সরকারি পে–লোডার আর পুলিশ মিলে যখন চোখের নিমেষে সব কিছু ভেঙে গুঁড়িয়ে দিচ্ছিল, বাচ্চা দুটো তখন অঝোরে কাঁদছে৷ চোখের জল মুছিয়ে বাচ্চা দুটোর মা তখনও চেষ্টা করে যাচ্ছেন কী করে সামান্য কাপড়–জামা, থালা–বাসন কটা রক্ষা করা যায়৷ চেষ্টা করে যাচ্ছেন কীভাবে এই প্রবল
শীতের হাত থেকে বাঁচানো যায় বাচ্চাদের আর অসুস্থ বুড়ি শাশুড়িকে৷ বাচ্চাগুলোর বাবা ফেরেননি তখনও৷ প্রথমবার কর্পোরেশনের লোক, পুলিশ যখন তুলতে এসেছিল, ওঁরাই তো দল বেঁধে রুখে ভাগিয়ে দিয়েছিলেন৷ শাসক দলের দাদাদের আশ্বাসে ভরসা ছিল, এ যাত্রা বুঝি রেহাই পাবে তাঁদের এই ঝুপড়ি৷ কাজ আর মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজতে কতবারই তো ঠাঁইনাড়া হতে হয়েছে ওঁদের মতো শতাধিক পরিবারকে৷ সত্তর বছরের স্বাধীন এই প্রাচীন দেশটায়, এ শহরে উচ্ছেদ হওয়াটাই যেন ওঁদের ভবিতব্য৷
অথচ পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ চলবে না, এ তো নতুন কোনও দাবি নয় পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী দলনেত্রী থাকাকালীন ’৯৬ সালে সিপিএম আমলে কুখ্যাত ‘অপারেশন সানশাইন’–এর সময় হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে গড়িয়াহাটের মোড়ে প্রতীকী কাপড় বিক্রি করেছিলেন৷ ২০০২–তে রেললাইনের ধারে ঝুপড়ি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন– ‘পুনর্বাসন ছাড়া কোনও হকার–ঝুপড়ি–বস্তি উচ্ছেদ করা চলবে না’৷ অথচ সেই তাঁর আমলেই নগর–সৌন্দর্যায়নের্ নামে, সবুজায়ন, মেলা–উৎসব, আবাসন–ফ্লাইওভার, রাস্তা চওড়া করা সহ সরকারি–বেসরকারি প্রকল্প করার নামে বারে–বারেই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার মানুষকে চোখের পলকে গৃহহীন–কর্মহীন করে ফেলা হচ্ছে৷ এবং তা করা হচ্ছে উপযুক্ত পুনর্বাসন ছাড়াই৷ যার সাম্প্রতিকতম নজির সল্টলেকের হাজার–হাজার বস্তিবাসী উচ্ছেদ৷
মাস কয়েক আগে ফিফা বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে সৌন্দর্যায়নের অছিলায় এ ভাবেই হাজার হাজার মানুষকে বস্তি ও অস্থায়ী দোকান থেকে উচ্ছেদ করা হয়৷ মুখ্যমন্ত্রীর ‘বিশ্ববাংলায় বিশ্বকাপ’–এর সদম্ভ হোর্ডিং–এর আড়ালে চাপা পড়ে যায় উচ্ছিন্ন বস্তি–ঝুপড়িবাসী–হকারের কান্না ও দীর্ঘশ্বাস৷ বিশ্বকাপ মিটে গেলেও সল্টলেকের এখানে–সেখানে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আজও চলছে উচ্ছেদ অভিযান৷
অথচ যে কোনও আধুনিক বুর্জোয়া রাষ্ট্রের শহরগুলোতে বস্তি–ঝুপড়ি একান্ত অবশ্যম্ভাবী৷ তাদের না হলে আকাশছোঁয়া ফ্ল্যাটে স্কাইওয়াক বিলাসে ছাই পড়ে৷ রান্না থেকে বাজার, বাচ্চার দেখাশোনা– সব কিছু সামলাতে ঝুপড়িবাসীদের শরণাপন্ন হতেই হয় ঝুপড়ি দেখে নাক সিটকানো মানুষটিকেও৷ গ্রামের গরিব–নিম্নবিত্ত ক্ষুদ্র চাষি–ভাগচাষি–মজুর মাথা গোঁজার ঠাঁই ও কাজের খোঁজে বড় শহরগুলিতে ভিড় করেন৷ আধুনিক শহরেরই এক প্রান্তে অত্যন্ত অপরিসর, পূতিগন্ধময় পরিবেশে থাকতে বাধ্য হন৷ কোনওমতে দিন গুজরান করেন তাঁরা৷ কালক্রমে সেই শহরেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গড়ে ওঠে সেই সব বস্তি–ঝুপড়ি৷ ২০০১ সালের জনগণনা থেকে জানা যায়, ভারতের শহরাঞ্চলে মোট জনসংখ্যার ২৩.১ শতাংশ (২৮.৬ কোটি) মানুষ বস্তিবাসী৷ এখন তা অনেক বেশি৷ একচেটিয়া পুঁজিপতি–ফড়ে–দালাল-বড় ব্যবসায়ীরা সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেশের সম্পদ নয়–ছয় করে৷ অথচ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ওই সমস্ত হতদরিদ্র মানুষকে জীবন ও জীবিকাচ্যুত করছে নির্বিচারে, নির্মমভাবে৷
ভুললে চলবে না, বেঁচে থাকার অধিকার, বাসস্থানের অধিকার সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার বলে স্বীকৃত৷ এ ছাড়া দীর্ঘ লড়াইয়ের ফলে ২০১৪ সালে সংসদে পাশ হয়েছে দ্য স্ট্রিট ভেন্ডার্স (প্রোটেকশন অফ লাইভলিহুড অ্যান্ড রেগুলেশন) অ্যাক্ট৷ বলা বাহুল্য, উপযুক্ত পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ সর্বাংশেই মানবাধিকার লঙঘনের অপরাধ ছাড়া কিছু নয়৷ অথচ বিশ্বব্যাঙ্ক–এডিবির ঋণ পাওয়ার লক্ষ্যে, একচেটিয়া পুঁজিপতিদের সেবা করার হীন উদ্দেশ্যে সেই মানবাধিকারকেই দু’পায়ে মাড়িয়ে যাচ্ছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার৷ কলকাতা–সল্টলেক সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের উচ্ছেদ হওয়া ওই সমস্ত প্রান্তিকমানুষের জীবন–জীবিকা রক্ষার সংগ্রামের পাশে সর্বস্তরের মানুষকে একজোট হয়ে দাঁড়াতে হবে৷
5 comments
Pingback: buy cialis with no persciption
Pingback: viagra buy
Pingback: buy cialis in cro
Pingback: ivermectin 9 mg
Pingback: female pink viagra 100mg pills