উগ্র হিন্দুত্ববাদকে ভিত্তি করে সংখ্যালঘু-বিদ্বেষকে আরও তীব্র করার কাজে আবার নেমে পড়ল আরএসএস তথা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ। সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত দলীয় মুখপত্র পাঞ্চজন্য ও অর্গানাইজারকে সম্প্রতি যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তার বাক্যে বাক্যে ছড়িয়ে রয়েছে এই বিদ্বেষ, ইতিহাসের বিকৃতি আর অসত্য ভাষণ। তিনি বলেছেন, ‘‘মুসলিমরা এ দেশে নিরাপদ। হিন্দুদের মাঝে তাঁদের ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু তাঁদের নিজেদের মধ্যে আধিপত্যের ভাবনা, ফের এ দেশকে শাসন করার যে চিন্তাভাবনা রয়েছে, তা ছাড়তে হবে।”
প্রথমত, মুসলিমরা এ দেশে এক হাজারের বেশি বছর ধরে হিন্দুদের পাশাপাশি বাস করে আসছে এবং তা নিরাপদেই। তা হলে মুসলিমরা দেশে নিরাপদ কি না তা দেখার দায়িত্ব হঠাৎ আজ মোহন ভাগবতরা নিজেদের কাঁধে তুলে নিচ্ছেন কেন? সংখ্যালঘু হিসাবে মুসলিমরা তো বটেই, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকেরই নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র সে দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করলেই মুসলিম সহ সকলেই দেশে নিরাপদে থাকবেন। তার জন্য ভাগবতদের উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন নেই। হঠাৎ তাদের নিরাপত্তা নিয়ে মোহন ভাগবতদের অতিভাবনা স্বাভাবিক ভাবেই সন্দেহ জাগায়। বাস্তবে এ দেশে মুসলিমদের নিরাপত্তার কোনও হানি যদি ঘটে থাকে তবে তার জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ছড়ানো স্বয়ংসেবক সংঘের বিদ্বেষ এবং উস্কানিই।
মুসলিমদের মধ্যে আধিপত্যের ভাবনা, এ দেশকে পুনরায় শাসন করার ভাবনার যে অভিযোগ ভাগবত প্রকাশ্যে এনেছেন, তা তিনি কোথায় পেয়েছেন? বাস্তবে বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং তার পরবর্তী কয়েক দশক আরএসএস বিজেপি দেশজুড়ে যে উগ্র হিন্দুত্ববাদকে উস্কে তুলেছে এবং বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় বসার পর যা তুঙ্গে উঠেছে, যার পরিণামে সংখ্যালঘু মুসলিমরা বারবার আক্রান্ত হয়েছেন– তার দ্বারা হিন্দুত্ববাদীরাই বরং মুসলিমদের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
মুসলিমরা এ দেশে আধিপত্য কায়েম করতে চায় বা তারা এ দেশকে আবার শাসন করার চিন্তাভাবনা করছে, এমন এক কাল্পনিক অভিযোগ এনে হিন্দুধর্মালম্বী মানুষদের মনে ঘৃণা আতঙ্ক ভীতি ছড়িয়ে দিয়ে হিন্দুত্ববাদী মানসিকতার প্রভাব বাড়ানোই ভাগবতদের হীন উদ্দেশ্য। আর এই ভীতি তৈরি করতে পারলে তখন আবার তাঁরা ‘হিন্দুদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে’ স্লোগান তুলে হিন্দুত্ববাদের ছাতার তলায় তাদের সমবেত হওয়ার ডাক দেবেন। মোহন ভাগবতদের কাছে এই ঐক্যের আহ্বান আসলে হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষদের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটানো এবং তার মধ্যে দিয়ে হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করার প্রয়োজনেই।
ভাগবত বলেছেন, ‘‘গত হাজার বছর ধরে যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে হিন্দুসমাজ। অতীতে বিদেশি হানাদার আর এখন বিদেশি প্রভাব ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই চলতে থাকায় হিন্দু সমাজ জেগে উঠেছে। দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধের মধ্যে থাকায় হিন্দু সমাজে আগ্রাসী মনোভাব দেখা দিয়েছে।” এখানে ‘হিন্দু সমাজ’ কথাটি ভাগবত অত্যন্ত চালাকির সাথে ব্যবহার করেছেন। যেন হিন্দুধর্মের সব মানুষই তাঁদের সাথে একমত এবং তাঁদের অনুগামী। বাস্তবে হিন্দুধর্মাবলম্বী বেশির ভাগ মানুষই যে তাঁদের এই উগ্র হিন্দুত্ববাদকে এবং মুসলিম বিদ্বেষকে সমর্থন করেন না, তা ভাগবতরা ভালই জানেন। তা ছাড়া সংবিধান শাসিত তথা গণতান্ত্রিক দেশে ধর্মের ভিত্তিতে কোনও সমাজ হয় না। এখানে সমাজ একটাই, তা গণতান্ত্রিক সমাজ। গণতান্ত্রিক অধিকারগুলি দেশের মানুষ জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান ভাবে ভোগ করেন। এগুলি তাদের সাংবিধানিক অধিকার। ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সামাজিক চিন্তা বা অধিকার ভিত্তিক সামন্ততান্ত্রিক সমাজব্যবস্থাকে পিছনে ফেলেই সংবিধান শাসিত বর্তমান বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক সমাজের উদ্ভব। অথচ ভাগবতরা এখনও সেই পুরনো সামন্ততান্ত্রিক চিন্তাভাবনার জাবরই কেটে চলেছেন। ভাগবত হিন্দুসমাজের হাজার বছর ধরে যুদ্ধের কথা বলে আসলে ‘হিন্দুরা আক্রান্ত’, ‘হিন্দুরা বিপন্ন’ এমন সব মনগড়া, মিথ্যা ভাবনা ছড়িয়ে দিতে চান এবং এই চেষ্টা আরএসএস শুরু থেকেই করে আসছে।
ভাগবত তাঁর সাক্ষাৎকারে অতীতে বিদেশি হানাদার আর এখন বিদেশি প্রভাব ও বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে হিন্দুদের জেগে ওঠার কথা বলেছেন। এখানে হিন্দু বলতে যদি সংঘ নেতৃত্বাধীন হিন্দুত্ববাদীদের কথাও ধরা যায় তবে তাঁদের কোন লড়াইয়ের কথা ভাগবত বলছেন? সংঘের জন্ম ১৯২৫ সালে। তখন ব্রিটিশ শাসন। দেশজুড়ে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। লক্ষ লক্ষ মানুষ আন্দোলনে সামিল। জেলে যাচ্ছে। দ্বীপান্তরে যাচ্ছে। ফাঁসিতে যাচ্ছে। আরএসএস কর্মীরা তখন কী করেছে? স্বাধীনতা আন্দোলনে আরএসএস যোগই দেয়নি। এমনকি আরএসএস নেতারা ব্রিটিশ বিরোধিতাকে স্বাধীনতা আন্দোলন মনেই করতেন না। শুরু থেকেই তাঁদের একমাত্র লক্ষ্য মুসলিম বিরোধিতা। ১৯৪২-এ ভারত ছাড়ো আন্দোলনে দেশ যখন উত্তাল হয়েছে তখনও আরএসএস সন্তর্পণে সেই আন্দোলন থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে। স্বাভাবিক ভাবেই ব্রিটিশ শাসকরা আরএসএসের এই ভূমিকার প্রশংসা করেছে এবং একই সঙ্গে তাদের এই ভূমিকাকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন দমনে ব্যবহার করেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র যখন বাইরে থেকে আজাদ হিন্দ বাহিনী নিয়ে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, যখন তিনি দেশের অভ্যন্তরেও দেশবাসীকে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছেন, তখন আরএসএস নেতারা দেশের যুবকদের ব্রিটিশ বাহিনীতে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান করছেন এবং স্থানে স্থানে রিক্রুটমেন্ট কাউন্টার খুলেছেন। তাই বিদেশিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথাটি ভাগবতের মুখে এক চরম মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়। এর দ্বারা একই সঙ্গে তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁদের লজ্জাজনক ভূমিকাটিকেও আড়াল করতে চেয়েছেন।
আরও অতীতে যখন গ্রিক থেকে পাঠান সব বিদেশি শক্তিরা ভারত ভূখণ্ড আক্রমণ করেছে তখনও কি দেশে হিন্দু হিসাবে কোনও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ তারা ছিল? আক্রান্ত রাজারা যে যেমন আক্রান্ত হয়েছেন সেই মতো নিজ সাম্রাজ্য রক্ষার জন্যই নিজেদের মতো করে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন– হিন্দু হিসাবে নয়। হিন্দু রাজারা পরস্পরের বিরুদ্ধে বহু লড়াই করেছেন। মুঘলদের সেনাপতিদের মধ্যেও ছিলেন বিশিষ্ট হিন্দুরা। আবার শিবাজি কিংবা রানা প্রতাপের বাহিনীতে ছিলেন মুসলিমরা। তা ছাড়া ব্রিটিশের ভারত বিজয় কি এক অংশের দেশীয় রাজাদের সহযোগিতাতেই হয়নি? ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন সিপাহি বিদ্রোহ দমন করেছিল, তখন তার তিন লক্ষ সেনার মধ্যে মাত্র ২৬ হাজার ছিল ব্রিটিশ সৈন্য। বাকি দু’লক্ষ চুয়াত্তর হাজার দেশীয় সৈন্য। আসলে ভাগবত সাহেব যে ইতিহাসের উল্লেখ করেছেন তা সম্পূর্ণই তাঁর মনগড়া, বিকৃত– বাস্তবের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক নেই। আর এখন বিদেশি প্রভাব বা বিদেশি ষড়যন্ত্রের যে উল্লেখ তিনি করেছেন সেটা কী? পাকিস্তানের আক্রমণ? চিনের আক্রমণ? তা যদি বাস্তবে কিছু থেকেই থাকে তবে তা প্রতিরোধ করার জন্য তো দেশে মিলিটারি, প্যারা মিলিটারি, পুলিশ, গোয়েন্দা বাহিনী জনগণের দেওয়া করের টাকায় তৈরি হয়েছে। ভাগবত সাহেবের এতে করণীয় কিছুই নেই। আসলে দেশের মানুষের কাছে নিজেদের দেশপ্রেমিক প্রমাণ করতে খুবই অসুবিধে হচ্ছে তাঁদের। তাই এই ছদ্ম উদ্বেগ।
ভাগবত বলেছেন, দীর্ঘ সময় ধরে এমন যুদ্ধের মধ্যে থাকাতেই হিন্দু সমাজে আগ্রাসী মনোভাব দেখা দিয়েছে। স্পষ্টতই দীর্ঘ সময় ধরে হিন্দু সমাজের যুদ্ধের মধ্যে থাকার কথাটি তাঁর সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত। আসলে এখানে যে কাল্পনিক শত্রুকে তিনি খাড়া করেছেন তা এ দেশে মুসলিমরা ছাড়া আর কেউ নয়। তাঁর তথাকথিত ‘হিন্দু সমাজের’ যুদ্ধটি আসলে মুসলিমদের বিরুদ্ধেই। এই আগ্রাসী মনোভাবই দেশের মানুষ গত তিন দশক ধরে আরএসএস-বিজেপি বাহিনীর আচরণে দেখছে। বিজেপি কেন্দ্রে ক্ষমতায় বসার পর গত প্রায় এক দশক ধরে সংখ্যালঘুদের উপর হিন্দুত্ববাদীদের এই আগ্রাসী মনোভাব আরও বেড়েছে। মুসলিমরা বারবার আক্রান্ত হয়েছে, পরিকল্পিত ভাবে দাঙ্গা বাধানো হয়েছে। কখনও গোমাংস রাখার অভিযোগে, কখনও গোরু পাচারের অভিযোগে, কখনও লাভ জেহাদের নামে তাদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে। আসলে এই তথাকথিত যুদ্ধের কথাটি যদি মানুষকে দিয়ে গ্রহণ করিয়ে নেওয়া যায় তবে এই আক্রমণ, দাঙ্গা, হত্যা, ধর্ষণ, বিচার পাওয়ার সুযোগ কেড়ে নেওয়ার মতো বিষয়গুলিকেও যুক্তিসঙ্গত করে তোলা যায়।
ভাগবত তাঁর বক্তব্যে জনসংখ্যার ভারসাম্যহীনতার উল্লেখ করে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। আরএসএস শুরু থেকেই এ কথা প্রচার করে যে, মুসলমানদের জন্মহার এত বেশি যে হিন্দুরা একদিন এ দেশে সংখ্যালঘুতে পরিণত হবে। অথচ বাস্তব পরিসংখ্যান বলছে, গত ৩০ বছরে বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত জন্মহার হ্রাস পেয়েছে মুসলমানদের মধ্যেই। মুসলমানদের মধ্যে জন্মহার ১৯৯২-‘৯৩ এবং ২০১৯-‘২১ সালের মধ্যে ৪.৪ থেকে ২.৪-এ নেমে এসেছে। একই সময়কালে হিন্দুদের মধ্যে জন্মহার ৩.৩ থেকে কমে ১.৯ হয়েছে। অর্থাৎ একই সময়কালে মুসলমানদের মধ্যে জন্মহার হ্রাস পেয়েছে ৪৬.৫ শতাংশ, হিন্দুদের ক্ষেত্রে ৪১.২ শতাংশ। পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, দুই ধর্মের মধ্যে জন্মহারের পার্থক্য কমে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই প্রক্রিয়া চলতে থাকলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে জন্মহারের পার্থক্য থাকবে না (আনন্দবাজার পত্রিকায় শাশ্বত ঘোষের নিবন্ধ, ২১ জানুয়ারি, ‘২৩)। এ সব কথা আরএসএস-বিজেপি নেতারা জানেন না তা নয়। তবুও তাঁরা যে এ সব মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছেন, তার কারণ এই মিথ্যাচার তাঁদের রাজনীতির পুঁজি।
সংঘ-প্রধান মোহন ভাগবত এখন নির্দেশ দিচ্ছেন মুসলিমরা কী ভাবে, কেমন করে এ দেশে বসবাস করবেন। তাঁর নির্দেশ, নিজেদের সমস্ত অধিকার বিসর্জন দিয়ে, হিন্দুদের অধীনতা মেনে নিয়ে মুসলিমদের এ দেশে বাস করতে হবে। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার, আইনের শাসনের গোড়ার কথাগুলিকেই ভাগবত সাহেব পদদলিত করছেন। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে কেউই অন্যদের সম্পর্কে এমন তালিবানি ফতোয়া দিতে পারে না। তা হলে ভাগবতরা আইন-প্রশাসন সব কিছুকে অগ্রাহ্য করে এটা পারছেন কী করে? সংবিধান বিরোধিতার কারণে, আইন ভঙ্গের কারণে তাঁর তো শাস্তি হওয়ার কথা! আসলে এ সবই তাঁরা করে যাচ্ছেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মদতে। সংঘ যতই এমন বিদ্বেষের বিষবাষ্প সমাজে ছড়াবে ততই সমাজে মেরুকরণ ঘটবে। ততই তা বিজেপির হিন্দু ভোটব্যাঙ্ক তৈরিতে সাহায্য করবে এবং দেশ জুড়ে জনবিরোধী শাসনের কারণে ক্ষোভের মুখে পড়া বিজেপির সুবিধা হবে আসন্ন নির্বাচনগুলিতে। এ কথা আজ স্পষ্ট যে গত আট বছরের শাসনে বিজেপি জনগণকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি, প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি।
বিজেপি শাসনে মূল্যবৃদ্ধি চরম আকার নিয়েছে। বেকারির হার গত পাঁচ দশকে সর্বোচ্চ হয়েছে। মহিলাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ছাপিয়ে গেছে। দেশটা পুঁজিপতিদের অবাধ লুটের মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় নির্বাচনে জিততে হলে ধর্মীয় মেরুকরণ ছাড়া বিজেপির কাছে আর কোনও রাস্তা খোলা নেই। সামনেই বেশ কয়েকটি রাজ্যে নির্বাচন, তারপর লোকসভা নির্বাচন। তারই প্রস্তুতি প্রধানমন্ত্রীর রামমন্দির উদ্বোধন, অমিত শাহের চব্বিশের আগেই রামমন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ হওয়ার ঘোষণা এবং ভাগবতের এই বিষোদগার। প্রধানমন্ত্রী থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপি থেকে আরএসএস– ভোটের লক্ষে্য এই বিষচক্রটি পূর্ণ হল।
কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ কি বিজেপি-সংঘের এই ষড়যন্তে্রর ফাঁদে পা দেবে? এ কথা তো মানুষের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই স্পষ্ট যে, সমাজে যতই মেরুকরণ তীব্র হয়, সাম্প্রদায়িক পরিবেশ ততই বেড়ে ওঠে, আর জীবনের, জীবিকার সমস্যাগুলি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি পিছনে চলে যায়। খেটে খাওয়া মানুষের বাঁচার আন্দোলন দুর্বল হয়। তাই মানুষের নিজের স্বার্থেই শাসক শ্রেণির এই জঘন্য ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে হবে। দেশের গণতান্ত্রিক চেতনার মানুষ যাঁরা, শিক্ষিত সচেতন মানুষ যাঁরা তাঁদেরও এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। ভুললে চলবে না, শিক্ষিত হিন্দুদের একটা অংশ যদি শিক্ষার বড়াই করতে করতেই আরএসএস-বিজেপির এই হিন্দুত্ববাদের জালে না জড়াতেন, যদি তাদের পাতা ফাঁদে না পা দিতেন তবে এত সহজে তারা এ কাজ করতে পারত না। তাই আজ সময় এসেছে সাম্প্রদায়িকতা, হিংসা, বিদ্বেষের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পক্ষে সব স্তরের মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।