বিশ্বায়ন–উদারিকরণ বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে আর্জেন্টিনায় সদ্য অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি মাউরিসিও মাকরিকে হারিয়ে দিলেন অ্যালবার্টো ফার্নান্ডেজ৷ ফার্নান্ডেজ মডারেট বামপন্থী ‘পেরনবাদী’ দলের প্রতিনিধি৷ অন্যদিকে মাউরিসিও মাকরি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতি ঘনিষ্ঠ এবং আই এম এফ অনুগত৷
কেন আর্জেন্টিনার জনগণ উদারিকরণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সরকার বদলে দিল? কারণ মাকরি শাসন দেশকে গণনাহারের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, ডুবিয়ে দিয়েছে ঋণের জালে৷ দারিদ্র, বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি সমস্যা মানুষকে এত জর্জরিত করে তুলেছে যে, মানুষ জীবনের অভিজ্ঞতায় নয়া উদার অর্থনীতিকে তুলনা করছে বর্বরতার সাথে৷ দৃশ্যত উদারিকরণ এ সব সমস্যার জন্য দায়ী হলেও সমস্যাগুলির উৎস পুঁজিবাদী অর্থনীতি৷ এই অর্থনীতিকে তীব্র বাজার সঙ্কট থেকে খানিকটা বাঁচাতেই তথাকথিত উদার অর্থনীতি গ্রহণ করা হয়েছিল৷
বলা হয়েছিল প্রত্যেক দেশেই প্রত্যেক দেশের পুঁজিপতিরা বিনিয়োগ করতে পারবে৷ বলা বাহুল্য, এই মুক্ত দরজা দিয়ে একচেটিয়া পুঁজিপতিরাই ঢুকেছিল৷ তারাই তুলনামূলকভাবে দুর্বল দেশগুলিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে পুঁজির শোষণ কায়েম করে দেশগুলিকে ছিবড়ে করে দিয়েছে৷
নয়া উদারনীতিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিশ্বজুড়েই৷ শুধু আর্জেন্টিনা নয়, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলিতে নয়া উদার আর্থিক নীতি বিরোধী আন্দোলন ক্রমেই প্রবলতর হচ্ছে৷ চিলি, ইকুয়েডর, ব্রাজিলের মানুষও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার৷ বাস্তবে উদারনীতিবাদ পুঁজিপতিদের প্রতি উদার, কিন্তু জনগণের প্রতি নিষ্ঠুর৷
প্রবল জনসমর্থন নিয়ে মডারেট বামপন্থী ফার্নান্ডেজ সরকার ক্ষমতায় এসেছে৷ বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে নানা বাক্যবিন্যাসের আড়ালে একই পুঁজিবাদী উদারনীতি লাইন অনুসরণ করলে এই সরকারও জনাদেশের মূল্য দিতে ব্যর্থ হবে৷ সরকার বদলেই আটকে যাবে উদারনীতিবাদ বিরোধী বিক্ষোভ৷
উদারনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের অভিমুখ পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও শাসন ব্যবস্থার অবসানের উদ্দেশে পরিচালিত না হলে এ আন্দোলন অভীষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না৷ আর এই লক্ষ্যে আন্দোলনকে নিয়ে যেতে হলে যথার্থ মার্কসবাদ–লেনিনব চর্চা ছাড়া হতে পারে না