আর জি কর হাসপাতালের মর্মান্তিক ঘটনায় আন্দোলনরত বিভিন্ন হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকদের কাছে ১ সেপ্টেম্বর আমরা গণদাবীর পক্ষ থেকে কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম। উত্তরে তাঁরা যা বলেছেন, তা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
আর জি করের স্নাতকোত্তর ছাত্রী-চিকিৎসকের ধর্ষণ ও মৃত্যুর বিচার চেয়ে দেশ জুড়ে, এমনকি দেশের বাইরেও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। আন্দোলন এমন সর্বব্যাপক হওয়ার কী কারণ বলে আপনাদের মনে হয়?
আর জি করের ঘটনার সূত্রপাত ৯ আগস্ট। হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন স্নাতকোত্তর বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ বিভাগের সেমিনার রুমে পাওয়ার মধ্যে দিয়ে। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে কর্তব্যরত একজন চিকিৎসকের উপর, যিনি টানা ৩০-৩৬ ঘণ্টা ধরে ডিউটি করছিলেন। তাঁর এমন মর্মান্তিক মৃত্যু প্রত্যেক বাবা-মায়ের মনে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে যে, তা হলে কি তাঁর মেয়ে কর্মস্থলেও নিরাপদ নয়? অথচ বাড়ি এবং কর্মস্থল– এই দুটো তো একে অপরের পরিপূরক। কর্মস্থলকেই মানুষের দ্বিতীয় বাড়ি বলা চলে।
একজন কর্তব্যরত চিকিৎসক, যিনি প্রতি মুহূর্তে অন্যের প্রাণ রক্ষা করেন, কর্মস্থলেই তাঁর এমন নির্মম হত্যার ঘটনা কিন্তু অপরাধের সমস্ত সীমাকে ছাড়িয়ে যায়। ঘটনার এই গভীরতা, যা প্রথম জুনিয়র চিকিৎকরা, তাঁর সহকর্মীরা উপলব্ধি করে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তা আজ গোটা সমাজ উপলব্ধি করতে পেরেছে।
মানুষ দেখেছে হাথরস, উন্নাও, কাঠুয়া, মহিলা কুস্তিগির থেকে শুরু করে বানতলা, কামদুনি, পার্কস্ট্রিট– কোনও ঘটনারই বিচার নির্যাতিতারা পায়নি। মানুষের মধ্যে বিচার না পাওয়ার ক্ষোভ পুঞ্জীভুত অবস্থায় ছিল। সেই ক্ষোভেরই বিস্ফোরণ ঘটেছে চিকিৎসকের এই হত্যার ঘটনায়। আর জি কর কোনও গ্রামীণ হাসপাতাল নয়, রাজধানী কলকাতা মহানগরীর প্রথম শ্রেণির কয়েকটি হাসপাতালের একটি। সেখানে এই ঘটনা ঘটেছে! সেখানে সিসি ক্যামেরা, পুলিশ আউটপোস্ট এবং সিকিউরিটি গার্ডেরও ব্যবস্থা রয়েছে। এই ঘেরাটোপের মধ্যে থেকেও একজন মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষিতা হতে হল, খুন হতে হল! এটা তো বাইরে থেকে এসে কেউ ঘটিয়ে দিতে পারে না। তা হলে কারা এর পিছনে রয়েছে? তাদের মোটিভ কী? এই সব প্রশ্ন যেমন আর জি করের আন্দোলনরত চিকিৎসকরা তুলছেন, তেমনই বাংলার মানুষ তুলছেন, সারা দেশের মানুষ তুলছেন। তেমনই শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে শুরু করে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি সহ সর্বত্র মানুষ এই প্রশ্ন তুলছেন।
এই যে মানুষের আন্দোলন, যা ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্য, দেশের সীমাকে অতিক্রম করে, এর কোনও প্রভাব কি তদন্তের উপর পড়বে বলে আপনারা মনে করেন?
আমরা আজ যে সমাজব্যবস্থায় রয়েছি সেখানে যা কিছু আইনসঙ্গত, তা সব সময় ন্যায়সঙ্গত নয়, আবার যা কিছু ন্যায়সঙ্গত তা আইনসম্মত নয়। আজকের দিনে দাঁড়িয়েও বিচার কিনতে হয়। আজ যে কোনও কোর্ট, তা লোয়ার কোর্ট, হাইকোর্ট হোক বা সুপ্রিম কোর্ট, তার জন্য আমাদের আইনজীবী নিয়োগ করতে হয়। তার যে বিপুল খরচ, তা বহন করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তা হলে প্রতিটি বিচারকে কি সুবিচার বলা যায়? সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমরা মনে করি, এই আন্দোলন একটা ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলন। এবং এই দাবির সঙ্গে দেশের মানুষ তাদের দাবিকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে। তাদের দাবির সঙ্গে আর জি করের বিচারের দাবি এক হয়ে গেছে। তা থেকে যে জনরোষের জন্ম হয়েছে, সেই জনরোষ আমরা দেখছি প্রশাসনকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তার জন্যই প্রশাসন অনেকটা পিছু হঠেছে।
এর আগেও আমরা দেখেছি, আন্দোলনকে নানা ভাবে ভাঙার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু জনরোষের চাপে আজ সরকার তথা প্রশাসনও বিচার চাইছে। যদিও এটা আই-ওয়াশ বলেই আমাদের মনে হয়। চিকিৎসক সমাজ সহ ব্যাপক জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সামাজিক আন্দোলনের চাপেই সরকারি দল বিচার চাইতে বাধ্য হয়েছে। যে সরকারি ব্যবস্থার মধ্যেই এই ঘটনা ঘটেছে, সেই সরকারই আজ বিচারের দাবি তুলছে। কিন্তু তারা এই ঘটনার দায় নিতে রাজি হচ্ছে না। নিহত চিকিৎসক তো সরকারি চিকিৎসক ছিলেন, সরকারই তাঁকে নিয়োগ করেছিল এবং তিনি সরকারি হাসপাতালেই কাজ করতেন। তা হলে এই ঘটনার দায় সরকার নেবে না কেন? কিন্তু আন্দোলনের চাপে কিছু দাবি তারা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কয়েকটা উদাহরণ দিলে বোঝা যাবে। প্রথমে শরীর খারাপ বলে বাড়িতে খবর দেওয়া, তারপর আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা, এফআইআর করতে দেরি করা, এই ভাবে প্রথম থেকেই পুলিশ-প্রশাসন ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে এসেছে। যখন জনসাধারণ এই দাবিটির সাথে একাত্ম হল এবং সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নামল, তখন কিন্তু প্রশাসন চাপে পড়ে গেল। তখন হাইকোর্ট কেসটাকে টেক-ওভার করল এবং তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিল। তারপর সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে কেসটা গ্রহণ করল।
ফলে এটা পরিষ্কার, কী রাজ্য সরকার, কী কেন্দ্রীয় সরকার– সবার উপরেই কিন্তু আন্দোলনের একটা ভাল রকম চাপ পড়েছে। তারা বাধ্য হয়েছে ঘটনাটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দেখতে। ফলে বিচারব্যবস্থার উপর ভরসা রাখলেও একটা বিষয় পরিষ্কার বুঝতে হবে, আন্দোলন না থাকলে ন্যায়বিচার হবে না।
আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কি অপরাধ প্রতিরোধের শক্তিও শক্তিশালী হচ্ছে?
ঘটনাপ্রবাহ যত এগোচ্ছে, সেটা ততই স্পষ্ট হচ্ছে। দলমত, জাতি-ধর্মের বেড়া ভেঙে মানুষ আজ রাস্তায় নেমেছে, মিছিল করছে। ১৪ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের পূর্ব রাতে মহিলাদের রাত দখলের কর্মসূচিতে কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় মানুষের ঢল রাস্তায় নেমেছিল। রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা ভারতে তো বটেই, বিদেশের মাটিতেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্বর উঠেছে। আমাদের মনে হয় না, স্বাধীনতা পরবর্তীকালে কখনও এত মানুষ একসাথে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
আমরা আরও দেখেছি, বিক্ষোভের ভয়ে সরকারের ডার্বি ম্যাচ বাতিল করার প্রতিবাদে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল টিম ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, তার সাথে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অগণিত সমর্থক বিক্ষোভ দেখিয়েছেন পুলিশের লাঠির সামনে দাঁড়িয়ে। দেখা গেল এক দলের সমর্থকের কাঁধে চেপে আর এক দলের সমর্থক প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এই ঘটনা বিরল, কেউ আগে দেখেনি। স্লোগান উঠেছে ‘ঘটি-বাঙাল এক স্বর– জাস্টিস ফর আর জি কর’।
আমরা দেখলাম, স্কুল-কলেজের ছাত্রদের প্রতিবাদ জানানোর উপর সরকার নিষেধাজ্ঞা আনল– বলল, তারা সরকারি কর্মসূচি ছাড়া অন্য কিছুতে অংশ নিতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই অনেক স্কুলে তালা দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা বেরিয়ে গেল এবং স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও আন্দোলনটাকে সমর্থন করলেন।
এমন বহু ঘটনা আছে। আরজি কর মেডিকেল কলেজের ধর্না মঞ্চে থাকার সময় দেখেছি, সমাজের নানা স্তরের মানুষ সেখানে আসছেন, বুদ্ধিজীবীরা আসছেন, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আসছেন। লেখক-কবিরা তাঁদের লেখা প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা পাঠাচ্ছেন ধর্না মঞ্চে। গায়করা সংহতি বার্তা জানাচ্ছেন। এ ছাড়াও ‘বিশেষভাবে সক্ষম’ মানুষরাও মিছিলে হাঁটছেন। সমাজে ব্রাত্য যে ট্রান্সজেন্ডাররা, তাঁরাও মিছিল করছেন। আইনজীবীরা, সাংবাদিকরা মিছিল করছেন। মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে আমরা মনে করি এই আন্দোলন মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলেছে, বিবেককে উদ্বুদ্ধ করেছে। প্রতিবাদের ভাষাকে সবার সামনে তুলে ধরার পথটাকে সহজ করেছে।
শুনেছি প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু কলকাতাকে দুঃস্বপ্নের নগরী বলতেন। কারণ প্রচুর মিছিল হত। এখানেও আমরা দেখতাম মিছিল হলেই কিছু মানুষ বিরক্ত হতেন– আবার রাস্তা জ্যাম! খবরের কাগজ মিছিলের আসল দাবি বাদ দিয়ে লিখত– যান জট। কিন্তু এখন প্রচুর মিছিল হচ্ছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মানুষ বাসে, ট্যাক্সিতে বসে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন। বলছেন, মিছিলটা হওয়া উচিত। অনেকেই মনে করছেন আমি এই মিছিলটায় যেতে পারলাম না, গেলে ভাল হত। নাক উঁচু মানুষ বলা হত যাঁদের, তাঁরাও আজ মিছিলে নামছেন। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা, তাঁদের আন্দোলনে যেতে না দেওয়ার জন্যে যে অপপ্রচার চলে, তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন।
এই আন্দোলন এমন একটা জায়গায় গেছে এবং মানুষকে নিয়ে যেতে পেরেছে, উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছে, যেখানে দাঁড়িয়ে আগামী দিনে মানুষ প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, এটাই আমাদের আশা।
অভিযোগ উঠেছে রাজ্য সরকার ও পুলিশ প্রশাসন এই ঘটনার প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছে। আপনাদের অভিমত কী?
৯ আগস্ট যখন সেমিনার রুম থেকে দেহ উদ্ধার হয়, তারপর কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাবা-মায়ের কাছে ফোন যায়। যেটা ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে আপনারা দেখেছেন। প্রথমে বলা হয়, তাঁর শরীর খারাপ, এমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারপরে বলা হয়, উনি আত্মহত্যা করেছেন। তারপরে বলা হয়, আপনারা তাড়াতাড়ি আসুন, আমরা সবকিছু বলব– এখান থেকে শুরু। এই ঘটনার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশের যে তদন্তকারী দল আসে, তাদের আচরণ, শরীরী ভাষা ছিল অত্যন্ত গা-ছাড়া– যেন কিছুই হয়নি! সেখান থেকেই আমাদের মনে সন্দেহ দানা বাঁধে যে, এর পিছনে নিশ্চয়ই বড় কিছু বিষয় আছে, যেটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
তড়িঘড়ি দেহ সরিয়ে পোস্টমর্টেমে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলে, তখন বাধা দেওয়া হয়। জুনিয়র ডাক্তাররা দাবি জানান ম্যাজিস্ট্রেটকে আসতে হবে, তাঁর তত্ত্বাবধানে সুরতহাল এবং পোস্টমর্টেম হবে। ভিডিও রেকর্ডিং করতে হবে, সাক্ষীর উপস্থিতিতে পোস্টমর্টেম করতে হবে। এই সব দাবি উঠতে থাকে। পোস্টমর্টেমের পরই তড়িঘড়ি মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে বার করে নিয়ে গিয়ে শাসকদলের বিধায়কের উপস্থিতিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়। নির্যাতিতার বাবা-মা সংবাদমাধ্যমে এ কথাও বলেছেন, তাঁরা বুঝে ওঠার আগেই পুলিশ দেহ নিয়ে রওনা হয়ে যায়। আরও দেখুন ১৪ তারিখ রাতের ঘটনা– একদল সশস্ত্র গুন্ডা, তাদের কারও হাতে কাটারি ছিল, কারও হাতে লোহার রড, কারও হাতে আরও ধারাল অস্ত্র, তারা প্রতিবাদী মঞ্চটাকে ভাঙচুর করে, আর জি করের ইমারজেন্সিটাকে পুরো তছনছ করে দেয়, উপরের দুটো ঘর ভাঙচুর করে। তারা চলে যায় চেস্ট মেডিসিনের সেমিনার রুমের কাছে। তারা হোস্টেলে ঢুকে নার্সদের মারাত্মক হুমকি দেয়। যে ভাবে পুরোটা ঘটেছে তাতে আমাদের দৃঢ় ধারণা এটি পুরোপুরি পরিকল্পিত ছিল।
সেই সময় পুলিশ কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। সেখানে থাকা পুলিশ কর্মীরা আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রী ও সিস্টারদের কাছে লুকনোর জায়গা খুঁজতে থাকে। প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট ধরে দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালালেও সেই সময় কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও অতিরিক্ত ফোর্স পাঠানো হয়নি। সদর্থক ভূমিকা নেওয়া দূরে থাক, আন্দোলনকারী ছাত্ররা বারবার পুলিশকে ফোন করলেও তারা তা রিসিভ পর্যন্ত করেনি। সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে রিপোর্ট পেশ করার় সময় বলেছে, আমরা ঘটনার পাঁচদিন পর অকুস্থলে যাই। তখন সেমিনার রুম এবং আশেপাশের জায়গা আর আগের মতো নেই। ফলে এটা খুবই স্পষ্ট যে তথ্যপ্রমাণ লোপাট হয়েছে। এটাতে প্রমাণিত যে প্রশাসন এবং পুলিশ যারাই তদন্তের দায়িত্ব ছিল এবং তৎকালীন কলেজ কর্তৃপক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রমাণ লোপাট করতে সাহায্য করেছে।
সেমিনার রুম লাগোয়া একটা ঘর ভাঙার খবর সংবাদে এসেছে। তার সাথে কি প্রমাণ লোপাটের কোনও যোগ আছে বলে মনে হয়?
থাকতেই পারে। কারণ সেমিনার রুমের লাগোয়া স্লিপ-স্টাডি রুম আছে। ডাক্তারদের যেহেতু আলাদা কোনও রেস্ট রুম নেই, তাই স্লিপ-স্টাডি রুম ফাঁকা থাকলে, ডাক্তাররা ওই ঘরে বিশ্রাম নেন। কিছু ডাক্তার সেমিনার রুমেও বিশ্রাম নেন। ওই স্লিপরুমের পাশে একটা বাথরুম ছিল। এই দুটো জায়গাই মেরামতির নামে ভাঙা শুরু হয়। প্রশ্ন এটাই উঠছে, যেটা ক্রাইম স্পট, যে জায়গাটা নিয়ে এত বিতর্ক– সেই চেস্ট মেডিসিন ডিপার্টমেন্টেই কেন মেরামতির কাজ শুরু করা হল? প্রশ্ন উঠছে, এমন কোনও প্রমাণ কি ওখানে ছিল যেটাকে লোপাট করার চেষ্টা হচ্ছে? তদন্তে তা যেন সামনে না আসে, তার চেষ্টা হচ্ছে কি? কী তার মোটিভ? কে নির্দেশ দিল ভাঙার? আজও কিন্তু সেটা জানা যায়নি। আমরা দাবি তুলেছি–তদন্তের আওতায় এটাকেও আনতে হবে এবং যিনি নির্দেশ দিয়েছেন তাঁকেও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
জুনিয়র ডাক্তাররা এতে বাধা দিয়েছিলেন?
একদমই তাই। জুনিয়র ডাক্তাররা যেহেতু আন্দোলনে চলে এসেছিলেন, তাই ওয়ার্ডের ভিতরে কী হচ্ছে তাঁরা প্রথমে তা জানতে পারেননি। জানার পরেই তাঁরা বাধা দেন এবং কাজ আটকে দেন। স্বাভাবিক তদন্ত হলে ঘটনার প্রথম দিন থেকেই পুলিশের উপর দায়িত্ব বর্তায় ‘ক্রাইম স্পট’ অপরিবর্তিত রাখার। তার আশেপাশেও যাতে কোনও পরিবর্তন না করা হয়ে সেটা তাদেরই দেখার কথা। পুলিশ ওখানে থাকা সত্ত্বেও ভাঙার কাজটা হল! তা হলে তো বলতেই হয়, কোনও না কোনও ক্ষমতাশালী সেখানে যুক্ত আছেন।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে বৃহৎ দুর্নীতিচক্র এবং অপরাধ চক্রের যুক্ত থাকার কথা বার বার সামনে আসছে। এই আন্দোলন কি তার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে পারছে?
অবশ্যই, এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা হচ্ছে। প্রফেসর ডাঃ সন্দীপ ঘোষ স্যারের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছে– হুমকি দেওয়া, ফেল করিয়ে দেওয়া, পরীক্ষায় পাশ করানোর জন্য টাকা নেওয়া থেকে শুরু করে আরও নানা দুর্নীতির বিষয় আসছে। এগুলি কিন্তু শুধু আরজি কর মেডিকেল কলেজেই সীমাবদ্ধ নয়। এই দুর্নীতিচক্র পশ্চিমবঙ্গের অনেক মেডিকেল কলেজেই ছড়িয়ে আছে। আমরা মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ, নর্থ বেঙ্গল মেডিকেল কলেজে নানা দুর্নীতিচক্রের কথা আগে তুলেছি, সংবাদমাধ্যমও এখন তা বলছে। এর আগেও প্রফেসর সন্দীপ ঘোষ স্যারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, তা নিয়ে তদন্ত কমিটিও তৈরি হয়েছিল। যদিও আমরা জানতে পেরেছি সেই কমিটির অনেক সদস্যই ইতিমধ্যে অবসর নিয়েছেন। নানা রকমের আর্থিক দুর্নীতিরই অভিযোগ উঠেছিল। একটা তদন্ত কমিটি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই তদন্ত কমিটির কাজের অগ্রগতি কী হয়েছে, কারও জানা নেই। অর্থাৎ এই আর্থিক দুর্নীতি চলছে আগে থেকেই। সরকার শুধু তদন্ত কমিটি তৈরির কাজটুকুই করেছিল। কিন্তু তার রিপোর্ট নেওয়া এবং তার ভিত্তিতে পদক্ষেপ কী নেওয়া হয়েছে– কিছুই প্রকাশ্যে আসেনি। আন্দোলনরত পড়ুয়া ডাক্তাররা বলছেন, এইসব চক্র যতক্ষণ না সমূলে উচ্ছেদ হচ্ছে, ততক্ষণ বার বার এই ধরনের দুর্নীতি হতে থাকবে। আর জি করের ঘটনার মোটিভ এই দুর্নীতি চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে পারে। সেই মোটিভটা সামনে আসা দরকার। জানা দরকার এই ঘটনা ঘটানোর উদ্দেশ্য কী ছিল।
এরই সাথে মেডিকেল কলেজগুলোতে যে সব দুষ্টচক্র চলছে, সেগুলিকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে, যে বা যারা এ সবের সঙ্গে যুক্ত তাদের সম্পর্কে তদন্ত করতে হবে এবং যদি তারা দোষী সাব্যস্ত হয়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। সে জন্যই আন্দোলন থেকে প্রফেসর ডাঃ সন্দীপ ঘোষের সাসপেনশন, পদত্যাগের দাবি উঠেছে। যাতে আগামী দিনে তাঁকে কোনও উচ্চ পদে না বসানো হয়, সেই দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ১৪ আগস্ট আর জি করে হামলার জন্য যে পুলিশ কমিশনার দায়ী, তাঁরও সাসপেনশন দাবি করা হয়েছে। অর্থাৎ এই দুষ্টচক্র যাতে পুরোপুরি বন্ধ করা যায় তার দাবি জানানো হয়েছে।
এর আগে ২০০১ সালে আর জি করে এক ডাক্তারি ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল। সেই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা হয়েছিল। যদিও তাঁর পরিবার এবং সহপাঠীরা একটি বিশেষ চক্রের দিকে আঙুল তুলেছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সরকার তাতে কান দেয়নি। সেই ঘটনায় যে চক্রের কথা উঠেছিল সেই ধরনের চক্রই ডালপালা মেলে আজ এমন ঘটনা ঘটাতে পারে বলে কি আপনারা মনে করেন?
দুটো ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র আছে কি নেই, সেটা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। তবে আন্দোলনের মঞ্চ থেকে আমরা এটুকু বলছি যে, এবারের ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন বিষয় নয়। দুর্নীতি চক্র চলতে চলতে, বার বার অপরাধের ঘটনা ঘটতে ঘটতে আজ তা সমস্ত মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। যে শাসক দলই ক্ষমতায় থাক, তারা দোষীদের আড়াল করে বলেই এই ধরনের ঘটনা বার বার ঘটছে। ফলে সরকার, প্রশাসন যারা চালায়, তাদের উদ্দেশ্য কী, সেটা জানা দরকার। তাদের উদ্দেশ্য কি বিচার দেওয়া, অপরাধ আটকানো? নাকি তাদের উদ্দেশ্য অপরাধ যারা করছে তাদের আড়াল করা? যদি সেটা উদ্দেশ্য না হয়, তা হলে কোনও খুনের ঘটনাকে আগেই আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে কেন? পার্ক স্ট্রিট, কামদুনি বা হাথরসের ঘটনা, সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের বদলাপুরের ঘটনা– সর্বত্রই কেউ মুখ খুলতে চাইলেই হুমকি দেওয়া হচ্ছে, ভয় দেখানো হচ্ছে তার পরিবারের লোককে। এ কিন্তু শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, দেশের সর্বত্রই আজ এমন ঘটছে। সঠিক তদন্তে হয়তো উঠে আসবে ২০০১ সালের ঘটনার সঙ্গে এ বারের ঘটনার কোনও যোগসূত্র আছে কি না! কিন্তু প্রতিটি শাসক দলেরই যে মোটিভ– অপরাধীদের বাঁচানোর চেষ্টা করা, রাজনৈতিক বা অন্য কোনও সূত্রে প্রভাবশালী ব্যক্তির মদতে অপরাধ ঘটে থাকলে সেই অপরাধীদের আড়াল করা, আমরা এরই প্রতিবাদ করছি।
ঘটনার পর ২৩ দিন পার হয়ে গেল। সিবিআই-ও ১৯ দিন হয়ে গেল তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে। অথচ এখনও পর্যন্ত সিবিআই জনসমক্ষে কোনও তদন্তের অগ্রগতির কথা জানায়নি। যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট তাদের তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে, তাই ব্যাপারটা সুপ্রিম কোর্ট আর সিবিআই-এর মধ্যেকার বিষয়, ব্যাপারটা তো এরকম নয়! কারণ কোটি কোটি মানুষ গভীর উদ্বেগে অপেক্ষা করছেন এই তদন্তের ফলের জন্য। অথচ এই যে তদন্তের তেমন কিছু অগ্রগতি হল না, এর ফলে একটা অংশের মানুষের মধ্যে এ রকম একটা ভাবনা তো আসতে পারে যে, এত মিছিল, এত আন্দোলন হল, এত লড়াই হল, কিন্তু কিছুই তো হল না! এ ব্যাপারে আপনারা কী বলবেন?
কিছুই হল না, এটা আমরা মানতে রাজি নই। আমরা তো অনেক পজিটিভ দিক দেখতে পাচ্ছি এই আন্দোলনের মধ্যে। প্রথমটা হল, আগেই যে কথা বলেছি– আন্দোলনে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। এটা আগে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। আমার সিনিয়রদের কাছ থেকেও শুনছি যে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এই বিশাল গণজাগরণ, মানুষের এমন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাস্তায় নামাটাও খুব বিরল ঘটনা। ফলে এই আন্দোলনের একটা খুব বড় সাফল্য হল, আমরা একটা দাবিকে গোটা সমাজের প্রত্যেকটা মানুষের দাবির সঙ্গে মেলাতে পেরেছি। মানুষ এই দাবির সঙ্গে সহমত প্রকাশ করে প্রতিদিনই রাস্তায় নামছেন, প্রতিবাদ করছেন। অন্যান্য অন্যায় দেখেও মানুষ প্রতিবাদ করছেন। কিছু ঘটনা আমরা লক্ষ করছি। আজকেই কলকাতায় সিঁথির মোড়ে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে পথ অবরোধ করেছে। কেন? না, একজন সিভিক পুলিশ সেখানে মদ্যপ অবস্থায় খারাপ আচরণ করেছে।
গোটা সমাজ জুড়ে যে আন্দোলন চলছে এবং আপনারা চিকিৎসক ও ছাত্ররা যে আন্দোলন করছেন, যদি সেই আন্দোলন ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে যায়, তা হলে কি তদন্ত দুর্বল হবে বলে আপনারা মনে করেন?
প্রথম কথা, আন্দোলন যাতে ঝিমিয়ে না পড়ে, এই আন্দোলনের স্রোত যাতে সমাজের প্রতিটি কোণে পৌঁছয়, প্রতিটি মানুষের কাছে যায়, সে জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের যে ফ্রন্ট তৈরি হয়েছে, তারা সদা সচেষ্ট আছে। ফ্রন্ট চাইছে, আগামী দিনে যাতে সমাজে এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ আর না ঘটে, এই আন্দোলন থেকে মানুষের কাছে সেই বার্তাই যাক। সে জন্য আন্দোলনকারী ডাক্তাররা চাইছেন আন্দোলনটাকে এমন একটা রূপ দিতে, এমন একটা জায়গায় নিয়ে যেতে যাতে মানুষ প্রতিবাদ জানাতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে, যাতে এই আন্দোলন চলতেই থাকে। আমরা মনে করি, এই আন্দোলন একটা পর্যায়ে গিয়ে শেষ হলেও তার প্রভাবটা সমাজে থেকে যাবে। এই আন্দোলন একটা ঐতিহাসিক আন্দোলন। এই আন্দোলন মানুষের মধ্যে যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে, প্রতিবাদের ভাষার জন্ম দিয়েছে, মানুষ যে ভাবে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এগিয়ে এসেছেন, তার রেশ কিন্তু আগামী দিনেও থাকবে বলে আমরা মনে করি। আমরা যদি মানুষের মধ্যে প্রতিবাদের এই উদ্দীপনা বাঁচিয়ে রাখতে পারি, তাহলে আগামী দিনে সমাজ থেকে অপরাধ কমবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
দেশজোড়া যে বিরাট জনআন্দোলন তথা সামাজিক আন্দোলন গড়ে উঠেছে, এর সাথে কোনও ভাবে সংযোগ স্থাপনের কথা কি আপনারা ভাবছেন?
অবশ্যই। আমরা ইতিমধ্যেই রাখীবন্ধন উৎসবের দিন অভয়ার নামে রাখী পরানোর কর্মসূচি নিয়েছিলাম। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সেটা সফল ভাবে হয়েছে। ‘মেয়েদের রাত দখলে’-র কর্মসূচিতে সমস্ত মানুষ সামিল হয়েছেন। ৪ সেপ্টেম্বর জুনিয়র ডাক্তারদের ফ্রন্ট একটা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দেশবাসীর কাছে আবেদন জানিয়েছে, ওই দিন যেন তারা রাত ৯-১০টা ঘরের আলো বন্ধ রাখেন, মোমবাতি বা প্রদীপ হাতে বাড়ির সামনে মানববন্ধন তৈরি করেন। যাতে এটা একটা দৃষ্টান্ত তৈরি হয়, যাতে সুপ্রিম কোর্টের নজর কাড়ে যে, সারা দেশের মানুষ এই ঘটনার প্রতিবাদ করছে এবং দোষীদের অবিলম্বে শাস্তি দাবি করছে। আমরা বিভিন্ন জায়গাতে কমিটি গঠন করার কথাও ভাবছি, আমাদের চিকিৎসকদের প্রতিনিধি রেখে নানা অংশের মানুষের মধ্যে। যতদিন না আমরা বিচার পাচ্ছি, ততদিন যাতে এই আন্দোলন দীর্ঘায়িত হয় তার জন্য আমরা চেষ্টা করছি।
জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি নিয়ে একটা অংশের মানুষের মধ্যে কিছু প্রশ্ন আছে। মিডিয়ার একটা অংশ কিছু প্রশ্ন তুলছে। এ সম্পর্কে আপনাদের বক্তব্য কী?
এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত দৃঢ় এবং সুস্পষ্ট। আমরা যদি জানতে না পারি কে বা কারা ধর্ষক, কে বা কারা খুনি এবং তারা যদি অ্যারেস্ট না হয়, সেই খুনি-ধর্ষকরা কলেজের মধ্যে বা আশেপাশে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরে বেড়ায়, তা হলে এটা জানার পরও একজন ডাক্তার, আমাদের জুনিয়র বা সহকর্মী কী সুরক্ষার ভরসা নিয়ে আবার ডিউটি করবে? এই ঘটনার মোটিভ কী ছিল, উদ্দেশ্য কী ছিল? এর পিছনে কী কারণ রয়েছে, তা যতক্ষণ না উদঘাটন হচ্ছে এবং দোষীরা যতক্ষণ না চিহ্নিত হচ্ছে, কোনও সুরক্ষাই আমাদের সুরক্ষিত করতে পারবে না। এরকম পরিস্থিতিতে কর্মবিরতিটা জুনিয়র ডাক্তাররা করছেন। কিন্তু সিনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি করছেন না। তাঁরা অতিরিক্ত দায়িত্ব নিয়ে পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন।
এটাও বলতে চাই, জুনিয়র ডাক্তাররা সত্যিই কাজে ফিরতে চান। তারা কাজ করতেই এসেছেন, চিকিৎসা পরিষেবা দিতেই এসেছেন, সেই জন্যই কাজ শেখা। কিন্তু কাজের অনুকূল পরিবেশটা যদি না থাকে, তারা কাজ করবেন কী ভাবে? আর জুনিয়র ডাক্তাররা আজকের দিনে চিকিৎসা ব্যবস্থার মূল স্তম্ভ নয়, তারা একটা অংশ। তা সত্ত্বেও পরিষেবা অনেকটাই জুনিয়র ডাক্তারদের উপর নির্ভর করে। তার কারণ আজ প্রত্যেকটা মেডিকেল কলেজ, জেলা হাসপাতালে আরএমও, শিক্ষক-অধ্যাপকদের প্রচুর পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। সেখানে নিয়োগ করা হচ্ছে না বছরের পর বছর। যদি উপযুক্ত পরিমাণে চিকিৎসক নিয়োগ করা হত, তা হলে স্বাস্থ্য পরিষেবার এই বেহাল দশা হত না। এই যে স্বাস্থ্য পরিষেবা কিছুটা অর্থে ব্যাহত হচ্ছে, এর জন্য দায়ী কিন্তু প্রশাসন, সরকার এবং বছরের পর বছর ধরে নিয়োগ না করার নীতি।
সরকার তথা প্রশাসন সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে পারেনি। জুনিয়র ডাক্তাররাও অতি দ্রুত কাজে ফিরতে চান, পরিষেবা দিতে চান। তাঁরা আলোচনা করছেন কী ভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করে কাজে ফেরা যায়। এ সত্ত্বেও তাঁরা অবস্থানে রয়েছেন। কারণ, তাঁরা কাজে ফিরলে আগামী দিনে যে এই ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না, তার গ্যারান্টি কিন্তু নেই। এই আন্দোলন চলতে চলতেই এসএসকেএম হাসপাতালে আরএমও ডাক্তারের উপর, সিনিয়র ডাক্তারের উপর হামলা হয়েছে, বর্ধমান মেডিকেল কলেজে নার্সের উপর হামলা, মালদা মেডিকেল কলেজে হামলা, পিয়ারলেস নার্সিংহোমে এমার্জেন্সির একজন ডাক্তারকে একদল লোক বলে গেল ‘আর জি কর বানিয়ে দেব’– একের পর এক ঘটনা ঘটেই চলেছে। এর দায় কে নেবে? ডাক্তারদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি কে দেবে? যতক্ষণ না দোষীদের শাস্তি হচ্ছে, মোটিভটা সামনে আসছে, ততক্ষণ এই আন্দোলন চলবে।
এই যে আপনারা আন্দোলন করছেন, আন্দোলনে আপনারা সিনিয়র ডাক্তারদের, শিক্ষক চিকিৎসকদের অধ্যাপকদের তথা শিক্ষকদের সহযোগিতা কেমন পাচ্ছেন?
সহযোগিতা আমরা প্রথম দিন থেকেই পাচ্ছি। তাঁরা বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসা করছেন। হাসপাতালে ওপিডি চলছে, এমার্জেন্সি চালু আছে। তাঁরা সেখানে চিকিৎসা করছেন, তার পাশাপাশি আন্দোলন মঞ্চে এসেও সংহতি জানাচ্ছেন। আমাদের ডাকা মিছিলেও তারা অনেক সময় পা মেলাচ্ছেন। তাঁদের যথেষ্ট সমর্থন আমাদের প্রতি রয়েছে। আমরা সত্যের উপর দাঁড়িয়ে আছি। এই আন্দোলন নৈতিক ভিত্তি পেয়েছে। আমাদের আশা, ন্যায়বিচার মিলবেই।