অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ভারত-অস্ট্রেলিয়া একদিনের ম্যাচ চলাকালীন হঠাৎ ছন্দপতন– কিছু দর্শক মাঠে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ভারতীয় পুঁজিপতি আদানির বিরুদ্ধে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি মেলবোর্নেও ঘটেছে। দিল্লি অবরোধ করে কৃষকদের বিক্ষোভেও উঠে আসছে আদানি-আম্বানিদের লুঠের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ। সমুদ্রপারের অস্ট্রেলিয়াতেও বিক্ষোভ দেখল সারা বিশ্ব।
ভারতের মানুষের মনে পড়তে পারে, ২০১৪ সালে ভোটে জেতার পরেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আদানি কোম্পানির মালিককে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল, অস্ট্রেলিয়ায় কয়লা ব্যবসার বরাত তাঁকে পাইয়ে দেওয়া। আদানিদের প্রচুর ঋণ বকেয়া থাকায় ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক এই প্রকল্পে টাকা ঢালতে রাজি ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্টেট ব্যাঙ্কের তৎকালীন সিইও বাধ্য হয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় উড়ে গিয়ে ঋণ চুক্তিতে সই করে আসতে। সে টাকা শোধ হওয়ার কোনও প্রশ্নই উঠছে না। এদিকে আদানি গোষ্ঠী সে দেশের কাঁচামাল ও শ্রমশক্তি কাজে লাগিয়ে বিপুল মুনাফা করার জন্য উঠে- পড়ে লেগেছে। এর বিরুদ্ধে দেশের সর্বত্র জোরালো প্রতিবাদ উঠেছে, লাগাতার বিক্ষোভে স্লোগান উঠেছে ‘স্টপ আদানি’, ‘আদানি গো হোম’।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে আদানি কারমাইকেল কয়লাখনি গড়ার পরিকল্পনা করেছে। এতে দেড় হাজারের বেশি চাকরি এবং কয়লাখনি ও রেল প্রকল্পের জন্য ৭৯০০ কোটি টাকা চুক্তির ঘোষণা করেছে তারা। ভারতীয় একচেটিয়া মালিকদের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু বাজার দখলের আশায় আছে অস্ট্রেলিয়ার একচেটিয়া মালিকরা। তাই অস্ট্রেলিয়া সরকার আদানি গোষ্ঠীকে অবাধে ছাড় দিচ্ছে নানা ক্ষেত্রে। কিন্তু সাধারণ মানুষ বুঝছেন, সামান্য কর্মসংস্থানের লোভ দেখিয়ে ক্ষতিই হবে ব্যাপক। বিশেষজ্ঞদের মত, খনি থেকে তোলা কয়লা থেকে ৪.৬ বিলিয়ন টন বিষাক্ত কার্বন নির্গত হয়ে বাতাসে মিশবে। মানবশরীর ছাড়াও ব্যাপক ক্ষতি হবে কৃষি, জল ও পরিবেশের। কয়লাখনির দূষণে বিশ্বের অন্যতম বিশাল প্রবাল প্রাচীর (গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ) ধ্বংস হয়ে যাবে, বিশ্ব উষiরায়ন ঘটবে এবং স্থানীয় বেশ কিছু প্রজাতির উপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির কথা জানতে পেরে প্রবল বিক্ষোভে নেমে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। এ ছাড়াও এই প্রকল্পের জন্য আদানি গোষ্ঠী সাত্তর নদী থেকে বছরে ১২.৫ বিলিয়ন লিটার জল এবং গ্রেট আর্টেসিয়ান বেসিন থেকে অফুরন্ত জল তোলার লাইসেন্স পাওয়ায় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পরিবেশবিদরা ছাড়াও নানা শহরে দেশের অসংখ্য মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। আদানিকে জল তোলার লাইসেন্স দেওয়ার বিরুদ্ধে কোর্টে মামলাও ঠুকেছে স্থানীয় একটি সংস্থা।
সাম্রাজ্যবাদী পুঁজি কীভাবে নিজের দেশ এবং অপর দেশের মানুষকে লুঠ করে– এ তার জ্বলন্ত উদাহরণ।