গত বছর এপ্রিল-মে মাসে লকডাউনে কাজ হারিয়ে দলে দলে পরিযায়ী পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের রাজ্যে ফেরার করুণ ছবি দেখেছিল দেশবাসী। এক বছর পর সেই এপ্রিল মে মাসেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির চরম অবহেলায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। গত বছর গাড়ি-বাস-ট্রেন না পেয়ে পায়ে হেঁটে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়েছিল পরিযায়ী শ্রমিকদের। মাঝরাস্তায় প্রাণ হারানোয় বাড়ি ফেরা হয়নি অনেকের। এবারেও সেই একই পরিস্থিতি মধ্যে পড়ার ভয়ে ইতিমধ্যে শহর ছড়িতে শুরু করেছেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। ইতিমধ্যেই দেশে করেনায় দৈনিকসংক্রমণ ৪ লক্ষের গণ্ডিপার করছে।
করোনার জেরে আবার উধ্বমুখী বেকারত্বের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই মহারাষ্ট্র, গুজরাট, তামিলনাড়ু, কেরালা সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আংশিক লডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। দিল্লিতে প্রশাসন নাইট কাফু জারি করেছে। পশ্চিমবঙ্গে দু’সপ্তাহ লোকাল ট্রেন বাতিল হয়েছে। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) সমীক্ষায় জানা গেছে, গত বছরের মতো সরকারিভাবে দেশে এখনও লকডাউন জারি না হলেও ইতিমধ্যেই দেশে গত এক মাসে ৭৫ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার যেখানে গত একমাসে ৯.৭৮ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে সেখানে গ্রামাঞ্চলের উঠেছে ৭.১৩ শতাংশ। যার জেরে দেশে বেকারত্বের হার গত চার মাসের মধ্যে ৮শতাংশে পেীছে গিয়েছে (সুত্র: এই সময় ৪.৫.২১)। রেটিং সংস্থা ইস্ক্রা’র মতে ক্ষুদ্রঋণ শিল্পে এপ্রিলে ঋণ আদায় কমেছে ৮-১০ শতাংশ। এই ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের অনেকেই ঋণ নিয়ে থাকে। ফলে তাদের রোজগার বন্ধ হলে ঋণ শোধের আশঙ্কায় পড়বেন তারা। ভয়াবহ বাজার সংকটে ধুকছে ক্ষুদ্র ব্যবসা। বাজারে মন্দা হওয়ায় বিভিন্ন ছোট মাঝারি ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত, কী করে শুধবেন তারা ব্যাঙ্কের ঋণ? বাজারের অভাবে আর ঋণের বোঝায় ছোট ছোট কোম্পানি বন্ধ হচ্ছে। ছোট-বড় সব কোম্পানিতে চলছে কর্মী সংকোচন। অর্থনীতির কোনও পাঠ না পড়া মানুষও বুঝছেন, সাধারণ মানুষের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ঠিকমত না করে। যদি সরকার লকডাউন জারি করার কথা ফের ভাবে, সে ক্ষেত্রে অনাহার অপুষ্টিতে মৃত্যু ঘটবে বহু মানুষের। গোটা দেশ যখন অতিমারির আক্রমণে বিধবস্ত, ঠিক সেই সময় কেন্দ্রের বিজেপি সরকার মহা উৎসাহে তৈরি করছে ঝকঝকে এক নতুন রাজধানী – সেন্ট্রাল ভিস্টা। বর্তমানে যখন দেশের বেশিরভাগ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন ও জীবিকা নিয়ে টানাটানি চলছে তখন মানুষ আশা করেছিল, কেন্দ্রীয় সরকার দেশের মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণের ঘোষণা করবে। কল কারখানা ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী ছাঁটাই যাতে না হয় তা নিশ্চত করা। এই দুঃসময়ে তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো কারণ শ্রমিকরা তাদের মালিকদের দ্বারে কোটি কোটি টাকা এনে দিয়েছে। সরকারের দায়িত্ব ছিল দেশের ৯৯ শতাংশ জনগণের জীবন ও জীবিকা টিকিয়ে রাখার জন্য যুদ্ধকালীন তৎপরতায় পদক্ষেপ নেওয়া অথচ সরকারের কোনও হেলদোল নেই। তাই প্রশ্ন জাগে এ দেশে আদৌ কি কোনও সভ্য সরকার আছে?