নাগরিকত্ব হরণকারী এনআরসি ও বিভেদমূলক সিএএ বাতিলের দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু হয়েছে৷ এই আন্দোলনকে দীর্ঘস্থায়ী করে গড়ে তোলার জন্য এস ইউ সি আই (সি)–র সাধারণ সম্পাদক প্রতিটি জেলায়, মহকুমায়, পাড়ায় পাড়ায় আন্দোলনের কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন৷ সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে সর্বত্র গড়ে উঠছে অজস্র কমিটি৷
তমলুক : ১৫ ডিসেম্বর এক নাগরিক সভা হয় দর্জা–নিমতলায়৷ উপস্থিত ছিলেন সারা বাংলা এনআরসি বিরোধী নাগরিক কমিটির সদস্য শিক্ষক আব্দুল মাসুদ, বাসুদেব দাস, শেখ মেহবুব আলম, শম্ভু মান্না, সেখ আব্দুল রেজ্জাক প্রমুখ৷ আব্দুল মাসুদ বলেন, শিল্প ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব মন্দা, ক্রমবর্ধমান ছাঁটাই–বেকারি, ফসলের ন্যায্য দাম না পেয়ে ঋণের জালে জড়িয়ে ব্যাপকহারে কৃষক আত্মহত্যা, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, হাসপাতালে চূড়ান্ত অব্যবস্থা প্রভৃতি নানা সমস্যায় জর্জরিত৷ জনজীবনের এসব মূল সমসা্যার সমাধান করার পরিবর্তে বিজেপি নেতারা এনআরসি চালুর নামে দু’কোটি মানুষকে বিতাড়িত করার হুমকি দিচ্ছে৷ এই সভা থেকে সিএএ–এনআরসি বিরোধী নাগরিক কমিটি, দর্জা–নিমতলা শাখা গঠিত হয়৷ শেখ মেহেবুব আলম সভাপতি এবং শম্ভু মান্না ও শেখ মোস্তাফা আলি যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন৷ অন্যান্য জেলাতেও কমিটি গঠন শুরু হয়েছে৷
সোনারপুর : সোনারপুরের মকরমপুর বিএড কলেজ অডিটোরিয়মে দেড় শতাধিক মানুষের উপস্থিতিতে এনআরসি ও সিএএ বিরোধী নাগরিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়৷ আবুল কাশেম মুন্সিকে উপদেষ্টা, কাজি সামসুল আলমকে সভাপতি, গোলাম রসুল ডাক্তার এবং মিজানুর লস্ক্রকে যুগ্ম সম্পাদক ও মিনতি মিত্রকে সহ–সম্পাদিকা করে ১৯ জনের কমিটি গঠিত হয়৷
কলকাতা : ১৯ ডিসেম্বর মধ্য কলকাতার কলাবাগানে অনুষ্ঠিত এনআরসি বিরোধী পথসভায় বক্তব্য রাখেন ঠনঠনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মহম্মদ শুভান৷ তিনি বলেন, ‘ভগৎ সিং, আসফাকউল্লার সংগ্রামে স্বাধীন হওয়া এই দেশকে আমরা ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ করতে দেব না’৷ বক্তব্য রাখেন এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের বিশিষ্ট নেতা জুবের রব্বানি৷ উপস্থিত ছিলেন ঠনঠনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আকবর আলম মল্লিক৷ তিনি উল্লেখ করেন, আজকের এই সভার উদ্যোক্তরাও হিন্দু ভাইয়েরা৷ কোনও ভেদাভেদের মানসিকতা না রেখে শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে একটি ধারাবাহিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি৷ এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন শিক্ষক শাকিল এজাজ, শরিক আনওয়ার প্রমুখ৷ সকলেই শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিবাদ গড়ে তুলে এলাকায় এলাকায় কনভেনশন করার এবং ১৪ জানুয়ারি ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে কলকাতা জেলা নাগরিক কনভেনশনে উপস্থিত থাকার জন্য জনসাধারণকে আবেদন জানান৷
২১ ডিসেম্বর কলকাতার রাজাবাজারে গঠিত হয় এনআরসি–বিরোধী নাগরিকদের আহ্বায়ক কমিটি৷ যুগ্ম–আহ্বায়ক নির্বাচিত হন ডাঃ বিজ্ঞান বেরা, ডাঃ মকবুল হোসেন এবং মহম্মদ জুবেইর৷ ২২ ডিসেম্বর জাকারিয়া স্ট্রিটে প্রকাশ্য সভা থেকে ডাঃ নেহাল আহমেদ–কে সভাপতি, ডাঃ প্রদ্যুৎ হাজরা এবং সৈয়দ হাসান–কে যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত করে এনআরসি–বিরোধী নাগরিক কমিটি গঠিত হয়৷ উত্তর কলকাতায় ২২ ডিসেম্বর সিরাম থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হলে এক আলোচনাসভার মধ্য দিয়ে কমিটি গঠিত হয়৷ প্রসেনজিৎ রক্ষিত, কৃষাণু দে ও প্রত্যুষ সিকদারকে আহ্বায়ক করে ১৩ জনের কমিটি গঠিত হয়৷
হাবড়া : উত্তর ২৪ পরগণার হাবড়া স্টেশনে ২২ ডিসেম্বর এস ইউ সি আই (সি)–র উদ্যোগে এনআরসি ও সিএএ বিরোধী এক জনসভার আয়োজন করা হয়৷ সভাপতিত্ব করেন এলাকার বিশিষ্ট চিকিৎসক কমরেড পরিমল হালদার৷ প্রধান বক্তা ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কমরেড শঙ্কর ঘোষ৷ এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন এনআরসি বিরোধী নাগরিক কমিটির রাজ্য সম্পাদক গোপাল বিশ্বাস৷ এলাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় এক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন৷