অগ্নিপথের ধাঁচে সেনাবাহিনীতে কর্মী নিয়োগের মতো ব্যাঙ্কেও নতুন শ্রম বিধি (লেবার কোড) প্রদর্শিত ফিক্সড টার্ম এমপ্লয়মেন্ট ভিত্তিক কর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছে। এখনও এর কিছু নামকরণ হয়নি। এটা বুঝি বা ‘অর্থপথ’ হিসেবেই চিহ্নিত হবে। বর্তমানে কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে সাধারণ ও উচ্চপদস্থ কিছু অফিসার পদে দুই থেকে সাত বছর মেয়াদের চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ শুরু হয়ে গিয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে অন্যান্য ব্যাঙ্কেও এ জিনিস চালু হয়ে যাবে। বিভিন্ন ক্ষেত্র অনুযায়ী বয়স নির্ধারিত হয়েছে নূ্যনতম ২২ থেকে ৪৫ বছর। চুক্তিতে চাকরির মেয়াদ এবং সেই ক’বছরের বেতন নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। থোক বেতন ছাড়া সাধারণভাবে কোনও আর্থিক সুবিধা থাকছে না এ ক্ষেত্রে। কাউকে বিশেষ কাজের জন্য বাইরে পাঠাতে হলে দেওয়া হচ্ছে যাতায়াতের ভাড়া এবং নির্দিষ্ট হারে ভাতা। পেনশন বা গ্র্যাচুইটির মতো অবসরকালীন সুবিধা এখানে নেই। চুক্তি শেষ হওয়ার পরে তা নবীকরণ হবে কিনা তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই। নবীকরণ নির্ভর করবে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের উপর। পুরো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গ্রাহক পরিষেবা যে দুর্বল হবে তা বুঝি য়ে বলার অপেক্ষা রাখে না।
এর ফলে সরকার ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে সুযোগ করে দিচ্ছে যাতে এরকম চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করে কম টাকায় উপযুক্ত শিক্ষিত বেকার যুবকদের থেকে কাজ আদায় করে নেওয়া যায়। স্থায়ী কাজে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগ নিয়ম-বিরুদ্ধ হওয়া সত্তে্বও ইতিমধ্যে ব্যাঙ্কের নিরাপত্তা কর্মী, পিওন, হাউস কিপিং প্রভৃতি ক্ষেত্রে চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ চলছে অবাধে, প্রায় সমস্ত ব্যাঙ্কে। তারই পথ বেয়ে এবার ঊর্ধ্বতন কর্মী-অফিসারদের ক্ষেত্রেও এ জিনিস চালু হয়ে গেল। এর ফলে শুধু কম বেতনে কাজ করিয়ে নেওয়া নয়, পেনশন-গ্র্যাচুইটির মতো কর্মচারীদের অবসরকালীন সুযোগ সুবিধা দেওয়ার দায় থেকেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ রেহাই পেল কেন্দে্রর বিজেপি সরকারের বদান্যতায়। এভাবেই ব্যাঙ্কের খরচ কমিয়ে অধিক মুনাফার সুযোগ সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে লাভজনক ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রকে ব্যক্তিমালিকদের হাতেই তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা কার্যকর করা হচ্ছে।
স্থায়ী কাজে স্থায়ী নিয়োগ না হলে কর্মী-অফিসারদের সংগঠনগুলিও ধীরে ধীরে দুর্বল হতে থাকবে। কেননা চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কর্মীরা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আবার ওই কাজে বহাল থাকার কথা মাথায় রেখে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করবে, কোনও ইউনিয়নে ঢোকার কথা ভাববে না। এখানেও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ বা সরকার যা খুশি করার সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে পারবে।
অন্যদিকে চুক্তির ভিত্তিতে নিযুক্ত কর্মীদের চুক্তির মেয়াদ যখন শেষ হবে তখন তাদের বয়স বাড়বে। দেশে বেকার সমস্যা যেভাবে দুরন্ত গতিতে বাড়ছে তাতে ওই কাজে পুনরায় নিয়োগ না হলে নতুন কাজ খুঁজে নেওয়া তাদের পক্ষে একরকম অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। অথচ সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ব্যাঙ্কে ৪১ হাজারের বেশি শূন্যপদ রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে ব্যাঙ্কে কোনওরকম নিয়োগ হয়নি। তা সত্তে্বও এ জাতীয় নিয়োগ অত্যন্ত হীন উদ্দেশ্যে। ব্যাঙ্কের খরচ কমিয়ে ব্যাঙ্কগুলিকে বিক্রয়যোগ্য করার পাশাপাশি সরকারের আরও একদিকে চোখ রয়েছে, যেখানে দু’বছর থেকে সাত বছর কাজ করা কর্মীদের দেখিয়ে সরকার বলতে পারবে– দেখো, বেকার সমস্যা সমাধানে সরকার কত সফলতা অর্জন করেছে।
ভোট রাজনীতির ময়দানে শাসক দলের কাছে তার উপযোগিতা থাকলেও, শিক্ষিত চাকরিপ্রার্থীদের প্রতি এ এক অন্যায় ও অমানবিক আচরণ।