ঝাড়খণ্ডে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে বিক্রি করে মুনাফা করার উদ্দেশ্যে আদানি গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে মুর্শিদাবাদের গ্রামবাসীদের মতামতের তোয়াক্কা না করে তাঁদের জমির ওপর টাওয়ার, হাই টেনশন তার টানার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
২ জুলাই সশস্ত্র পুলিশবাহিনী নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রশাসন কোনও আগাম নোটিস ছাড়াই ফরাক্কা ব্লকের দাদনটোলা, গোলাকান্দি সহ চারটি গ্রামের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে আম-লিচু বাগানের গাছ কেটে বিদ্যুতের তার টানতে গেলে গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ক্ষিপ্ত রাজ্য সরকারের পুলিশ নিরস্ত্র গ্রামবাসীদের ওপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে, বাড়ি বাড়ি হামলা চালিয়ে মহিলাদের আক্রমণ করে, গ্রামবাসীদের গ্রেপ্তার করে মিথ্যা মামলা দেয়। এই ঘটনা সিপিএম আমলে টাটার স্বার্থে সিঙ্গুরে জমি দখলের স্মৃতিকে উসকে দেয়।
পুলিশি অত্যাচারেই শেষ নয়, তার পরেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘরে ঘরে গিয়ে গ্রামবাসীদের ভয়-ভীতি, হুমকি দেওয়া চলতে থাকে। তা সত্ত্বেও এলাকাবাসীকে ভয় দেখানো যায়নি। গ্রামবাসীদের নিজস্ব সংগঠন ‘জমি-জীবন-জীবিকা লুট বিরোধী জনগণের কমিটি’ গোলাকান্দি গ্রামে ১৭ জুলাই একটি কনভেনশন ডাকে এবং তাতে সিপিডিআরএস সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, এআইকেকেএমএস সহ নানা কৃষক সংগঠনকে আহ্বান জানান। কনভেনশনে সিপিডিআরএস-এর পক্ষ থেকে সংগঠনের সহ-সভাপতি আইনজীবী অনুরাধা মণ্ডল, অধ্যাপক সৌম্য সেন সহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন। গ্রামবাসীরা তাদের লড়াইকে আরও শক্তিশালী করার শপথ নেন। কমিটির সাথে আলোচনা ছাড়া আদানি কোম্পানি বিদ্যুৎ সরবরাহের কোনও উদ্যোগ নিলে তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। কমিটির পাশে থেকে সমস্ত রকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় মানবাধিকার সংগঠন সিপিডিআরএস।
১৮ জুলাই, জঙ্গিপুর কোর্টে এই ঘটনার প্রেক্ষিতে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেওয়া ৭ জন গ্রামবাসীর শুনানির সময় সিপিডিআরএস-এর উদ্যোগে আইনজীবী অনুরাধা মণ্ডল, মির্জা নাসিরুদ্দিন, জিয়ারুল হক জামিনের জন্য দৃপ্ত সওয়াল করেন। তাদের যুক্তিতে বিচারপতি অভিযুক্তদের জামিন দেন এবং কর্পোরেটদের সামনে প্রশাসন যেভাবে মাথা নত করছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কমিটি ২০ জুলাই জেলাশাসক দপ্তর অভিযান করে।