দরিদ্র গ্রামবাসীদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য আসামের বিজেপি সরকার়ের পুলিশ যে চরম নৃশংসতার পরিচয় দিয়েছে তা দেখে ধিক্কারে ফেটে পড়েছেন সারা দেশের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ। ২৩ সেপ্টেম্বর আসামের দরং জেলার ধলপুর গ্রামে দরিদ্র গ্রামবাসীদের পুনর্বাসন ছাড়াই উচ্ছেদ অভিযানে নেমে বিজেপি সরকারের পুলিশ গুলি চালিয়ে তিনজনকে হত্যা করেছে, আহত বহু। যতটুকু ছবি বাইরে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে পাতলা একটি লাঠি হাতে থাকা এক গ্রামবাসীকে ঘিরে ধরে একেবারে অত্যাধুনিক অস্ত্র থেকে গুলিবৃষ্টিকরছে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী। পুলিশের সাথে আসা ফটোগ্রাফার তীব্র আক্রোশে গুলিবিদ্ধ মানুষটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বুকে, মুখে লাথি মেরে চলেছে চরম পৈশাচিকতায়। পুলিশ কর্মীদের সাথে মিলে তার জান্তব উল্লাস দেখে শিউরে উঠেছে সারা দেশ।
করোনা মহামারিতে যখন সারা দেশের জনজীবন বিপর্যস্ত সে সময়টাকেই আসাম সরকার বেছে নিয়েছে দরিদ্র মানুষদের উচ্ছেদের জন্য। এমনকি সুপ্রিম কোর্টও যখন পুনর্বাসন না দিয়ে উচ্ছেদ করা যাবে না বলে রায় দিয়েছে, সে নির্দেশকেও কার্যত গুলি মেরেই উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির নেতারা সকলেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক প্রচার শুরু করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজের মুখ বাঁচাতে মনগড়া বহিরাগত শক্তির তত্ত্ব হাজির করেছেন। দেশের মানুষ জানে, শাসকরা সব সময় গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করতে গিয়ে প্রতিরোধের সামনে পড়লে বহিরাগত এবং উগ্রপন্থার তত্ত্বই হাজির করে। পশ্চিমবঙ্গের নন্দীগ্রাম, ওড়িশার জগৎসিংপুর, উত্তরপ্রদেশের নয়ডা, তামিলনাডুর কুদানকুলাম সর্বত্রই একই জিনিস দেখা গেছে। বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী, সাংসদ সকলেই সংখ্যালঘু দরিদ্র মানুষগুলিকে দেশের শত্রু বলে চিহ্নিত করতে চাইছেন। তাঁরা আসামের মধ্যে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে থাকা ভাষাগত, ধর্মগত বিভেদকে সংকীর্ণ স্বার্থে খুঁচিয়ে তুলতে চাইছেন। আর তার জন্য নিরীহ মানুষের প্রাণ বাজি রাখছেন।
উপযুক্ত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দরিদ্র সংখ্যালঘু জনসাধারণকে উচ্ছেদ করা ও গুলি চালিয়ে তিনজন নাগরিককে হত্যার বিরুদ্ধে এস ইউ সি আই (সি) রাজ্য কমিটির আহ্বানে ২৪ সেপ্টেম্বর সারা আসামে শহিদ বেদি স্থাপন করা হয় এবং প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়। গুয়াহাটির উলুবাড়ির ভলভো পয়েন্টে দলের কর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে এই কর্মসূচিতে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং আসাম রাজ্য সম্পাদক কমরেড চন্দ্রলেখা দাস বলেন, সঙ্কীর্ণ সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গিতে চালানো এই অন্যায় উচ্ছেদ অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। সম্পূর্ণ সরকারি মদতে চালানো এই অমানবিক এবং অনৈতিক উচ্ছেদে জনসাধারণের কোনও মঙ্গল সাধন হবে না বরং এই শক্তিগুলো এ ধরণের মানসিকতা পরিহার না করলে আসামের অর্থনৈতিক উন্নয়ন স্তব্ধ হতে বাধ্য। আসামে বিরাজ করা উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী চিন্তার জন্য ভারতের অন্যান্য রাজ্যে যতটুকু অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে, এখানে তাও ঘটেনি। তিনি রাজ্যের সকল অংশের জনসাধারণের উদ্দেশে আহ্বান জানান, জাতি-ধর্ম-ভাষা-বর্ণ নির্বিশেষে এই সংকীর্ণ সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী আন্দোলন গড়ে তুলুন। মূল্যবৃদ্ধি, বেকার সমস্যা সহ জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলা যাতে সম্ভবপর হয় সে জন্য সকল স্তরের খেটে খাওয়া মানুষের ঐক্য গড়ে তোলার জন্য রাজ্যের সমস্ত গণতন্ত্রপ্রিয় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে এগিয়ে আসতে তিনি আহ্বান জানান। গুয়াহাটি ছাড়াও গোয়ালপাড়া, ধুবুড়ী, দক্ষিণ শালমারা-মানকাছাড়, নলবাড়ি, শোণিতপুর, লখিমপুর, কাছাড়, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি ইত্যাদি জেলাতে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও শহিদবেদি স্থাপনের কর্মসূচি পালিত হয়।