নিরপরাধ নাগরিকদের গুলি করে মেরে তাদের দেহ গোপনে নিয়ে পালাচ্ছে সেই দেশেরই সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী। খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা তাড়া করে সেই গাড়ি ধরলে দেখা গেল একটি গাড়ির মেঝেতে ত্রিপলের নিচে চাপা দেওয়া রয়েছে ৬টি নিথর দেহ। তার উপর বসে আছে সৈনিকরা। দেহগুলির বেশিরভাগ জামাকাপড় খুলে নেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসীরা বুঝলেন পোষাক পাল্টে, হাতে অস্ত্র ধরিয়ে নিহতদের সন্ত্রাসবাদী জঙ্গি হিসাবে সাজানোর চেষ্টা চলছে। প্রতিবাদ করতেই চলল অরও এক ঝাঁক গুলি। লুটিয়ে পড়লেন আরও ৭ জন গ্রামবাসী, আহত আরও বহু। দুই আহত গ্রামবাসীকে নিয়ে পালিয়ে গেল সেনার গাড়িগুলি (টাইমস অফ ইন্ডিয়া, ১০ ডিসেম্বর ২০২১)।
এতদিনে জানা হয়ে গেছে, পৃথিবীর কোনও অন্ধকারময় প্রান্তের, কোনও স্বৈরাচারী বলে পরিচিত দেশে নয়, এমনটা ঘটেছে দুনিয়ার সর্ববৃহৎ ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্ট্র বলে দাবি করা ভারতের মাটিতে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন, গ্রামবাসীরা সেনার নির্দেশে গাড়ি থামায়নি বলেই তারা গুলি চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করেছে। কোনও সভ্য দেশের সরকার তার নাগরিকদের হত্যাকাণ্ডের এমন নির্বিকার সাফাই দিতে পারে? পারলে সে দেশের সরকারকে গণতান্ত্রিক বলা যায়? গণতন্তে্রর প্রতি সামান্যতম সম্মান থাকলে কিপ্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই হত্যাকাণ্ডের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতেন না? ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মী এবং অফিসারদের কঠিন শাস্তির প্রতিশ্রুতি সরকার দিত না? তৎক্ষণাৎ নির্বিচার হত্যার ছাড়পত্র আর্মড ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ারস অ্যাক্ট (আফস্পা) সর্বত্র বাতিল করার ঘোষণা করত না? তদন্তের জন্য দেরি না করে নিহত এবং আহতদের পরিবারের পাশে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও সাহায্য নিয়ে কি কেন্দ্র এবং রাজ্য দাঁড়াত না?আরও প্রশ্ন উঠছে, দেশের মানুষের পয়সায় পোষা নিরাপত্তা বাহিনী এ ভাবে নাগরিকদের নির্বিচার হত্যা করার পরেও কি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নাগাল্যান্ডে তাঁর শরিক দলের মুখ্যমন্ত্রীর গদি ধরে রাখার কোনও নৈতিক অধিকার থাকে?
প্যারা কমান্ডোর বিশেষ সুরক্ষা বাহিনী আসাম থেকে ভুয়ো নম্বরপ্লেট লাগানো একাধিক গাড়িতে চড়ে ঢুকেছিল নাগাল্যান্ডে। সেখানে মন জেলার ওটিং গ্রামের কাছে তারা পাহাড় আর ঝোপের আড়ালে ওত পেতে ছিল। ঘরমুখী খনি শ্রমিকদের গাড়ি দেখেই কোনও হুঁশিয়ারি ছাড়াই তারা নিরস্ত্র শ্রমিকদের উপর গুলিবৃষ্টি শুরু করে। তাদের চেষ্টা ছিল নিহত শ্রমিকদের জঙ্গি সাজিয়ে ছবি তুলে কৃতিত্ব নেবে, পুরস্কার পাবে। কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকারও ‘শান্তি রক্ষার’ বড়াই করে সরকারের সব ব্যর্থতাকে জনমানস থেকে আড়াল করতে পারবে। সরকার প্রচার করছে, বাহিনী নাকি অরুণাচল থেকে সন্ত্রাসবাদীদের আসার খবর পেয়েছিল! এখন তারা গোয়েন্দা ব্যর্থতার সাফাই গাইছে। পেগাসাসের মতো স্পাইওয়্যার কিনে সরকারের বিরোধী, সমালোচক কিংবা সাংবাদিকদের উপর গোয়েন্দাগিরির জন্য সরকারের দক্ষতা অসীম! অথচ জনগণের কষ্টার্জিত টাকায় গড়ে ওঠা রাজকোষের শত শত কোটি টাকা দিয়ে পোষা গোয়েন্দা বাহিনী শুধু শাসকদলের হয়ে বিরোধীদের ভয় দেখানো, দল ভাঙানোর কাজ ছাড়া আর কোন কাজটা এ দেশে করছে? আরও প্রশ্ন, গোয়েন্দাদের ভুলের অজুহাতে শুধুমাত্র সন্দেহের বশে সেনাবাহিনী নির্বিচার নরহত্যা করতে পারে?
আফস্পার বলে বলীয়ান সেনাকর্মীরা জানত, কোনও শাস্তি দূরে থাক, তাদের কেশাগ্রও কেউ স্পর্শ করতে পারবে না। কারণ, কোনও এলাকায় আফস্পা জারি থাকলে নিরাপত্তাবাহিনী কেবলমাত্র সন্দেহের বশেই হত্যার জন্য গুলিও চালাতে পারে। শুধু সন্দেহের বশে যে কোনও বাড়িতে বিনা ওয়ারেন্টে সার্চ করা, কোনও বাড়ি-ঘর ভেঙে দেওয়া, যখন তখন যে কোনও ব্যক্তিকে কোনও অভিযোগ না জানিয়েই গ্রেপ্তার করতে পারে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে কোনও আদালতের সামনে হাজির করানোর দায়ও তাদের নেই। শত অন্যায় করলেও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনও আদালতে অভিযোগ আনা যাবে না। যদিও আগে সাবধান করা এবং সন্দেহের যথেষ্ট কারণ থাকার শর্তটারও উল্লেখ আছে। কিন্তু তা মানতেই হবে, এমন কোনও কঠোর নির্দেশ নেই! ফলেহাতে যখন বন্দুক এবং অসীম ক্ষমতা, আর সামনে জনজাতিভুক্ত দরিদ্র মানুষ কিংবা দলিত অথবা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অসহায় মানুষ থাকে, যাদের প্রতিরোধের শক্তি প্রায় নেই, তখন বীরত্ব ফলাতে দোষ কী! মনে রাখা দরকার কেন্দ্রীয় বিজেপি সরকার নাগাল্যান্ডে তাদের জোট সরকারের সাহায্যে অতি সম্প্রতি আফস্পার এক্তিয়ার নতুন করে এক বছরের জন্য বাড়িয়েছে। গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের আশঙ্কা, নাগাল্যান্ডের এই হত্যাকাণ্ড গোটা উত্তরপূর্ব ভারতেই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শক্তি বাড়তে সাহায্য করবে। নাগাল্যান্ডের মানুষের জন্য শান্তি প্রক্রিয়া চরম ধাক্কা খাবে।
অফস্পার সাহায্যে ভুয়ো সংঘর্ষ এবং মিথ্যা অজুহাতে গ্রেপ্তারের ফলে কত মানুষের জীবন শেষ হয়ে গেছে তার সঠিক হিসাব সরকার কোনও দিন দেয়নি। তাতেও ১৯৭৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে শুধুমাত্র মণিপুরেই আফস্পার বলে ১ হাজার ৫২৮টি ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল। আফস্পা আইনটি এসেছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশিক শাসকদের উত্তরাধিকার বেয়ে। ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনকে ভাঙতে ব্রিটিশ সরকারের চারটি অর্ডিন্যান্সকে হুবহু নকল করে স্বাধীন ভারতে কংগ্রেস সরকার ১৯৫৮ সালে তৎকালীন আসামের অন্তর্গত নাগা পাহাড় ও অন্যান্য অংশে অশান্তির অজুহাতে আর্মড ফোর্সেস স্পেশ্যাল পাওয়ারস (আসাম অ্যান্ড মণিপুর) অ্যাক্ট নিয়ে আসে। পরবর্তীকালে আসাম অ্যান্ড মণিপুর কথাটা তুলে দেওয়া হয় এবং তা উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যেই প্রসারিত হয়। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৭ একই ধরনের আইন চালু ছিল পাঞ্জাবে। ১৯৯০ থেকে চলছে জম্মু-কাশ্মীরে।
কেন্দ্রীয় সরকার নিযুক্ত বিচারপতি জীবন রেড্ডির নেতৃত্বে গঠিত কমিশন ২০০৫ সালে আফস্পা সম্বন্ধে বলেছিল, ‘এই আইন হল ঘৃণা, দমন-পীড়ন, স্বেচ্ছাচারের প্রতীক।’ কমিশন আফস্পা বাতিলের সুপারিশ করে। কিন্তু ২০১৫ সালে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার এই সুপারিশ বাতিল করে দেয়। ২০০০ সালে মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকার মালোম শহরে ১০ জন সাধারণ মানুষকে হত্যা করে আসাম রাইফেলস নামক আধা-সামরিক বাহিনী। আফস্পা প্রত্যাহারের দাবিতে অনশন শুরু করেন ইরম শর্মিলা চানু। যা ১৬ বছর একটানা চলেছে। ২০০৪ সালে প্রতিবাদী মহিলা থাংজাম মনোরমাকে ধর্ষণ করে হত্যা করে এই একই বাহিনী। মণিপুরের ৩০ জন মহিলা নগ্ন হয়ে আসাম রাইফেলসের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে বলেন, আমরা মনোরমার মা, এস ভারতীয় সেনা, আমাদেরও ধর্ষণ করার সাহস দেখাও। এই হত্যাকাণ্ডের ১০ বছর পর সুপ্রিম কোর্ট মনোরমার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিলেও কোনও দোষীকে শাস্তি দিতে পারেনি। বিচারপতি সন্তোষ হেগড়ের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের কমিশনও বলে– আফস্পা বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদ রুখতে ব্যর্থ। কমিশনের নির্দেশ সত্ত্বেও ভুয়ো সংঘর্ষের মামলায় বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) ৯ বছর কালক্ষেপ করে ২০১৮ সালে ১২ বছরের কিশোর আজাদ খানের হত্যার জন্য মেজর বিজয় সিং বালহারাকে দোষী সাব্যস্ত করে। কিন্তু দোষী মেজরের কোনও শাস্তি দূরে থাক বিচার শুরুই করা হয়নি। এই কমিশনের নির্দেশে সিট ৮৫ জন নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়ে ৩৯টি মামলায় আসাম রাইফেলস সহ কম্যান্ডো বাহিনীর ১০০ জন কর্মী-অফিসারকে দায়ী করে। কিন্তু এদের শাস্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আফস্পা। যদিও ২০১৬ সালেই সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বলেছে নিরাপত্তা বাহিনীরআফস্পা প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা নিরঙ্কুশ হতে পারে না। নাগরিকের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতার সংবিধান প্রদত্ত অধিকারকে তা লঙ্ঘন করতে পারে না। আফস্পার বলে হত্যা, ধর্ষেণর মতো অপরাধেও কোনও শাস্তি হবে না, এই ব্যবস্থার পরিবর্তনের কথা বলে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু মানবে কে? আদালত পুঁজিপতি শ্রেণির অধিকার রক্ষার রায় দিলে সরকার ব্যগ্র হয়ে ওঠে তা কাজে লাগাতে। আর সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষার কথা কখনও যদি আদালত বলে, সে ক্ষেত্রে সরকার তা বাস্তবায়নের কোনও দায় অনুভব করে না, বুর্জোয়া গণতন্তে্র এটাই আজ স্বাভাবিক!
কংগ্রেস সরকার স্বাধীনতার পর থেকেই বিচ্ছিন্নতাবাদরোখার নামে উত্তর-পূর্ব ভারত এবং কাশ্মীর জুড়ে যে কোনও প্রতিবাদ ও বিরোধী কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখতে আফস্পাকে কাজে লাগিয়েছে। একই সাথে সারা দেশেই তারা নানা দমনমূলক আইন এনে গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিসরকে ক্রমাগত সংকুচিত করে গেছে। বিজেপি কেন্দ্রীয় ক্ষমতায় বসার পর এই দমন পীড়নকেই ‘গণতান্ত্রিক’ রাষ্টে্রর প্রতীকে পরিণত করেছে। তাই কা¬ীরে সেনার জিপের বনেটে এক সাধারণ নাগরিককে বেঁধে ঘোরানোর মতো জঘন্য কাজ করেও পুরস্কার পেয়েছেন সামরিক অফিসার। সদ্য প্রয়াত ভারতীয় সেনাপ্রধান কা¬ীরে জঙ্গি সন্দেহ হলেই গণপিটুনিতে হত্যার দাওয়াই বাতলেছিলেন। সরকার এর কোনও প্রতিবাদ করেনি। সম্প্রতি কাশ্মীরে মানবঢাল হিসাবে দুই নিরপরাধ নাগরিককে ব্যবহার করে সেনাবাহিনী তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। মানুষের তীব্র প্রতিবাদের সামনে দায়সারা ভুল স্বীকার ছাড়া সরকার এবং সেনা কিছুই করেনি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা পুলিশ অ্যাকাডেমির অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন, নাগরিক সমাজকে শত্রু হিসাবে গণ্য করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১২ অক্টোবর জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের অনুষ্ঠানে বলেছেন, মানবাধিকার নিয়ে যারা সরকারের সমালোচনা করে তারা দেশের ক্ষতি করছে। তিনি মানবাধিকার বিষয়টিকেই ‘সরকার বিরোধী রাজনীতির লেন্স দিয়ে দেখা’ ব্যাপার বলেছেন। এই মুহূর্তে সারা ভারতে যে পরিমাণ মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, প্রতিবাদী সাধারণ মানুষ, ছাত্র, পরিবেশ কর্মী সহ নানা স্তরের প্রতিবাদীদের উপর দেশদ্রোহের অভিযোগ নির্বিচারে লাগিয়ে অসংখ্য মামলা করেছে সরকার, বহুজনকে মিথ্যা অভিযোগে জেলে ভরে রেখেছে, এতেই স্পষ্ট কেন্দ্রীয় সরকার গণতান্ত্রিক অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার, মানবাধিকারকে কী চোখে দেখে! বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, আসামে বিচারের দায় প্রায় পুরোপুরি বর্তেছে পুলিশের উপরেই। বিচার দূরে থাক, কারও গায়ে একটা অপরাধী তকমা লাগিয়ে দেওয়া হলেই ওই সব রাজ্যে পুলিশ যে কোনও মানুষকে গুলি করে মারার অধিকার পেয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে গণতন্তে্রর ঠাটবাট হিসাবে সংসদীয় ব্যবস্থা যতটুকু টিকে আছে সেই সংসদেও কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করার তোয়াক্কাই করছে না বিজেপি সরকার। সংসদীয় গণতন্তে্রর টিকে থাকা সামান্য খোলসটাও আজ স্বৈরাচারের দাপটে জীর্ণ।
দেশভক্তির নামে আজ সশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনীকেই দেশের ত্রাতা হিসাবে তুলে ধরছে সরকার। যুক্তি দিচ্ছে নির্বিচার দমনে এতটুকু ছাড় দিলেই নাকি বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথা তুলবে। অথচ ১৯৫৮ থেকে শুরু করে ৬৩ বছর ধরে যথেচ্ছ হত্যার আইন চালু থেকেও উত্তব-পূর্বে বিচ্ছিন্নতাবাদকে নির্মূল করা যায়নি। কাশ্মীরে অবর্ণনীয় দমন পীড়ন চালিয়ে, বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়েও তা হয়নি। কারণ অস্ত্রের জোরে, সামরিক তাকতে এ কাজ কোনও দিনই হওয়ার নয়। নানা উপজাতি, নানা ভাষাভাষী অধ্যুষিত প্রান্তিক এলাকায় বঞ্চিত, অবহেলিত মানুষের জীবন-যন্ত্রণা লাঘব করতে স্বাধীনতার ৭৫ বছরেও শাসকরা নজর দেয়নি। ফলে বহু সঙ্গত কারণেই এই সমস্ত এলাকায় মানুষের ক্ষোভ জন্মায়। শাসকদের আচরণই তাদের বিচ্ছিন্নতার বোধ বাড়ায়। তার সুযোগ নেয় কিছু ধুরন্ধর শক্তি। এই সমস্যা নিরসনে প্রয়োজন দেশের সরকার এবং প্রশাসকদের জনমুখী দৃষ্টিভঙ্গি। মালিক শ্রেণির সেবাদাস শাসকদের কাছে তা অসম্ভব। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যা সমাধানে অপারগ বুর্জোয়া ব্যবস্থার রক্ষকরা একাজ করতে পারে না। এছাড়াও তারা সব সময়েই চায় বুর্জোয়া রাষ্ট্রের দমনপীড়নের হাতিয়ার হিসাবে নিরপত্তাবাহিনীগুলির নখ-দাঁতে বেশি বেশি করে শান দিয়ে তাদের সাহায্যে জনগণকে অবদমিত করে রাখতে। বহু ক্ষেত্রে বরং বিচ্ছিন্নতাবাদ, সন্ত্রাসবাদকে সরকার বাড়তেই দেয়, যাতে পুঁজিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভকে বিপথগামী করা যায়। একই সাথে তা দেখিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর শক্তি বাড়ানো যায় এবং পুঁজিপতিদের অস্ত্র ব্যবসার রমরমা আরও বাড়তে পারে।
নাগাল্যান্ডের হত্যাকাণ্ড আজ সারা দেশের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে এই বুর্জোয়া রাষ্ট্রব্যবস্থায় জনগণের জীবনের দাম শাসকের কাছে কতটুকু? গণতন্তে্রর নূ্যনতম শর্ত হিসাবেই তাই আজ আফস্পা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি তোলা যে কোনও গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের কর্তব্য।