“আসামে গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে বিধ্বংসী বন্যা পর্যায়ক্রমে আসছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ অভূতপূর্ব অবর্ণনীয় পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
বর্ষা নামার আগেই প্রবল বৃষ্টি এবং ধস নেমে ডিমা-হাসাও গুয়াহাটি সহ রাজ্যের বহু জায়গায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে, যা থেকে পুনরুদ্ধার আজও হয়নি। ৩২টি জেলার ৬০ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। হাজার হাজার গ্রাম, স্কুল, কলেজ, বাজার, হাসপাতালই শুধু জলের তলায় তাই নয়, বহু শহরও প্লাবিত। বরাক উপত্যকায় সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। আজও পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা প্রায় দুশো, কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি এবং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। জলে মৃতদেহ ভাসছে। ৩,৩১৭টি ত্রাণ শিবিরে দুর্গত মানুষরা রয়েছেন, যেখানে খাদ্য, পানীয় জল অপর্যাপ্ত। লাখ লাখ লোক বাড়িঘর ছেড়ে হাইরোড বা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন, যেখানে ত্রাণের কোনও ব্যবস্থা নেই। বন্যা মানুষের স্বাভাবিক জীবন শুধু বিপর্যস্ত করছে তাই নয়, তাদের সম্পদ, চাষের জমি, গৃহপালিত প্রাণী ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। রাস্তা, রেললাইন, ব্রিজ, কালভার্ট, বাঁধ ভেঙে গেছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বরাক উপত্যকায়। গোটা শিলচর শহর ৫৮ দিন ধরে জলমগ্ন। লাখ লাখ মানুষ অসহায় অবস্থায় পড়ে আছে। তাঁদের চোখে ঘুম নেই। খাদ্য নেই, পানীয় জলের অভাব, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা পরিষেবা বিপর্যস্ত। শিশু এবং বৃদ্ধরা এই পরিস্থিতিতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ধীরে ধীরে গোটা রাজ্য মহামারীর দিকে এগোচ্ছে, যা কেড়ে নেবে আরও অনেক প্রাণ।
এই বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে রাজ্যের বিজেপি সরকারের ভূমিকা অপরাধতুল্য অবহেলার। গোটা মন্ত্রিসভা এবং সরকারের উচ্চপদস্থ অফিসাররা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার ভাঙা-গড়ার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কিছু দলত্যাগী বিধায়কের সুরক্ষা ও পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে।
সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হল, মানুষ যখন একটু সাহায্যের জন্য আর্তনাদ করছে, মন্ত্রীরা, নেতারা তখন সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে ব্যস্ত। তারা এমনকি বন্যাকবলিত মানুষদের পানীয় জলটুকুর ব্যবস্থাও করতে পারছে না। সরকার যা করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। আসামের মানুষ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন, শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন, আরও হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।
এই অবস্থায় আমাদের দল এস ইউ সি আই (সি) অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে ত্রাণকার্য পরিচালনা করছে। কিন্তু আমাদের দলের শক্তি প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আরও সাহায্য প্রয়োজন। দেশের সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, আসামের বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ান, মুক্তহস্তে সাহায্য করুন।”