কোচবিহারে গুরুতর আহত ২ জন, জেল হেফাজতে ১৩
গরিব ছাত্রদের লেখাপড়ার দাবি কি সন্ত্রাসবাদী কাজ? কলেজে ভর্তির ফি কমানোর দাবি কি আজ চরম অপরাধমূলক কাজ বলে চিহ্নিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে কোচবিহারে ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলন করার দায়ে ১৩ জন ছাত্র-ছাত্রীকে জেলে পাঠাতে পারল কী করে রাজ্য সরকারের পুলিশ?
১৬ আগস্ট কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি কলেজে এআইডিএসও-র নেতৃত্বে ছাত্ররা ভর্তি-ফি কমানোর দাবি করতে গেলে পুলিশ তাদের উপর নৃশংস আক্রমণ চালায়। ওই কলেজের ছাত্র সুজয় বর্মন এই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন। এক পুলিশ অফিসার ও সিভিক ভলান্টিয়ার তার গলা টিপে ধরে। প্রায় ৪ ঘণ্টা সংজ্ঞাহীন অবস্থায় ছিলেন তিনি। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই ছাত্র জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দোষী পুলিশদের শাস্তির দাবিতে পরদিন কোচবিহার এসপিকে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি নেওয়া হয়। এআইডিএসও-র নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ মিছিল সেদিন এসপি অফিসে পৌঁছলে পুলিশ আবার নিরস্ত্র ছাত্রছাত্রীদের উপর চড়াও হয়। তারা ছাত্রছাত্রীদের জামাকাপড় ধরে টানে, অশ্লীল গালিগালাজ করে, ব্যাপক লাঠি চালায়। নিস্তার পাননি মহিলা কর্মীরাও। পুরুষ পুলিশ কর্মীরা তাদের ওপরেও হামলা চালায়। কর্মীদের হিংস্র ভাবে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তোলাই শুধু নয়, দুই ছাত্র সুনির্মল অধিকারী ও দেবাশিস অধিকারীকে ব্যাপক মারধর করে পুলিশ। এসপি অফিসের ভিতরে নিয়ে গিয়ে তাদের এলোপাথাড়ি মারা হয়। দুই ছাত্রই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে। পুলিশ অনেক টালবাহানার পর তাদের কোচবিহার এম জে এন মেডিকেল কলেজে নিয়ে গেলে চিকিৎসা শুরু করেন। ১৩ জন ছাত্রছাত্রীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, নারীদের উপর নিগ্রহ সহ একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মিথ্যা মামলা সাজানো হয় এবং কোর্ট তাদের ১০ দিনের জেল হেফাজত দেয়। শান্তিপূর্ণ ছাত্র-আন্দোলনকারীদের ওপর হলদিবাড়ি ও কোচবিহারের পুলিশ এবং প্রশাসনের এই বর্বর আক্রমণের প্রতিবাদে ১৮ আগস্ট এআইডিএসও কোচবিহার জেলা জুড়ে ধিক্কার দিবস পালন করে।
সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কমরেড মণিশংকর পট্টনায়ক এক বিবৃতিতে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, ন্যায়সঙ্গত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতি পুলিশ প্রশাসনের এই ভূমিকা শুধুমাত্র এআইডিএসও-র ছাত্রছাত্রীদের ওপরেই নয়, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ওপর, মানুষের যে কোনও ধরনের প্রতিবাদের ওপরেও নির্মম আক্রমণ। একে রুখতে সকল ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সহ সমস্ত পেশার মানুষের কাছে জোট বেঁধে আন্দোলনে সামিল হওয়ার আবেদন জানান তিনি। ১৯ আগস্ট রাজ্যের সমস্ত জেলা ও মহকুমা শহরে ধিক্কার মিছিল হয়। ২৩ আগস্ট কোচবিহার জেলা জুড়ে ছাত্র ধর্মঘট এবং কলকাতা ও শিলিগুড়িতে কেন্দ্রীয় বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়।