হাসপাতালের নার্সরা যে বিশেষ সাদা পোশাকে গোটা বিশ্বজুড়ে পরিচিত, সে পোশাক প্রবর্তন করেছিলেন আধুনিক নার্সিং–এর প্রতিষ্ঠাতা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল৷ পরবর্তীকালে কিছু কিছু হাসপাতালে নার্সদের পোশাকের রঙে পরিবর্তন ঘটানো হলেও, নার্স বলতে এখনও জনসাধারণ ওই ঐতিহ্যবাহী ক্যাপ–সহ বিশেষ সাদা পোশাকই বোঝেন৷
সম্প্রতি সরকারি হাসপাতালের নার্সদের পোশাক পরিবর্তনের কথা বলেছে রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য দপ্তর৷ বলেছে, বদলানো হবে রঙ৷ বাদ দেওয়া হবে ক্যাপ৷ হঠাৎ কেন এই পরিবর্তন?
নার্সদের সংগ্রামী সংগঠন ‘নার্সেস ইউনিটি’ নার্সদের পোশাক বদলানোর প্রতিবাদ জানিয়ে ৩১ মে কলকাতা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে৷ তাঁদের বক্তব্য, ‘বিশেষ একটি নার্সিং সংগঠন নার্সদের পোশাকের রঙ সাদা থেকে নীল করতে চাইছে৷ টিভি চ্যানেলে শাসকদলের এক বিধায়ককেও এই রঙবদলের সমর্থনে কথা বলতে শোনা গেছে৷ আমরা নার্সেস ইউনিটির পক্ষ থেকে এটাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করি৷’
নার্সেস ইউনিটি–র রাজ্য সম্পাদক পার্বতী পাল বলেন, ‘এ রাজ্যে সরকারি নার্সদের নানা সমস্যা রয়েছে৷ তাঁরা কর্মক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পান না৷ নিয়মিত বেতন পান না৷ অন্যান্য সরকারি কর্মচারীদের সাপেক্ষে তাঁদের ১৩টি ছুটিও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ রোগীপিছু নার্সের সংখ্যা অত্যন্ত কম৷ হাসপাতালের সার্বিক পরিকাঠামোর অভাবে রোগীর বিপদ হলে তার আত্মীয়দের হাতে নিগৃহীত হতে হয় নার্সদের৷ ইদানীং ট্রেনিং–এর সময় কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত চাপে অনেকে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন৷ কেউ কেউ এমনকী আত্মহত্যাও করেছেন৷ এই সব গুরুতর সমস্যার দিকে নজর দিলে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা উন্নত হয়৷ তা না করে, নার্সদের পোশাকের রঙ বদলে কী করতে চান তাঁরা? সাদা শান্তি ও স্বচ্ছতার প্রতীক৷ নার্সদের জন্য প্রচলিত ক্যাপ–সহ সাদা পোশাক নার্সিং–নৈতিকতা ও মর্যাদার সাথে অবিচ্ছেদ্য ভাবে জড়িত৷ এ পোশাক অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত, উপযুক্ত এবং সম্মানীয় যা কর্মনিষ্ঠার গাম্ভীর্য ও মাধুর্যকে নির্মলতার সাথে বহন করে৷ এর পরিবর্তনে কী লাভ?’ সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিস্টার প্রীতি তারণ, সিস্টার ভাস্বতী মুখার্জী, সিস্টার তুষা দাস প্রমুখ৷
(৭০ বর্ষ ৪২ সংখ্যা ৭জুন, ২০১৮)