আন্দোলন করেই জয় ছিনিয়ে আনলেন আশা-অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা

এআইইউটিইউসি অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের নেতৃত্বে লাগাতার ৫ দিনের কর্মবিরতি সরকারের থেকে ছিনিয়ে নিল তাদের দাবি। রাজ্য সরকার বাধ্য হল আশা ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ভাতা বাড়াতে। এই কর্মবিরতি আন্দোলন আবারও প্রমাণ করল যে, উন্নত আদর্শকে পাথেয় করে সঠিক নেতৃত্বে আন্দোলন পরিচালিত করলে দাবি আদায় করা সম্ভব। রাজ্য সরকারের বাজেটে কোনও বরাদ্দ না থাকা সত্ত্বেও আন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করে টাকা বাড়ানোর ঘোষণা করতে হয়েছে। এ আন্দোলন অধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় গড়ে ওঠা আরও বহু আন্দোলনকে উজ্জীবিত করবে, এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। কিছু দিন আগেও আন্দোলনের ফলস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গে আশাকর্মীদের বোনাস বাড়িয়ে ৫৩০০ টাকা, আশা, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের অবসরকালীন ভাতা ৩ লক্ষ টাকা, অবসরের বয়স ৬৫ বছর ইত্যাদি দাবি মানতে সরকার বাধ্য হয়েছে। আশাকর্মী ইউনিয়নের বহুদিনের দাবি ছিল, কর্মরত অবস্থায় যে সমস্ত কর্মীর মৃত্যু ঘটছে তাঁর পরিবারকে সাহায্য দিতে হবে। সরকার তা মানতে বাধ্য হয়েছে। আজ পর্যন্ত যা আদায় করা গেছে তা সরকারি ক্ষমতার জোরে নয়, নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনের আঘাতেই হয়েছে। চূড়ান্ত সরকারি বঞ্চনা, ইনসেন্টিভ মাসের পর মাস বকেয়া থাকা, কোভিড কালে সরকারি ঘোষণা বাস্তবায়িত না করা, বহু সরকারি অর্ডার উপেক্ষা করা সহ কর্মক্ষেত্রে হয়রানির প্রতিবাদে এ রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের নেতৃত্বে ধারাবাহিক আন্দোলন হয়েছে। এই স্কিম কেন্দ্রীয় সরকারের হলেও রাজ্য সরকারের দায়িত্ব অনেক। বিগত দিনে কেন্দ্র এবং রাজ্যের দুটি বাজেটে উভয় সরকার আশাকর্মীদের প্রতারিত করেছে। বারবার বহু প্রতিশ্রুতি, ফুল, মালা, অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে, কিন্তু ন্যূনতম পারিশ্রমিক দিয়ে মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার মতো কোনও ব্যবস্থা সরকার করছে না। উপরন্তু কাজ করার পরেও ন্যায্য পাওনা, পারিশ্রমিক দেয়নি। এ জন্য বারবার রাস্তায় নামতে হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য বাজেটে আশাকর্মীদের জন্য কোনও বরাদ্দ করা হয়নি। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে জেল খাটতে হয়েছে। কিন্তু আশাকর্মীরা প্রতিরোধের রাস্তা ছাড়েননি।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আশাকর্মীরা ১ মার্চ থেকে কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হন। ৩ মার্চ থেকে ছিল পালস পোলিও কর্মসূচি। এই কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে, ভাতা বৃদ্ধির দাবিতে অনড় হয়ে ৯৯ শতাংশ আশাকর্মী কর্মবিরতিতে অংশগ্রহণ করেন। ১ মার্চ থেকে পাহাড় থেকে সুন্দরবন আশাকর্মীদের আন্দোলনের ঢেউ ওঠে। আন্দোলন আছড়ে পড়ে ৫ মার্চ স্বাস্থ্য ভবনে। এক দিনের ঘোষণায় প্রায় ৪৫ হাজার আশাকর্মী সেদিন উপস্থিত হন স্বাস্থ্যভবনে। স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তারা ইউনিয়নের সাথে বসতে বাধ্য হন। আন্দোলনের চাপে পরদিনই দাবি মেনে ভাতা বৃদ্ধি, কর্মরত অবস্থায় কোনও কর্মীর মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা সাহায্য সহ আরও কিছু ঘোষণা করতে বাধ্য হয়। এ থেকে পরিষ্কার যে, সঠিক নেতৃত্বে ধারাবাহিকভাবে সুসংগঠিত আন্দোলন না হলে এ দাবিগুলি আদায় সম্ভব হত না।

অপূরিত দাবি নিয়ে আগামী দিনে আন্দোলন চলতে থাকবে, কারণ কর্মীদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেয়ে যে, একমাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দাবি পূরণ সম্ভব।