একটা নামী সংবাদ চ্যানেলে কৃষক আন্দোলনের ওপর একটা ডকুমেন্টরি দেখছিলাম। অনিসন্ধিৎসু সাংবাদিক ঘুরে বেড়াচ্ছেন আন্দোলনস্থলের আনাচে কানাচে। সেখানেই খোঁজ পান এই মায়ের। নাম মোহিনী কওর, দিল্লির বাসিন্দা, আন্দোলনের প্রথম দিন থেকে আছেন সিংঘু বর্ডারে। বয়সের ভারে মিছিল-সভার মতো কর্মসূচিগুলোতে থাকতে পারেন না বলে নিরন্তর সেলাই করে চলেন আন্দোলনকারীদের পোশাক-পাগড়ি। সগর্বে নিজেকে আন্দোলনের অংশ হিসেবেও দাবি করেন। সাংবাদিক প্রশ্ন করেন বাড়ি ফিরতে ইচ্ছে করে না? বাকিটা তাঁরই জবানিতে…
…কী করবো বাড়ি ফিরে? একটিই সন্তান ছিলো আমার, মারা গেছে। আন্দোলনরত এই মুখগুলো– সবাই আমার সন্তানের মতোই যে দেখতে। বাঘের বাচ্চা আমার এই বাছারা।
একটু থেমে ফের শুরু করেন– এই একটা বছর আমাদের কত কিছু দেখিয়েছে। কিন্তু শীতের রাতের জলকামান বলুন বা হঠাৎ তাঁবুতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া– কিছুতেই তো আর ভয় হয় না, একদিন তো মরবই। … আমার এই যে বাছারা, যাদের দিন কাটতো মাখন খেয়ে, দুধে স্নান করে, তারা যখন একটার পর একটা শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা ট্রলির ওপর কাটিয়ে দিতে পারছে তখন আমার মতো মায়েদের ঘুম আসবে কী করে বলতে পারেন? মৃত্যু ছাড়া এখান থেকে আমরা কেউ নড়ছি না, আর কাপুরুষের মৃত্যু মরবই বা কেন? জয় আমাদের নিশ্চিত।
সাংবাদিক আবার প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন অশীতিপর বৃদ্ধার দিকে, তিন কালা কৃষি আইন রদ হওয়ায় আপনার প্রতিক্রিয়া কী? স্মিত হাসির সাথে জবাব আসে, সরকারকে ধন্যবাদ, তাঁরা আমাদের এক হতে বাধ্য করেছেন, আমরা কেউ আর ভিন্ন এলাকা, জেলা বা রাজ্যের বাসিন্দা নই, এক মানুষ, যারা একসাথে লড়েছি, একসাথে জিতেছি।
আন্দোলন কত অপূর্ব চরিত্রের জন্ম দিয়ে যায়। অন্তরালে থেকে যাঁরা এভাবেই সৃষ্টি করে চলেন সত্যিকারের আশা-ভালোবাসা-মাতৃত্বের!