পুরনো পার্টি-অফিসের প্রতিরূপ উদ্বোধনে কমরেড অসিত ভট্টাচার্য
এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর পুরনো কেন্দ্রীয় অফিসের ক্ষুদ্র প্রতিরূপের উদ্বোধন করলেন দলের পলিটবুরোর প্রবীণ সদস্য কমরেড অসিত ভট্টাচার্য। ২৪ এপ্রিল দলের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা দিবসের সকালে ৪৮ লেনিন সরণির নতুন বাড়িতে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘পার্টি প্রতিষ্ঠার দু’বছর পর ১৯৫০ সালে এই বাড়ির একটি ছোট ঘরের মধ্যে আমাদের দলের কার্যকলাপের সূত্রপাত ঘটে। আমরা ছাত্রাবস্থায় প্রত্যক্ষ করেছি, সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কমরেড শিবদাস ঘোষ এখানে থাকতেন, বসতেন, আলোচনা করতেন। বিভিন্ন জায়গার কমরেডরা আসতেন, যেখানে যত যোগাযোগ গড়ে উঠছে, সিনিয়র, জুনিয়র নেতা-কর্মী সবার সঙ্গে তিনি মিলিত হচ্ছেন, আলোচনা করছেন, কথাবার্তা বলছেন, প্রত্যেককে নতুন করে জীবনের অর্থ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তাঁরা এই ৪৮ লেনিন সরণির সিঁড়ি পার হয়ে যখন ফুটপাতে পা দিচ্ছেন, তাঁরা উদ্বুদ্ধ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পলিটবুরো সদস্য কমরেড সৌমেন বসু, কমরেড গোপাল কুণ্ডু, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য সহ কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃবৃন্দ। প্রতিরূপ উদ্বোধনের আগে কমরেড অসিত ভট্টাচার্য শ্রমিক শ্রেণির সংগ্রামের মহান রক্তপতাকা উত্তোলন করেন এবং এ যুগের বিশিষ্ট মার্কসবাদী চিন্তানায়ক ও এস ইউ সি আই (সি)-র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কমরেড শিবদাস ঘোষের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান। দলের সঙ্গীত গোষ্ঠী ২৪ এপ্রিলের উপর রচিত গান এবং কমরেড শিবদাস ঘোষ স্মরণ-সঙ্গীত ও আন্তর্জাতিক সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির আগে থেকেই কমরেড শিবদাস ঘোষ উপলব্ধি করেন, স্বাধীনতা এলেও এদেশে গণমুক্তি অধরাই থাকছে। এ দেশে একটি যথার্থ কমিউনিস্ট পার্টির অভাবেই যে স্বাধীনতার সুফল আত্মসাৎ করতে পারল দেশীয় বুর্জোয়া শ্রেণি–এই সত্য উপলব্ধি করে কমরেড শিবদাস ঘোষ হাতে গোনা কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে শুরু করেন ভারতের মাটিতে যথার্থ একটি সাম্যবাদী দল গড়ে তোলার সংগ্রাম। এর মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে এস ইউ সি আই (সি)। এই দল গড়ে তোলার কঠোর কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কমরেড শিবদাস ঘোষ হয়ে ওঠেন এ যুগের এক অনন্য মার্কসবাদী চিন্তানায়ক ও বিশ্ব-সর্বহারা শ্রেণির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম মহান নেতা। কমরেড অসিত ভট্টাচার্য বলেন, এই মহান নেতার সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন রক্ষা করা আমাদের ঐতিহাসিক কর্তব্য। তিনি উল্লেখ করেন, মানবসভ্যতার মহান সন্তান যাঁরা, যাঁদের হাত ধরে এই সভ্যতা এগিয়েছে, আজকের দিনে বিশেষত যে মহান নেতাদের শিক্ষাকে পাথেয় করে সর্বহারা শ্রেণি মানব মুক্তির রাস্তায় এগিয়ে যাচ্ছে, সেই মহান মার্কস থেকে শুরু করে মাও সে-তুঙ পর্যন্ত নেতাদের বিপ্লবী জীবনের স্মৃতিচিহ্নকে রক্ষা করার চেষ্টা হয়েছে। একইভাবে তাঁদের যোগ্য উত্তরসূরি মহান নেতা শিবদাস ঘোষের বিপ্লবী স্মৃতিচিহ্নগুলিকে সংরক্ষণ করা ঐতিহাসিক প্রয়োজন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যে কর্মীরা বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে আসবেন, এই সব স্মৃতি তাঁদের প্রেরণা জোগাবে। কমরেড শিবদাস ঘোষের মরদেহ নিয়ে মিছিলও কীভাবে বিপ্লবের কাজে বহু মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তার উল্লেখ করেন তিনি। ঘাটশিলায় মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষ চিন্তাধারা শিক্ষাকেন্দে্র কমরেড শিবদাস ঘোষের মূর্তি এবং টালায় বনমালী চ্যাটার্জী স্ট্রিটের যে কমিউনে কমরেড শিবদাস ঘোষ থাকতেন সেখানেও তাঁর স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে তা উল্লেখ করে তিনি ভারতের নানা রাজ্যে এই মহান নেতার মূর্তি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।
দীর্ঘদিন পুরনো বাড়িটিতে কাজ চালানোর পর দলের কাজকর্মের পরিধি বাড়ায় জায়গার অভাব মেটাতে নতুন বাড়ি তৈরি খুবই জরুরি প্রয়োজন হয়ে ওঠে। প্রথমে চেষ্টা হয়েছিল পুরনোটির মূল অংশ সংরক্ষণ করেই নতুন বাড়ি তৈরির। কিন্তু জায়গা এবং অর্থাভাবে তা সম্ভব হয়নি। ফলে ২০১২ সালের জুন মাসে পুরনো বাড়িটি ভেঙে নতুন বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়। সারা ভারতের কর্মী সমর্থক শুভানুধ্যায়ীরা তার জন্য অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন। তখনই দলের শিল্পী কমরেডরা উদ্যোগ নেন পুরনো বাড়িটির একটি হুবহু প্রতিরূপ বানাবেন তাঁরা। তাই ভাঙার আগেই একেবারে প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ের ফটোগ্রাফ এবং ভিডিও ছবি তাঁরা তুলে রাখেন। ২০১৪-র ৭ নভেম্বর নতুন ভবনের উদ্বোধনের কিছুদিন পর থেকেই তাঁরা প্রতিরূপটি তৈরির কাজ শুরু করেন। করোনা অতিমারি জনিত পরিস্থিতিতে কাজটি ব্যাহত হলেও শেষ পর্যন্ত গভীর নিষ্ঠা, দক্ষতা ও দীর্ঘ পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এই অনবদ্য প্রতিরূপটি তাঁরা সম্পূর্ণ করেন।
৪৮ লেনিন সরণির ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়ির প্রতিরূপ নির্মাণের কাজে কমরেড মিহির রায়ের নেতৃত্বে ভূমিকা নিয়েছেন, কমরেডস গৌতম ঘোষ, শিবশঙ্কর মানিক, অসীম কুমার দত্ত, অরূপ কুমার মণ্ডল, অর্কদ্যুতি সরকার, অর্ধেন্দু সরকার, শুভেন্দু চ্যাটার্জী ও শ্রী কৌশিক দত্ত।