ভোট আসে, ভোট যায়৷ সরকারও পাল্টায়৷ কিন্তু আর্সেনিক আক্রান্তদের জীবনের সমস্যার সমাধান হয় না৷ রাজ্যের ১০৯টি আর্সেনিক আক্রান্ত ব্লকের মধ্যে উত্তর ২৪ পরগণার গাইঘাটা ব্লক অন্যতম৷ এই ব্লকের সুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিষ্ণুপুর মাঠপাড়ায় গত ১০ মার্চ আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় মারা যান বিশ্বনাথ দাস, ১১ মার্চ মারা যান বলরাম দাস এবং ১২ মার্চ ভোরে বলরাম দাসের স্ত্রী বিমলা দাস৷ বিগত কয়েক বছরে গাইঘাটা ব্লকে প্রায় ৩৪ জন মারা গেছেন৷ এ যেন মৃত্যুর মিছিল৷
আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল, আর্সেনিক আক্রান্তদের চিহ্ণিতকরণ ও সুচিকিৎসা এবং আর্সেনিকোসিসে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য সহ ৭ দফা দাবিতে ১২ মার্চ গাইঘাটা ব্লক অফিসে বিক্ষোভ দেখায় আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটি৷ বিক্ষোভ চলাকালীন আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটির রাজ্য সম্পাদক অশোক দাসের নেতৃত্বে স্বপন গোস্বামী, রূপম ভৌমিক, সঞ্জীব চ্যাটার্জী ও বিষ্ণুপুরের আর্সেনিক আক্রান্ত রোগী জগবন্ধু মন্ডল জয়েন্ট বিডিও–র সাথে দেখা করে স্মারকলিপি দেন৷ স্মারকলিপির সাথে পিএইচইডি সরবরাহকৃত নলবাহিত জল, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের জল যাতে মিড–ডে মিল রান্না হয় এবং আর্সেনিক মুক্ত বলে পরিচিত নলকূপের জলের আর্সেনিক পরীক্ষার রিপোর্ট দেওয়া হয়৷ হু–এর মতে প্রতি লিটার জলে আর্সেনিকের স্বাভাবিক মাত্রা ০.০১ মিলি গ্রাম৷ সেখানে দেখা যায় যে, গাইঘাটা ও ঠাকুরনগরের পিএইচইডি সরবরাহকৃত জলে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে৷ এছাড়া গাইঘাটা প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র সহ অন্যান্য আর্সেনিক মুক্ত বলে পরিচিত নলকূপের জলেও মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক পাওয়া গেছে৷ বহু বিদ্যালয়ের জলেও মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক মিলেছে৷ ফলে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী না জেনে ওই বিষ জল পান করছে এবং ওই বিষ জলে রান্না হওয়া মিড–ডে মিলের খাবার খাচ্ছে৷ আলোচনায় জয়েন্ট বিডিও কথা দিতে বাধ্য হন যে, আর্সেনিক যুক্ত নলকূপগুলি অবিলম্বে বন্ধ করার ব্যবস্থা তিনি করবেন৷ তিনি আরও কথা দেন যে, দরিদ্র আর্সেনিক আক্রান্তরা সাহায্যের আবেদন করলে তিনি তার ব্যবস্থা করবেন৷
আন্দোলনের চাপে পরের দিনই (১৩ মার্চ) গাইঘাটা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ ভিক্টর সাহা মেডিক্যাল টিম নিয়ে বিষ্ণুপুরের মৃত পরিবার সহ আর্সেনিক আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি যান৷ পরিদর্শনের সময় আর্সেনিক দূষণ প্রতিরোধ কমিটির পক্ষ থেকে আর্সেনিক রোগীদের জন্য স্পেশাল মেডিক্যাল ক্যাম্পের দাবি জানানো হয়৷ ডাঃ সাহা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন৷
অবিলম্বে আর্সেনিক দূষিত অঞ্চলগুলিতে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহ ও আর্সেনিক আক্রান্তদের সুচিকিৎসা এবং পুষ্টিকর ও ভিটামিন যুক্ত খাবার দেওয়া যদি না হয়, তবে মৃত্যুর মিছিল আরও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে৷