স্কুলে শিশুরা নিরাপদ নয়, হাসপাতালে ডাক্তাররা! দেশজুড়ে এ কেমন শাসন? এ কেমন প্রশাসন? ক্ষোভে ফুঁসছে মানুষ। শুধু আর জি কর নয়, মহারাষ্ট্রের বদলাপুরের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শৌচাগারে সাড়ে তিন-চার বছরের দুই শিশুর যৌন নিগ্রহের ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে মহারাষ্ট্র। হাজার হাজার মানুষ বেরিয়ে এসে রাস্তা, রেল অবরোধ করেছেন। তারপর পুলিশ নড়েচড়ে বসেছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে ১২ এবং ১৩ আগস্ট। স্কুলের শৌচাগারের ভিতরে এক পুরুষ সাফাইকর্মী ওই দুই শিশুকন্যাকে নির্যাতন করে। প্রথমে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এই বর্বরতা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। ঘটনার ভয়াবহতা এবং জনতার ক্রোধ লক্ষ করে বম্বে হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করেছে। ২২ আগস্ট শুনানির সময় বিচারপতি রেবতী মোহিতে দেরে এবং বিচারপতি পৃথ্বীরাজ চ্যবনের ডিভিশন বেঞ্চ ক্ষোভের সাথে বলেন, এত বর্বর ঘটনায় এফআইআর দায়ের হল চার দিন পরে! কেন এই বিলম্ব? কাকে বাঁচাতে, কীসের স্বার্থে পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তা?
পাঁচদিন সময় কাটিয়ে অবশেষে গণআন্দোলনের চাপে পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়েছে। মহারাষ্ট্রে বিজেপির জোট সরকার। সেই সরকারের পুলিশ অপরাধ চাপা দেওয়ার কাজে যা করছে, তা থেকে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশও শিক্ষা নিতে পারে! পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা আর জি কর কাণ্ডে যখন ক্যামেরার সামনে প্রবল লাফালাফি করছেন, তখন মহারাষ্ট্রের ঘটনায় তাঁরা নীরব। মেয়েদের সুরক্ষা, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার চেয়ে গদির খোয়াবই তাঁদের চালনা করছে বুঝতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু জনগণ! তাঁরা তো সত্যিই আন্দোলন চাইছে। তাই আর জি কর নিয়ে মানুষ যেমন আওয়াজ তুলেছে– বিচার চাই। বদলাপুরেও পুলিশকে বাধ্য করেছে নড়ে বসতে। সরকারকে কটাক্ষ করে ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, ‘যতক্ষণ না রাজপথে বড় ধরনের গণবিক্ষোভ হচ্ছে, ততক্ষণ তো পুলিশ প্রশাসন নড়েই না! বদলাপুরের মতো গণবিক্ষোভ না হলে কি সরকারও কিছুই করবে না’? (দ্য টেলিগ্রাফঃ ২২ আগস্ট ২০২৪) ডিভিশন বেঞ্চের আরও ক্ষোভ, ‘পুলিশ কেন বিষয়টিকে হাল্কাভাবে নিল? স্কুল যদি শিশুদের নিরাপদ জায়গা না হয় শিশুরা কী করতে পারে?’
পশ্চিমবঙ্গের আর জি কর এবং মহারাষ্টে্রর বদলাপুর– উভয় ক্ষেত্রেই পুলিশের ভূমিকা, সরকারের ভূমিকা দোষীদের আড়াল করার পক্ষেই। আর জি করের ঘটনার তদন্ত এখন সিবিআইয়ের হাতে। একদা সুপ্রিম কোর্টই বলেছিল, সিবিআই কেন্দ্রের হাতে খাঁচার তোতা। তার কাজ কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সিবিআই তদন্ত হাতে নেওয়ায় পর ১৯ দিনের মাথাতেও বিশেষ কিছু উদ্ধার করতে পারেনি। এই অবস্থায় জনগণ প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের হাতে সমস্ত আস্থা অর্পণ করে ন্যায় বিচারের আশায় বসে থাকলে তদন্ত কি এগোবে? দেখা গেল আদালতকেও বলতে হল জনগণ রাস্তায় না নামলে পুলিশ নড়ে বসবে না। অবশ্য আজকের দিনে ন্যায়বিচার পেতে গেলে, বিচারবিভাগের ন্যূনতম নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে গেলেও যে গণআন্দোলন ছাড়া রাস্তা নেই তা জনগণ অভিজ্ঞতা থেকেই জানে।
গণবিক্ষোভ না হলে সরকার কিছু করবে না– তেমনি গণবিক্ষোভ স্তিমিত হলে ন্যায় বিচারও হবে না। এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়, কেন্দ্রের কৃষক স্বার্থবিরোধী কৃষিনীতির বিষয়টি। প্রায় এক বছর ধরে দিল্লির রাজপথ দখল নিয়ে কৃষকরা যে ঐতিহাসিক আন্দোলন করেছেন, সেই আন্দোলনের চাপেই সুপ্রিম কোর্ট তা সাময়িকভাবে স্থগিত করে কমিটি করেছিল। পরে সরকার তা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। রাজপথের আন্দোলন এমনই শক্তিমান। এই আন্দোলনকে রাজপথ থেকে পাড়া পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। আশার কথা, আন্দোলন এভাবেই এগোচ্ছে।