আমাদের দেশে বাবাজি ও মাতাজিরা প্রায়শই সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে ‘অমৃতবাণী’ বর্ষণ করেন। এটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু যোগগুরু ও বর্তমানে একজন সফল ব্যবসায়ী বাবা রামদেব সম্প্রতি এই ধরনের কিছু ‘অমৃতবাণী'(!) বর্ষণ করেছেন, যা দেশের সমগ্র চিকিৎসক সমাজ তথা শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মধ্যে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে।
কী বলেছেন এই যোগগুরু? গত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে রামদেব দাবি করেন, ‘অ্যালোপ্যাথি একটি নির্বোধ বিজ্ঞান। অ্যালোপ্যাথি ওষুধের কারণে এই অতিমারিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনহানি হয়েছে, হাসপাতালের বেডের অভাবে অথবা অক্সিজেনের অভাবে তা হয়নি’। তিনি আরও বলেন, ‘যে সমস্ত ডাক্তাররা (পড়ুন অ্যালোপ্যাথিক) নিজেদের বাঁচাতে পারেন না, তাঁরা করোনা রোগীদের বাঁচাবেন কী করে? বরং তাঁরা শিখুন বাবা রামদেবের কাছ থেকে, যার কোনও ডিগ্রি নেই’। এমনকি এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন বা টিকার কার্যকারিতা ও উপযোগিতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্য ক্রমাগত করার দ্বারা বর্তমানে গোটা বিষয়টিকেই সুকৌশলে ‘অ্যালোপ্যাথি বনাম আয়ুর্বেদ’– এইভাবে দাঁড় করাতে চেয়েছেন। হইচইটা জিইয়ে রাখতে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে ২৫টি প্রশ্ন অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তারদের উদ্দেশে ছুঁড়ে দেওয়ার সস্তা চমক দিয়েছেন।
স্বাভাবিকভাবেই আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে বাবা রাম দেবের কুৎসা, অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা রুখতে দেশের সর্ববৃহৎ চিকিৎসক সংগঠন আইএমএ সহ বিজ্ঞানসেবী ও চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাঁরা গত ২১ মে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে এবং ২২ মে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে এর বিরুদ্ধে মহামারী বিপর্যয় আইন-১৮৯৭ প্রয়োগ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। ২৬ মে আইএমএ-র উত্তরাখণ্ড শাখা এক হাজার কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করেছে। ১ জুন রামদেবকে গ্রেফতারের দাবিতে চিকিৎসকরা দেশ জুড়ে কালা দিবস পালন করেন। আজ গোটা বিশ্বের সাথে ভারতেও আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি অ্যালোপ্যাথিকে হাতিয়ার করে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে জীবন বিপন্ন করে করোনার মত ভয়ঙ্কর অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশের দুর্বল এবং ভেঙে পড়া সরকারি স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর মধ্যে রোগের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে সারা দেশে প্রায় ১২০০-রও বেশি ডাক্তারের মৃত্যু হয়েছে। জীবন দিয়েছেন আরও বহু স্বাস্থ্যকর্মী। এই পরিস্থিতিতে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানকে কালিমালিপ্ত করার জন্য বাবাজির এই দুরভিসন্ধিমূলক মন্তব্য অতিমারির বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াইকে দুর্বল করবে। ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং রোগীদের মনোবল ভেঙে দেবে। এটা অমার্জনীয় অপরাধ। কিন্তু এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতারা অদ্ভুত নীরবতা ও নিষ্ক্রিয়তা প্রদর্শন করছেন। যদিও চিকিৎসকদের সম্মিলিত প্রতিবাদের সামনে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন, যিনি নিজেও একজন অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক, বাবা রামদেবকে চিঠি লিখে এর জন্য দুঃখপ্রকাশ করার আবেদন জানিয়েছেন। রামদেব যথারীতি চিঠি লিখে কোনও রকমে দায়সারাভাবে দুঃখপ্রকাশ(!) করেছেন। আবার তারপরেই সাংবাদিকদের সামনে সদর্পে ঘোষণা করেছেন, ‘কারও বাবার ক্ষমতা নেই আমার কিছু করে’। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগছে কাদের শক্তিতে রামদেবের এই আস্ফালন সম্ভব হচ্ছে?
প্রায় কুড়ি বছর আগে হরিয়ানা রাজ্য থেকে আসা রামদেব তাঁর কেরিয়ার শুরু করেছিলেন একজন যোগাসনের প্রচারক হিসেবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যোগাসনের শিবির পরিচালনা করার মধ্য দিয়ে তিনি প্রচারের আলোয় আসেন এবং যোগপ্রেমী বহু মানুষ তার অনুগামী হন। শুরুতে উত্তরাখণ্ডে হরিদ্বারের কনখল অঞ্চলে পতঞ্জলি যোগাশ্রম স্থাপন ও পরবর্তীকালে যোগব্যায়ামের সাথে সাথে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা ও আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির শিল্পের উপরে নজর দেন। জনসাধারণের মধ্যে থাকা ধর্মীয় বিশ্বাসকে সুকৌশলে কাজে লাগিয়ে শেয়ার মার্কেটের মাধ্যমে প্রচুর টাকা তোলে তাঁর কোম্পানি। অচিরেই গড়ে ওঠে আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির শিল্প এবং আয়ুর্বেদ হাসপাতাল। এইভাবেই বাবা রামদেবের বিশাল অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে তথাকথিত যোগসাধনার মোড়কে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র হয়ে যায় তাঁর অর্থনৈতিক সাফল্যের অন্যতম সোপান। এক্ষেত্রে বলা দরকার, আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে আজকের দিনে আয়ুর্বেদ চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে যে গবেষণা এবং তার প্রয়োগ বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানে চলছে তার সাথে বাবাজির এই ব্যবসার কোনও সম্পর্ক নেই। বিজ্ঞানের সঙ্গে অবিজ্ঞানের মিশেল দেওয়া চটকদারি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আয়ুর্বেদিক ওষুধের থেকে বেশি হয়ে ওঠে প্রসাধন সামগ্রী ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্যের ব্যবসা। তাঁর মুনাফার অঙ্ক ক্রমশ বাড়তে থাকে। বর্তমানে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৪৩৪৫ কোটি টাকা। কিন্তু ২০১৫-‘১৬ সাল থেকে পতঞ্জলির মুনাফার পরিমাণ ক্রমশ কমছে। ২০১৫-‘১৬-তে বাৎসরিক মুনাফার পরিমাণ ১১৯০ কোটি টাকা থেকে কমতে কমতে ২০১৯-‘২০-তে দাঁড়ায় ২৪০.৭০ কোটি টাকা (সূত্রঃ এনডিটিভি ও গুগল সার্চ)। এমতাবস্থায় ‘অ্যালোপ্যাথি বনাম আয়ুর্বেদ শাস্ত্র’ এই বিতর্ক উসকে তোলা ছাড়া বাবা রামদেবের সামনে আর কোনও বিকল্প নেই। আর এই বিতর্ক যত চলতে থাকবে বিশেষত ইলেকট্রনিক ও সোস্যাল মিডিয়ায়, ততই রামদেবের সাথে তার উৎপাদিত সামগ্রী বিশেষত বাবাজি প্রচারিত করোনার প্রতিষেধক (!) ‘করোনিল’ প্রচারের আলোয় আসবে, বাড়বে বিক্রি। যদিও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের আয়ুষ মন্ত্রক পর্যন্ত করোনিল-কে ‘সহায়ক ঔষধি’ বললেও করোনার প্রতিষেধক বলতে সাহস করেনি। তা সত্তে্বও বাবা রামদেব বুক বাজিয়ে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে এটা বলে যাচ্ছেন। যদিও সংবাদে প্রকাশ, পতঞ্জলির আয়ুর্বেদ কারখানার একজন গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিক সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন, করোনিল তাকে বাঁচাতে পারেনি। অতি সম্প্রতি প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল সে দেশে করোনার প্রতিষেধক হিসেবে করোনিলকে বাতিল করে দিয়েছে।
পতঞ্জলি সংস্থার দ্বিতীয় পদাধিকারী আচার্য বালকৃষ্ণ কিছুদিন আগে গুরুতর অসুস্থ হয়ে দিল্লির ‘এইমস’ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, হরিদ্বারে বাবাজির আয়ুর্বেদ হাসপাতালে নয়। বাবাজি কথিত ‘নির্বোধ বিজ্ঞান’ অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতেই তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। রামদেব কিন্তু এসব বেমালুম চেপে যাচ্ছেন। এটা কি ভণ্ডামির চূড়ান্ত নিদর্শন নয়?
বাবা রামদেব কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ঘোষিত সমর্থক ও পরামর্শদাতা। সংঘ পরিবারের সাথেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা সর্বজনবিদিত। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে তিনি সরাসরি বিজেপির হয়ে প্রচার করেছেন। বর্তমানে অবশ্য তার প্রতিদানও তিনি পাচ্ছেন। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে তাঁর জিহাদ, সংঘ পরিবারের মতাদর্শের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নানা কারণে এ দেশে ভাববাদী, অধ্যাত্মবাদী ও বিজ্ঞানবিরোধী কূপমণ্ডুক ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন চিন্তার প্রভাব আজও থেকে গেছে। স্বাধীনতা আন্দোলনে আপসকামী নেতৃত্বেরই প্রাধান্য থাকায় নবজাগরণ ও স্বাধীনতা আন্দোলনে পার্থিব মানবতাবাদের অনুসারী এবং বিজ্ঞানসম্মত চিন্তার উত্তরাধিকারী আপসহীন ধারা সমাজে প্রধান হয়ে উঠতে পারেনি। নেতৃত্বের এই দুর্বলতার কারণে এ দেশে অধ্যাত্মবাদী, কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও বিজ্ঞানবিরোধী চিন্তা এবং মানসিকতা সমাজ মননে প্রভাব ও প্রাধান্য বিস্তার করে থাকে। স্বাধীনতার পর এই আপসকামী বুর্জোয়া শাসকরাই ক্ষমতা দখল করে এবং দেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা লিখলেও বাস্তবে তা কার্যকরী করতে দেয়নি। পরবর্তীকালে যত দিন গেছে শাসক শ্রেণি ক্রমশ ধর্মীয় অন্ধতা, গোঁড়ামি, কুসংস্কার এবং বিজ্ঞানবিরোধী চিন্তা ও কর্মের প্রসার ঘটাতে সাহায্য করেছে।
আরএসএস ও সংঘ পরিবারের মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ ও পরিচালিত বিজেপি কেন্দে্র ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের মদতে এর প্রভাব বহু গুণ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিটি কার্যকলাপ এবং বিশেষ করে বর্তমান জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০-এর বিভিন্ন দিককে পর্যালোচনা করলে এর সত্যতা বোঝা যাবে। ভারতীয় সংস্কৃতি এবং গৌরবোজ্জ্বল অতীতের প্রকৃত ইতিহাসকে চাপা দিয়ে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী ও গল্পকথাকেই ভারতের প্রাচীন জ্ঞান বলে চালানোর চেষ্টা চলছে। তাই তাঁরা গণেশের হাতির মাথাতে অতীত যুগে প্লাস্টিক সার্জারির অনুপম নিদর্শন খুঁজে পাচ্ছেন। গান্ধারীর শত পুত্রের জন্মের মধ্যে টেস্টটিউব বেবি, স্টেম সেল থিওরি এবং রামায়ণ-মহাভারতের কালে ইন্টারনেট, টিভি, গাইডেড মিসাইল, আধুনিক বিমান ইত্যাদির সন্ধান পাচ্ছেন। এমনকি বেদ-বেদান্ত ও উপনিষদের মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানের সমস্ত তত্ত্ব খুঁজে পাচ্ছেন। যদিও একসময় প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ডক্টর মেঘনাদ সাহা তাঁর আমলে এইসব দেখেশুনে বেদ এবং অন্যান্য শাস্ত্র তন্ন তন্ন করে ঘেঁটে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরেছিলেন। অন্ধতা দেখে রসিকতা করে মন্তব্য করেছিলেন, ‘সবই ব্যাদে আছে’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধিক রচনায় এই কুসংস্কারাচ্ছন্ন কূপমণ্ডুক ধারণাকে তীব্র কশাঘাত করেছেন। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় দেখিয়েছেন প্রাচীন ভারতে বিজ্ঞানচর্চা এবং পরবর্তীকালের কুসংস্কারাচ্ছন্ন শাস্ত্রচর্চাকে সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। তিনি বলেছিলেন, এ জন্যই শেষপর্যন্ত ভারতের মাটি বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে বন্ধ্যা হয়ে গেছে। কেন্দে্র বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের এই নবজাগরণের মনীষীদের শিক্ষাকে বাজে কাগজের ঝুড়িতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। তাদের মদতে কুসংস্কারকেই ভারতীয়ত্ব বলে প্রচার বহু গুণ বেড়েছে। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রশ্নেও তারা একই জিনিস করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী করোনা মোকাবিলায় যথাসময়ে কার্যকরী ও বিজ্ঞানসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার পরিবর্তে দেশের মানুষকে থালা, কাঁসরঘন্টা বাজাতে বলেছেন, ঘর অন্ধকার করে প্রদীপ জ্বালাতে বলেছেন, পুষ্পবৃষ্টি করতে বলেছেন। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই গোবর মেখে, গো-মূত্র খেয়ে করোনা তাড়ানোর মতো কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রয়াসে মানুষকে মাতানো হচ্ছে।
বর্তমান বিজেপি নেতৃত্ব ভাস্করাচার্য, আর্যভট্ট, চরক ও সুশ্রুতের গৌরবোজ্জ্বল প্রকৃত ইতিহাসের সাথে সত্য ও মিথ্যা জড়িয়ে উগ্র জাত্যাভিমান সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। একে তারা ‘ভারতীয় জ্ঞান পদ্ধতি’ (ইন্ডিয়ান নলেজ সিস্টেম) নামে অভিহিত করেছেন। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা যতটুকু এ দেশে চালু ছিল তাকেও ‘পাশ্চাত্য জ্ঞান ও শিক্ষা পদ্ধতি’ (ওয়েস্টার্ন নলেজ সিস্টেম) নাম দিয়ে বাতিল করতে চাইছেন। যদিও পূর্বতন সরকারগুলির শিক্ষানীতি ত্রুটিমুক্ত ছিল না, কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০-র দ্বারা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সুকৌশলে যুক্তিবাদী বৈজ্ঞানিক চিন্তা পদ্ধতির (ইতিপূর্বে যতটুকু গড়ে তোলার সুযোগ ছিল) পরিবর্তে অন্ধতা, গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও যুক্তিহীন অবৈজ্ঞানিক মানসিকতার প্রসার ঘটাতে চাইছেন। শুধু তাই নয়, বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকেই বিগত কয়েক বছর ধরে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে জনমানসকে তমসাচ্ছন্ন করার এই অপচেষ্টা সারা দেশে জারি আছে।
ফলে বাবা রামদেবের আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে বিষোদগার নিছক কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আরএসএস ও সংঘ পরিবারের সুপরিকল্পিত কৌশলের অন্যতম অঙ্গ। তাই সংকীর্ণ অর্থনৈতিক স্বার্থের পাশাপাশি পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতিকে কালিমালিপ্ত করার বাবা রামদেবের এই অপপ্রয়াসের বিরুদ্ধে দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষকে আজ এগিয়ে আসতে হবে।