কোলের ছেলেটাকে কী খেতে দেবেন কিছুতেই বুঝতে পারছেন না মা। হাতে তো কিছুই নেই, কী দিয়ে কিনবেন খাবার? অবশেষে ঘরে থাকা আসবাবপত্র, গৃহস্থালীর নানা সরঞ্জাম, বাসনপত্র নিয়ে বাজারে গেলেন বিক্রি করতে। যা পাওয়া যায় তাই দিয়ে কিছু দিন হলেও যদি সংসার চলে!
কাবুল ও তার সংলগ্ন এলাকায় বেশ কিছু রাস্তায় এরকম ‘বাজার’ তৈরি হয়েছে, যেখানে এমন সব মানুষেরা প্রতিদিন বিক্রি করতে আসছেন সংসারের টুকিটাকি পর্যন্ত। এমনভাবেই দারিদ্রের সাথে লড়াই করছেন আফগানিস্তানের অসংখ্য মানুষ। একদিকে আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা অন্যদিকে খাদ্যের জন্য হাহাকার তাদের প্রতিদিনের জীবন সংগ্রামের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। তালিবান জমানায় সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা এমন পর্যায়েই পৌঁছেছে।
মার্কিন সেনাদের হামলায় গত ২০ বছরে কয়েক লক্ষ সাধারণ আফগানের প্রাণ গিয়েছে। বহু পরিবারের পুরুষেরা হয় মারা গিয়েছেন না হলে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। মহিলাদের উপর বাড়ির শিশু এবং বয়স্কদের দেখভালের দায়িত্ব এসে পড়েছে। এদিকে তালিবানি শাসনে ভেঙে পড়েছে অর্থনীতি। মহিলারা কাজে যেতে পারছেন না। প্রায় দিনই কাজে যাওয়ার দাবি জানিয়ে মিছিল করছেন মহিলারা। আগের শাসনে কর্মরত মানুষরা তালিবান শাসনে কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন। ফলে বিরাট সংখ্যক মানুষের রোজগার নেই। তার সাথে যুক্ত হয়েছে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি। উপরন্তু গত কয়েক বছর ধরে (২০১৮-১৯) লাগাতার খরায় দেশে খাদ্য সংকট তীব্র। নানা ফসল এবং গম উৎপাদন অত্যন্ত কমে যাওয়ায় বাজারে এগুলির দাম বেড়ে গেছে। মানুষের হাতে অর্থ না থাকায় তারা কিনতেও পারছেন না খাদ্যদ্রব্য। স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে গেছে দারিদ্র এবং অপুষ্টি। শিশু-অপুষ্টি মারাত্মক আকার নিয়েছে। তালিবানি শাসনে লিঙ্গবৈষম্যও (মহিলা-পুরুষ) বেড়ে গেছে মারাত্মক হারে।
আফগানির (আফগানিস্তানের মুদ্রা) অবমূল্যায়নের সাথে সাথে সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, ময়দা থেকে শুরু করে ভোজ্য তেল সব কিছুর দাম চড়চড় করে বেড়ে চলেছে। একে মূল্যবৃদ্ধি। উপরন্তু তালিবানি শাসনে মহিলারা ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য হওয়ায় কাজে যেতে পারছেন না। ফলে অর্ধাহার-অনাহার এখানকার মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে।
তালিবানি শাসনে এখানকার বহু বাণিজ্যিক সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও বেতন পাচ্ছেন না। সরকারি নানা দপ্তর, ব্যাঙ্ক প্রায় বন্ধ। দিন আনা দিন খাওয়া হাজার হাজার মানুষের রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তালিবান ক্ষমতা দখলের পরে আন্তর্জাতিক অনুদানও বন্ধ হয়েছে আফগানিস্তানে। দেশে দারিদ্রসীমার নিচে থাকা মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭.৩ শতাংশে। পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে দারিদ্র ও অনাহার।