি নেওয়া উচিত। তাঁরা আরও বলেন, ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন বেসরকারিকরণ ও কর্পোরেটাইজেশনের বিরুদ্ধে আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ দুদিন ব্যাপী সর্বভারতীয় যে ধর্মঘটের প্রস্তুতি নিচ্ছে তাকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে শ্রমিক-কৃষক ঐক্যকে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে কর্পোরেটের স্বার্থবাহী বিজেপি সরকার তার নীতিগুলি পাল্টাতে বাধ্য হয়। তাঁরা বলেন, আমরা আনন্দের সাথে লক্ষ করছি এই আন্দোলন দেশব্যাপী সকল স্তরের মানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। ফলে সংযুক্ত কিসান মোর্চার নেতৃত্ব এই মানুষদের ঐক্যবদ্ধ এবং সংগঠিত করতে দেশব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করুন।

এই মহান কৃষক আন্দোলন জনগণের মধ্যে আন্দোলনের প্রতি গভীর আস্থা তৈরি করেছে। আন্দোলন করলে দাবি আদায় হয়, এই প্রত্যয় তৈরি হয়েছে। ভারতের জনগণ সংযুক্ত কিসান মোর্চার এই নেতৃত্বের কাছে আরও অনেক কিছু আশা করে। তারা নিশ্চিত, এই নেতৃত্ব আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে এবং পুঁজিপতি শ্রেণি ও কর্পোরেটদের এবং তার সেবাদাস বিজেপির আধিপত্যকে পরাস্ত করতে যথাযথ ভূমিকা নেবেন।