অনেক হয়েছে, আর নয়৷ ফ্রান্সের ম্যাক্রঁ সরকারের শ্রমিকবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছেন সেখানকার মেহনতি মানুষ৷ চলছে ধারাবাহিক রেল ধর্মঘট৷ রেল–কর্মচারীদের সঙ্গে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন বিমান পরিষেবা কর্মচারী, সাফাই কর্মী, নার্স, সুপারমার্কেটের কর্মী, আইনজীবী এমনকী ছাত্ররাও৷ পুলিশি হামলা মোকাবিলা করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে মানুষ৷ গোটা দেশে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে এই ধর্মঘটের৷
ছাঁটাই, লে–ফ, সরকারি পরিষেবাগুলির ব্যাপক বেসরকারিকরণ সহ ম্যাক্রঁ সরকারের ব্যয়সঙ্কোচের নীতিতে আর পাঁচটা পুঁজিবাদী দেশের মতো ফ্রান্সের সাধারণ মানুষের জীবন আজ অতিষ্ঠ৷ সরকারে বসে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ তাঁর ‘সংস্কার নীতি’ ঘোষণা করেছেন, যাতে বলা হয়েছে ২০২০ সালের আগেই দেশের মোট ৫০ লক্ষ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ১ লক্ষ ২০ হাজার জনকে ছাঁটাই করা হবে৷ রাষ্ট্রায়ত্ত রেল পরিষেবা সংস্থা এসএনসিএফ–কে বেসরকারি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়া হবে৷ ফলে প্রায় দেড় লক্ষ রেল–কর্মী কাজের নিশ্চয়তা হারাবেন৷ ম্যাক্রঁ আরও ঘোষণা করেছেন, বহুসংখ্যক শ্রমিক–কর্মচারীর বেতন বাড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হবে, পেনশনের সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হবে এবং শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে মালিকদের স্বার্থে৷ পাশাপাশি বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষার যে সুবিধা সে দেশে ছিল, শিক্ষার বেসরকারিকরণের মাধ্যমে তাও বন্ধ করে দেওয়া হবে৷ একদিকে দেশের বৃহৎ পুঁজিপতি শ্রেণি, অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য অন্য দেশগুলির সাম্রাজ্যবাদী ব্যাঙ্কের মুনাফার স্বার্থেই ম্যাক্রঁর এই পদক্ষেপ৷
স্বভাবতই ক্ষোভে ফুঁসছে ফ্রান্সের সাধারণ খেটে–খাওয়া মানুষ৷ তাদের নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছে সেখানকার ১২টি বামপন্থী রাজনৈতিক দলের জোট৷ এদের ডাকে ২২ মার্চের দেশজোড়া বিশাল বিক্ষোভ মিছিলে সামিল হয়েছিলেন ৫ লক্ষেরও বেশি জনতা৷ শুধু রাজধানী প্যারিসেই পথে নেমেছিলেন ৬৫ হাজার আন্দোলনকারী৷ সেদিনকার সেই মিছিল থেকেই ঘোষণা করা হয় ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে তিন মাস ধরে ধারাবাহিক ভাবে ধর্মঘটে সামিল হবেন রেল কর্মচারীরা৷ দু’দিন ধর্মঘটের পর তিন দিন রেল পরিষেবা সচল রাখা হবে, তার পর আবার দু’দিনের ধর্মঘট৷ এমনি করে ২৮ জুন পর্যন্ত চলবে এই ধর্মঘট৷
এ পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে রেল ধর্মঘটের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে দেশজুড়ে৷ ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন বিমান পরিষেবা সংস্থা এয়ার ফ্রান্সের কর্মীরা৷ সাফাই কর্মীদের ধর্মঘটে শহরগুলিতে মাঝে মাঝেই জঞ্জালের স্তূপ জমে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷ এগিয়ে এসেছেন ফ্রান্সের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও৷
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর ফ্রান্সের শ্রমিক–কর্মচারী–ছাত্রছাত্রীরা৷
(৭০ বর্ষ ৩৬ সংখ্যা ২৭ এপ্রিল, ২০১৮)