মজুরি বৃদ্ধি, ছুটি সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ পরিবেশের দাবিতে অনলাইন পণ্য ডেলিভারি কোম্পানি অ্যামাজনের কর্মীরা আমেরিকার নানা শহরে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ডিসেম্বর জুড়ে। ২.৩ ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদ-বৃদ্ধি করে খুচরো ব্যবসায়ীদের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে অ্যামাজন, অথচ কর্মীদের ন্যায্য প্রাপ্য নিয়ে প্রবল টালবাহানা করছে কর্তৃপক্ষ। চূড়ান্ত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন কর্মীরা। আর এক কোম্পানি, আন্তর্জাতিক কফিশপ চেন স্টারবাক্সের বিভিন্ন বিপণিতেও চলছে কর্মী-বিক্ষোভ। দুটি সংস্থার কর্মীরা কর্তৃপক্ষকে ১৫ ডিসেম্বরের সময়সীমা দিয়ে বলেছিল, তার মধ্যেই দাবি মানতে হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ না মানায় এ দিন প্রবল বিক্ষোভে ফেটে পড়েন কর্মীরা। ১৯ ডিসেম্বর থেকে লাগাতার ৫ দিনের বিক্ষোভ-ধর্মঘটে কোম্পানির সব কাজ অচল করে দেন তাঁরা।
বিমান কারখানার শ্রমিক, বন্দর শ্রমিক, পরিবহণ শ্রমিক, ডেলিভারি ড্রাইভার, হোটেলের কর্মচারী সহ নানা অংশের শ্রমিকরা গিগ-শ্রমিকদের এই ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাতে যোগ দেন। তাঁরা বলেন, মজুরি বৃদ্ধি, উৎসবের মরশুমে ছুটির দাবি তো আমাদেরও।ডেলিভারি ড্রাইভাররা কর্মী হিসাবে স্বীকৃতির দাবিতে এই ধর্মঘটে সামিল হন। পেশাগত নানা সমস্যা সমাধানের দাবিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের ইউনিয়নও যোগ দেয় ধর্মঘটে। ছাত্র-যুবক-মহিলারাও সামিল হন তাতে।
তীব্র বেতন বৈষম্য ও মালিকি শোষণের বিরুদ্ধে অ্যামাজন ও স্টারবাক্সের কর্মীদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বিভিন্ন শহরের রাস্তায় রাস্তায়। সিয়াটলে সংস্থা দুটির সদর দপ্তর ছাড়াও দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া, সান ফ্রান্সিসকো, নিউইয়র্ক সিটি, আটলান্টা অ্যান্ড স্কোকি, ইলিনয়িস– সাতটা ডেলিভারি স্টেশন শ্রমিকরা ধর্মঘট করে স্তব্ধ করে দেন। এ ছাড়াও কলম্বাস, ডেনভার ও পিটসবার্গ শহরেও ধর্মঘট ছড়িয়ে পড়ে। ধর্মঘটকে সমর্থন করে শহরগুলিতে অ্যামাজনের পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে এক মার্কিন নাগরিক বলেন, মূল্যবৃদ্ধির এই বাজারে শ্রমিকদের মজুরি এতটুকুও বাড়ায়নি কর্তৃপক্ষ। এ চলতে পারে না। ২১ ডিসেম্বর নিউইয়র্কে অ্যামাজনের একটি কেন্দ্রের শ্রমিকদের বিক্ষোভ আটকাতে সেখানকার নিকাশির জল ছুঁড়ে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা চালায় পুলিশ।
বাস্তবে কোভিডের সময় থেকে নানা অজুহাতে শ্রমিকদের মজুরি সংকোচনের পথে নেমেছে সংস্থা দুটির কর্তৃপক্ষ। শ্রমআইন লঙ্ঘন করছে যথেচ্ছ ভাবে, ইউনিয়ন করার অধিকার খর্ব করছে। অধিকার রক্ষার জন্য শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে মালিকের তীব্র শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ভারত কিংবা আমেরিকা– মালিকের মুনাফা যত বাড়ে, শ্রমিকের মজুরি তত কমে। কয়েক দিন আগেই ফিকি এবং কোয়েসের রিপোর্টে প্রকাশ, ২০০৯ থেকে ২০২৪– এই পনেরো বছরে পুঁজিপতিদের সর্বোচ্চ মুনাফা হয়েছে ভারতে। আমেরিকাতেও অ্যামাজন ও স্টারবাকসের মালিকরা হাজার হাজার কোটি ডলার মুনাফা করছে কর্মীদের ন্যায্য মজুরি না দিয়ে। শ্রমিক-মুক্তির দিশারি কার্ল মার্ক্স বলেছিলেন, মালিকের মুনাফা যত বাড়ে, সেই অনুপাতে শ্রমিকের মজুরি কমে যায়। কারণ শ্রমিকের শ্রম শোষণ করেই মালিকের মুনাফা হয়। তিনি আরও দেখিয়েছেন, মালিকের মুনাফা বেড়ে যাওয়ার ফলেই শ্রমিকের মজুরি কমে যায়। কিন্তু মালিকের কাছে অনুনয়-বিনয় করে কি শ্রমিকদের দাবি পূরণ হবে? শ্রমিকদের অভিজ্ঞতা, সে জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে– সে ‘উন্নত’ বিশ্বের দেশ আমেরিকা বা ‘উন্নয়নশীল’ দেশ ভারত হোক। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া শ্রমিকরা দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া শ্রমিকরা জানে– লড়াই করেই দাবি আদায় করতে হবে। এ ছাড়া দাবি আদায়ের অন্য আর কোনও সহজ রাস্তা নেই।