৩০ মার্চ থেকে গাজা সীমান্তে সমবেত হয়েছিলেন প্যালেস্টাইনের হাজার হাজার মানুষ, ইজরায়েলের হাতে বেদখল হয়ে যাওয়া নিজস্ব বাসভূমি ফেরত পাওয়ার দাবিতে৷ দিনের পর দিন বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা৷ জবাবে বর্বর হামলা চালায় ইজরায়েল৷ নিহত হন কমপক্ষে ১২৯ জন প্যালেস্টিনীয়৷ আহত প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার৷ ১৯৭৯ সাল থেকে রমজান মাসের শেষ শুক্রবারটি ‘জেরুজালেম দিবস’ হিসাবে পালিত হয়ে আসছে৷ এই দিনে ইজরায়েলের হানাদারির বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইনের উৎখাত হওয়া মানুষের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ৷ গত ৮ জুন জেরুজালেম দিবসে গাজা সীমান্তে সমবেত প্যালেস্টিনীয় বিক্ষোভকারীদের উপর ইজরায়েলি সেনার হামলায় ১৫ বছরের এক কিশোর সহ মৃত্যু হয় চার জনের৷ আহত ছ’শোর উপরে৷ এই নৃশংস হামলার বিরুদ্ধে গোটা দুনিয়া জুড়ে বিক্ষোভ দেখায় মানুষ৷ রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভাতেও এর প্রতিবাদে ১৩ জুন একটি নিন্দাপ্রস্তাব পাশ হয়৷
সাধারণ সভার সদস্য ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১২০টি দেশই নিন্দাপ্রস্তাবটি সমর্থন করেছে৷ ইজরায়েলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা এই হামলার দায় হামাস গোষ্ঠীর উপর চাপিয়ে প্রস্তাবের যে সংশোধনী এনেছিল, সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোট না পাওয়ায় তা–ও খারিজ হয়ে গেছে৷ গাজা ও অধিকৃত ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের প্যালেস্টিনীয় নাগরিকদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে রাষ্ট্রসংঘের কাছে৷
এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাষ্ট্রসংঘ পর্যবেক্ষক দল গঠন করতে পারে, এমনকী পুরোদস্তুর শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠন করারও ক্ষমতা রয়েছে তার৷ কিন্তু এসবের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন প্রয়োজন৷ নিরাপত্তা পরিষদে সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা ভেটো প্রয়োগ করে তার অন্যতম স্যাঙাৎ ইজরায়েলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘকে এই ধরনের পদক্ষেপ নিতে বাধা দেবে– সে আশঙ্কা পুরো মাত্রাতেই রয়েছে৷ ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি এই নিন্দাপ্রস্তাবে প্যালেস্টাইনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন৷ আর ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত বলেছেন এর দ্বারা নাকি তাদের আত্মরক্ষার মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে প্রস্তাবের সমর্থক দেশগুলি৷
৮ জুন প্যালেস্টাইনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সিরিয়ার দামাস্কাসে সে দেশের নাগরিকদের সাথে প্যালেস্টিনীয়রাও মিছিল করেন৷ তেহরান সহ ইরানের ৯০০টি শহরে লক্ষ লক্ষ মানুষ ইজরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে সামিল হন৷ ইরাকের বাগদাদ, পাকিস্তানের ইসলামাবাদেও বিশাল জনতা মিছিলে পা মেলান৷ বিক্ষোভকারীরা ইজরায়েল, আমেরিকার পতাকা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কুশপুতুল পোড়ায়৷ বিক্ষোভ মিছিল হয় ভারতের রাজধানী দিল্লি, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও মেলবোর্নে৷ বার্লিন ও ভিয়েনায় হাজার হাজার মানুষ এ দিন বিক্ষোভ মিছিল করেন৷ স্লোগান ওঠে প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা চাই৷ ইজরায়েলি সেনার আক্রমণে নিহত প্যালেস্টিনীয় স্বাস্থ্যকর্মী ২১ বছরের রাজান আল–নজ্জরের ছবি হাতে জার্মানিতে মিছিল করেন ডাক্তার ও নার্স সহ চিকিৎসাকর্মীরা৷ কানাডা এবং আমেরিকার ২৩টি শহরেও প্যালেস্টাইনের উপর ইজরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে বিক্ষোভে সামিল হন অসংখ্য মানুষ৷ খোদ ইজরায়েলেই বিভিন্ন স্থানে প্যালেস্টিনীয়দের প্রতি সংহতি জানিয়ে মিছিল করেন সে দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিকরা৷ দাবি ওঠে, অবিলম্বে ইহুদিবাদী ইজরায়েলকে প্যালেস্টিনীয়দের উপর বর্বর হানাদারি বন্ধ করতে হবে৷ বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করে আমেরিকার মদতে ইজরায়েলি হানাদারি যে চিরকাল চলতে পারে না, বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে৷
(৭০ বর্ষ ৪৪ সংখ্যা ২২ জুন, ২০১৮)