হাথরাসে দলিত তরুণীর নৃশংস গণধর্ষণ ও পরিণতিতে মৃত্যুর ঘটনায় মানুষের যে ক্ষোভ ফুঁসে উঠেছিল, তা এখন বহুগুণ শক্তি নিয়ে ঝোড়ো হাওয়ার মতো আছড়ে পড়েছেউত্তরপ্রদেশের পুলিশ-প্রশাসন ও রাজ্যের বিজেপি সরকারের় ওপর। ঘটনা চাপা দিতে উন্মুখ বিজেপি সরকারের পুলিশ-প্রশাসনের যে দানবীয় চেহারা এই ক’দিনে সামনে এসেছে, বিজেপি নেতাদের যে অমানবিক চেহারা প্রকট হয়েছে, তাকে চূড়ান্ত ঘৃণায় ধিক্কার জানাচ্ছে মানুষ।
প্রবল জনরোষের সামনে পড়ে ভালমানুষ সেজে ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তাঁর মুখ্য সচিব সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘এই তদন্তের লক্ষ্য, সমস্ত সন্দেহ ও বিভ্রান্তি দূর করা এবং ন্যায়বিচার সুনিশ্চিত করা”। দেশের মানুষকে বোধহয় বড্ড বোকা মনে করেন তাঁরা। তাই ভেবেছেন, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলেই মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়া যাবে, ক্ষোভ কিছুটা কমবে তাদের। তারপর আবার যে-কে-সেই চলতে থাকবে গরিব পিছিয়ে পড়াদের ওপর নির্যাতন ধর্ষণ আর মুখ বন্ধ করে দেওয়ার একই পালা।
কিন্তু মানুষ এত সহজে কি ভুলতে পারে এই বর্বরতা? সিবিআই যে শাসক দলের পোষা তোতাপাখি সে তো নানা ঘটনায় বার বার প্রমাণ হয়ে গেছে। হঠাৎ ভোল পাল্টে তারা ক্ষমতাসীন বিজেপিকে চটিয়ে হাথরাসে ধর্ষিতা মেয়েটির পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার ছিনিয়ে আনবে– ভাবাই অর্থহীন। মেয়েটির শোকার্ত পরিজনদের সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনের অমানবিক বর্বরতার কী বিচার করবে সিবিআই? ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েটির ধর্ষণ ও মৃত্যুতে উত্তরপ্রদেশে দলিত ও উচ্চবর্ণের সম্পর্কের যে বীভৎস ছবি সামনে এল, ধর্ষণকারী চার নরপশুকে আড়াল করতে রাজ্যের বিজেপি সরকারের জঘন্য অপচেষ্টার পিছনে থাকা ভোট-রাজনীতির যে ছক পরিষ্কার হয়ে গেল, সেই নোংরামির বিচার হবে কোন আদালতে? যাদের নির্দেশে পুলিশ-প্রশাসনের এই অভাবনীয় স্বৈরাচার ও নৃশংসতা, সিবিআই তদন্ত কি পারবে সেইসব রাঘব-বোয়ালদের টেনে বের করতে, শাস্তি দিতে?
স্বাভাবিক ভাবেই মেয়েটির পরিজনরা সিবিআই তদন্তের নির্দেশে সন্তুষ্ট নন। তাঁদের উপর হওয়া প্রতিটি অন্যায়, প্রতিটি অবিচারের উত্তর চান হাথরসের ধর্ষিতার পরিবার। উত্তর চায় দেশের মানুষ। তারা জানতে চায়, রাজ্যের মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়ে যোগী আদিত্যনাথের বিজেপি সরকার কী করে এমন বীভৎস আচরণ করতে পারল শোকগ্রস্ত একটি পরিবারের সঙ্গে। এই দুর্ব্যবহার তো শুধু এই পরিবারটির সঙ্গে নয়, তা করা হয়েছে দেশের সমস্ত শোষিত, বঞ্চিত গরিব পিছিয়ে-পড়া মানুষের সঙ্গে। তাই মানুষ জানতে চায়, এই মর্মান্তিক ধর্ষণ-হত্যা ও তাকে চেপে দেওয়ার জন্য বিজেপি সরকারের এই নিষ্ঠুর বর্বরতা প্রকাশ্যে এসে যাওয়ার পরেও নীরব কেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ‘মন কি বাত’-এ মৃত মেয়েটির জন্য এতটুকু জায়গাও হল না কেন? জানতে চায়, চরম অন্যায়কারী নেতা যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিচ্ছে বিজেপির দলীয় নেতৃত্ব।
হাজারো সিবিআই তদন্তেও এ সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে না। জনতার আদালতেই এর জবাব দিতে হবে যোগী আদিত্যনাথ, নরেন্দ্র মোদীদের। দেশের মানুষ ফুঁসছে– উত্তর তাদের চাই-ই।