প্রায় ১০–১২ বছর পর এস ইউ সি আই (সি) দলের মিটিংয়ে কলকাতায় এলাম৷ আগে যখন এসেছিলাম তখন আমি ক্লাস সেভেন কি এইটের ছাত্র৷ আমার এক টিউশনের শিক্ষক আমাকে এনেছিলেন৷ কিন্তু সেই যাওয়ার স্মৃতি এখন প্রায় লুপ্ত৷ নতুন করে ১৭ নভেম্বরে কলকাতা আসার অভিজ্ঞতাটি বলব৷
আমাদের অঞ্চলে বা থানায় যদি ধরা হয় তা হলে দেখা যাবে, এস ইউ সি আই (সি) দলের লোক গুটিকয়েক৷ তাদের মধ্যেই কিছু আবার বার্ধক্যের সীমায় উপনীত৷ লোক কয়েকটি, তবু দেখি প্রায়ই ওয়ালিং, কালেকশন, পোস্টার, ট্যাবলো প্রচার লেগেই আছে৷ এবার গাড়ি করে প্রায় ৫০ জনকে কলকাতায় নিয়ে গেছে৷ অন্য দলগুলির লোক দেদার৷ যেন হাঁক দিলেই পাওয়া যায়৷ তবুও তাদের মিটিংয়ে এইসবের কোনও তোয়াক্কা করে না৷ ফলে তারা আমজনতার কণ্ঠস্বর শুনতে পায় না৷ ব্যাপক মিডিয়া প্রচারই তাদের সম্বল৷
স্লোগান রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ৷ এটি সব দলই করে থাকে৷ এস ইউ সি আই(সি) বাদে অন্যান্য কমিউনিস্ট পার্টির লোকেরা স্লোগান মুখস্তের মতো বলে যায়, হূদ্যতা থাকে না৷ দক্ষিণপন্থী দলের লোকেরা বলে, রামবাবু জিন্দাবাদ, শ্যামবাবু জিন্দাবাদ, যদুবাবু জিন্দাবাদ৷ সেখানে রামই মুখ্য, প্রজারা গৌণ৷ এস ইউ সি আই (সি) স্লোগানের সঙ্গে কাজ যা করে তা পাঠকরা বিচার করবেন৷ ১৭–র মিটিংয়ে যাওয়ার আগে ও পরে এমনই অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার৷
দায়বদ্ধতা, নিয়মশৃঙ্খলা, ব্যক্তিগত সম্পর্ক, বিভিন্ন সোস্যাল যোগাযোগ মাধ্যমে এই দলের লোকেরা যে পরিমাণে দিলখোলা ও সমালোচনাপ্রিয় তা বাস্তবে প্রয়োগের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ ১৭–র সমাবেশে আসার সময় এক জায়গার পার্টির লোকের সঙ্গে অন্য জায়গার পার্টির লোকের দেখা হলে আনন্দ যেন কুটুম্বিতা ও বন্ধুত্বকেও হার মানায়৷
এই দলের লোকেরা যা বলে করব, তা করে দেখায়৷ যা করা উচিত তা করতে শত বাধা হলেও এগিয়ে আসে৷ সেদিনের সমাবেশে ঝরঝর বৃষ্টিতে সবার শোনার মানসিকতা এটাই প্রমাণ করে৷
এ ছাড়াও তাদের আরও অনেক গুণ আছে যা আমার ধরাছোঁয়ার বাইরে৷ তাদের সঙ্গে না মিশলে তা আয়ত্ত করা সম্ভব নয়৷ আসলে এগুলি সম্ভব হয়েছে একমাত্র প্রখর বুদ্ধি, সঠিক শিক্ষার দ্বারা৷ তারা নেশাদ্রব্যের ঘোর বিরোধী, মানবধর্মে বিশ্বাসী৷ যৌনসম্পর্কের স্বাভাবিকতা ও সৌন্দর্যের দিকটি তারা গ্রহণ করে৷ এ ছাড়াও পোশাক থেকে চলাফেরা, সব জায়গায় তারা গ্রহণযোগ্য৷ শুধু সরকার ও পুঁজিপতি শ্রেণি চায় না বলে এখনও ব্রাত্য৷ কিন্তু সরকার তো শেষ কথা বলে না৷ শেষ কথা একদিন বলবে জনগণ৷
হংসেশ্বর মাহাতো, হুড়া, পুরুলিয়া