এক পা নেই। আছে অটুট মনের জোর। সেই জোরে লাঠিতে ভর করে এলাকায় ভোটের প্রচার করছেন দক্ষিণ দিনাজপুরের তপন বিধানসভা কেন্দ্রের এস ইউ সি আই প্রার্থী কালীচরণ এক্কা। কখনও এক পায়ে সাইকেল চালিয়ে চলে যাচ্ছেন দূরের গ্রামে। চাষিপাড়ায় গিয়ে বোঝাচ্ছেন নয়া কৃষি আইনের কুফল।
শুক্রবার দুপুরে চৈত্রের চড়া রোদ মাথায় নিয়ে মণিপুরের মেঠো রাস্তায় ধরা গেল কালীচরণকে। এক পায়ে প্যাডেল ঘুরিয়ে চালানো সাইকেল থামালেন। আরও দুটি সাইকেলে তাঁর সঙ্গীরা জানান, দলের আর্থিক বল নেই। তাই হেঁটে ও সাইকেলে যত বেশি এলাকায় পৌঁছনো যায়। গত সোমবার মনোনয়ন দিয়েই প্রচারে ঝাঁপিয়েছেন কালীচরণ। তপন থানার গোফানগর অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম হাসাইপুরের বাসিন্দা বছর ৪৯-এর কালীচরণ নিজে ছোট চাষি। বড় মেয়ে পায়েল দশম, মেজ মেয়ে আশ্রিতা অষ্টম ও ছোট ছেলে তেলাবন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। মাত্র দেড় বিঘে পৈতৃক জমি চাষ করে সংসার চলে না। তার সঙ্গে স্ত্রী খুকিদেবীকেও অন্যের জমিতে দিনমজুরের কাজ করতে হয়। তবে অভাব অনটনের মধ্যেও কালীচরণ পার্টির আদর্শের পথে অটল থাকতে পেরে খুশি। দলের জেলা নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, কালীচরণ ছাত্র বয়স থেকে এস ইউ সি আই-এর সঙ্গে যুক্ত। দলের আদর্শে শিক্ষিত একনিষ্ঠ কর্মী কালীচরণকে আদিবাসী অধ্যুষিত তপন থেকে প্রার্থী করা হয়েছে।
কালীচরণ জানান, ১৯৮৩ সালে ফুটবল খেলার সময় ডান পায়ে আঘাত লাগে। সে সময় ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে না পারায় সংক্রমণের ফলে পা কেটে বাদ দিতে হয়। সরকারি দফতর এবং রেড ক্রসে একাধিকবার আবেদন করেও মেলেনি ক্র্যাচ কিংবা হুইলচেয়ার। ফলে সেই কিশোর বয়স থেকে লাঠি নিয়েই চলাফেরা। এলাকার দিনমজুর ও চাষিরা বলেন, কৃষি আইন নিয়ে কিছুই জানা ছিল না। কালীবাবুই এসে বোঝালেন ভবিষ্যতে বণিকরা চুক্তি চাষের জালে ফেলার চেষ্টা করবেন। তিনিই আমাদের বোঝালেন আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা।
দক্ষিণ দিনাজপুরের এস ইউ সি আই প্রার্থী ইতিমধ্যে প্রচারে নজর কেড়েছেন। কালীচরণ বলেন, ‘কৃষি আইন ভয়াবহ। চুক্তি চাষ প্রথার আড়ালে পুঁজিপতিরা কৌশলে দাস প্রথা কায়েমের চেষ্টা করছে। আইন প্রত্যাহার না হলে কৃষকের হাতে জমি থাকবে না। গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষের কাছে ওই কথা তুলে ধরছি।’
(সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা, উত্তরবঙ্গ সংস্করণ, ৩.৪.২০২১)