বেশ কিছু ট্রেন বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেওয়ার পর এবার ক্রীড়া ক্ষেত্রগুলিও বিক্রি করে দিচ্ছে রেল। করোনা অতিমারিতে যখন গোটা দেশ বিধ্বস্ত, তখন এক রকম চুপিসারে রেলের মাঠ ও স্টেডিয়াম বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। হস্তান্তর সংক্রান্ত চিঠি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় খবরটি প্রকাশ্য়ে এসেছে। রেল দফতরের নাকি আয় বাড়ানো দরকার। তাই, কলকাতা, পাটনা, ভুবনেশ্বর, চেন্নাই, রায়বেরিলি, লখনউ, গোরক্ষপুর, সেকেন্দ্রাবাদ, রাঁচি, বেঙ্গালুরু সহ রেলের ১৫টি স্টেডিয়ামকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার জন্য রেল ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (আরএলডিএ) হাতে তুলে দিচ্ছে মন্ত্রক। এরপর এ ব্যাপারে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেবে আরএলডিএ। এই হস্তান্তরের তালিকায় রয়েছে কলকাতার বেহালার রেল স্টেডিয়ামও।
রেল ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি হল রেলমন্ত্রকেরই আওতাধীন একটি সংস্থা। দেশ জুড়ে প্রচুর জমি রেলের মালিকানাধীন। যে জমিগুলি তুলে দেওয়া হবে, রেল প্রশাসনের মতে, সেগুলি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলির বক্তব্য, এগুলির কোনওটিই উদ্বৃত্ত কিংবা অব্যবহৃত নয়। তাদের অভিযোগ, যে মাঠগুলি থেকে বিশ্বমানের ক্রীড়াবিদরা উঠে এসেছেন, খেলার জগতের নানা সম্মান দেশকে এনে দিয়েছেন, সেগুলি উন্নতির নামে বাণিজ্যিক সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তারা এগুলি ব্যবহার করে মুনাফা লুটবে। তাছাড়া এই মাঠগুলি রেলকর্মীদের ব্যবহারের জন্য।
রেলে কর্মরত ক্রীড়াবিদদের মতো রেলকর্মীদের সন্তানরাও এই মাঠে খেলাধূলা করে, প্রশিক্ষণ নেয়। বহু ক্রীড়াবিদ এখনও এই মাঠগুলিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে চলেছেন। অ্যাথলেটি’, ক্রিকেট, ফুটবল, বাস্কেটবল, ভলিবল, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, জিমনাস্টি’, ওয়েট লিফটিং, সাঁতার থেকে কুস্তি– সমস্ত ক্ষেত্রেই পারদর্শিতা দেখিয়ে চলেছেন রেলের ক্রীড়াবিদ কর্মীরা। ফলে এই মাঠগুলি দেশের প্রয়োজনীয় সম্পদ। এগুলি বিক্রি করা যাবে না বলে রেলমন্ত্রীর কাছেও দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলি।
গোটা রেলব্যবস্থাটি গড়ে উঠেছে কোটি কোটি মানুষের ট্যাক্সের টাকায়। এর পরিকাঠামো উন্নয়ন, কর্মচারীদের মাইনে, উৎপাদন সমস্ত কিছুই জনগণের টাকায় তৈরি। আজ বিজেপি সরকার সেই রেল ব্যবস্থাকে একটু একটু করে বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দিয়ে তাদের মুনাফার স্বার্থই রক্ষা করতে চাইছে। এর বিরুদ্ধে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষকে সোচ্চার হতে হবে।