ইউক্রেনের একটি খবরের কাগজ ‘ইউক্রেনস্কা প্রাভদা’–য় সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে৷ রিপোর্টে প্রকাশ, ইউক্রেন এবং সেখানকার ডনবাস অঞ্চলের বিরাট অংশের মানুষ মনে করেন, আজকে যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় তাঁরা বাস করছেন, তার তুলনায় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নে তাঁরা অনেক ভালভাবে দিন কাটাতেন৷ একটি গবেষণা গোষ্ঠী– ‘কালমিউস্কা গ্রুপা’ এ সংক্রান্ত সমীক্ষা চালিয়েছিল৷ তাদেরই করা সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি৷
ইউক্রেন একসময় ছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত একটি দেশ৷ গত শতকের নয়ের দশকে সমাজতন্ত্রের বিপর্যয়ে পর ইউক্রেনের ক্ষমতা দখল করে পুঁজিপতি শ্রেণি৷ কায়েম হয় পুঁজিবাদী রাষ্ট্র৷ এখন সে দেশের সরকারে রয়েছে চরম দক্ষিণপন্থী একটি দল, যাকে পিছন থেকে মদত দেয় মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ৷ তাদের সহায়তা ও নয়া–নাৎসিদের সমর্থনে ২০১৪ সালে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী হন দক্ষিণপন্থী পেট্রো পোরোশেঙ্কো৷
সরকারে বসেই পোরোশেঙ্কোর নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিবাদী সরকার ইউক্রেন ও ডনবাস এলাকায় পূর্বতন সোভিয়েত আমলের যে সব স্মৃতিচিহ্ণ ছিল, সাম্যবাদের উন্নত আদর্শের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে যে সব স্থাপত্য, মূর্তি ইত্যাদি সেখানে তৈরি হয়েছিল, তার সবগুলিই একে একে ধ্বংস করেছে৷ এর উপর শাসকদলের মদতপুষ্ট স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের অধিকাংশই দিবারাত্র গলা ফাটিয়ে কমিউনিজম বিরোধী ও সোভিয়েত বিরোধী অপপ্রচার চালায়৷ তা সত্ত্বেও দেখা যাচ্ছে, এই অঞ্চলের বড় অংশের মানুষই সোভিয়েত ইউনিয়নের দিনগুলি ফিরিয়ে আনার পক্ষপাতী৷ সংখ্যার হিসাবে ইউক্রেনের ৪৩ শতাংশ ও ডনবাসের ৫১ শতাংশ মানুষই মনে করেন আবার সোভিয়েত ইউনিয়নের দিনগুলি ফিরে এলে ভাল হত৷
সমাজতান্ত্রিক আমলে ইউক্রেনের মানুষ মর্যাদার সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচার সুযোগ পেয়েছিল৷ খাদ্য–বস্ত্র–বাসস্থানের মতো বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়োজনগুলি মেটানোর দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রের৷ সকলেরই শিক্ষা ও চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার ছিল৷ আজ পুঁজিবাদী ইউক্রেনে সে সব স্বপ্নের মতো মনে হয়৷ অন্যায় শোষণের উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই ব্যবস্থায় সমস্ত কিছুই পণ্য৷ এমনকী ভয়ানক মুনাফা লালসা কেড়ে নিচ্ছে মনুষ্যত্বও৷ মানুষে মানুষে বাধিয়ে দিচ্ছে বীভৎস হানাহানি৷ ইউক্রেনের সাধারণ মানুষ আজ এ সবেরই শিকার৷ তাদের বিভ্রান্ত করতে ইউক্রেনে পশ্চিমী, বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ অবিরাম সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদ বিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে৷ প্রবল এই নিন্দাস্রোতের মুখে দাঁড়িয়েও ইউক্রেন এবং ডনবাসের মানুষের, পূর্বতন সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের সপক্ষে মতদান,নিঃসন্দেহে নয়া–নাৎসিদের সমর্থনপুষ্ট দক্ষিণপন্থী পোরোশেঙ্কো সরকারের মুখে একটি জোরালো থাপ্পড়৷
(৭১ বর্ষ ৮ সংখ্যা ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮)