এ রাজ্যের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন সেমেস্টার পরীক্ষা অনলাইনে নাকি অফলাইনে নেওয়া দরকার তা নিয়ে এখন বিতর্ক ও বিভ্রান্তি চরমে। ক্লাসরুম পঠনপাঠন বারবার ব্যাহত হওয়ায় বহু ক্ষেত্রেই সিলেবাস আশানুরূপ ভাবে এগোয়নি। তাই ছাত্রছাত্রীদের একাংশ অনলাইন পরীক্ষা চাইছে। আবার এ কথাও সত্য, সীমাবদ্ধ পরিকাঠামোয় অনলাইন পাঠ ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে একজন ছাত্রের যথাযথ মূল্যায়ন অসম্ভব। কেন্দ্র-রাজ্য দুই সরকারই চায় অনলাইনে শিক্ষা। সরকারের এই দৃষ্টিভঙ্গি এবং তার দরুন যে কোনও অজুহাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে অনলাইনে পঠন পাঠন চালিয়ে যাওয়ার নীতিই ছাত্রসমাজের একাংশকে অনলাইন পরীক্ষার দাবিতে সোচ্চার হতে বাধ্য করল। ৩০ মে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এআইডিএসও-র রাজ্য সম্পাদক কমরেড মণিশঙ্কর পট্টনায়ক এ কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, এআইডিএসও প্রথম থেকেই বলে আসছে সামগ্রিকভাবে শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীর ভবিষ্যতের দিক থেকে দেখলে অনলাইন ব্যবস্থা ক্লাসরুম পঠন-পাঠন পরীক্ষা ব্যবস্থার কোনও বিকল্প হতে পারে না। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও দৃঢ়তার সঙ্গে অফলাইন পরীক্ষার কথা বলেছেন। আমরা মনে করি উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সিলেবাস খানিকটা কমিয়ে অফলাইন পরীক্ষার কথাই বিবেচনা করা উচিত।
দ্বিতীয়ত, এসএসসি নিয়ে ভয়াবহ দুর্নীতির যে চিত্র ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে তার দায় রাজ্য সরকার কোনও ভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। এসএসসি দুর্নীতিতে যুক্ত মন্ত্রী, আমলা, সরকারি কর্তা এবং এর সাথে যুক্ত সব ব্যক্তিদের অবিলম্বে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। মেধা তালিকাভুক্তদের স্বচ্ছভাবে অতি দ্রুত নিয়োগ করতে হবে। এই দাবিতে আমাদের আন্দোলনে পুলিশের আক্রমণের আমরা তীব্র নিন্দা করছি। তদন্ত প্রক্রিয়াকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে গিয়ে দোষী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি ও মেধাতালিকা অনুযায়ী শূন্যপদে নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।
তৃতীয়ত, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য পদে মুখ্যমন্ত্রীকে বসানোর যে সিদ্ধান্ত সম্প্রতি রাজ্য মন্ত্রীসভা গ্রহণ করেছে তার আমরা তীব্র বিরোধিতা করছি। আচার্য পদটি সম্পূর্ণ শিক্ষা সংক্রান্ত পদ এবং এতদিন সেই পদে রাজ্যপালের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে রাখা যুক্তিসঙ্গত ছিল না। আমরা বরাবরই তার বিরোধিতা করেছি। রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের বিরোধকে ভিত্তি করে মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য করার এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পরিপন্থী। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকার তথা শাসক দলের দলতন্ত্র চূড়ান্তভাবে কায়েম হবে, শিক্ষার স্বাধিকারের ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট থাকবে না। কাজেই একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদেরই আচার্য হওয়া উচিত।
চতুর্থত, গরম আবহাওয়াকে অজুহাত করে রাজ্য সরকার স্কুলে-কলেজে দীর্ঘ ৪৫ দিন ছুটি ঘোষণা করেছে। কিন্তু আবহাওয়া স্বাভাবিক হওয়ার পরেও বিভিন্ন স্তরের ছাত্র, শিক্ষক, অধ্যাপক, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের দাবি মেনে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে কোনও রকম ঘোষণা করছে না। আসলে এর মধ্য দিয়ে সরকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাব্যবস্থা যতদূর সম্ভব বন্ধ করে পুঁজিপতি, ব্যবসায়ীদের মুনাফার লক্ষ্যে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে চাইছে।
পঞ্চমত, শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুরোপুরি পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিয়ে গরিব মধ্যবিত্তদের কাছ থেকে শিক্ষার শেষ সুযোগটিকে কেড়ে নেওয়ার নীল নক্সা জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০, যা কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যে নানা ভাবে সমগ্র দেশে চালু করতে বদ্ধপরিকর। তৃণমূল কংগ্রেস সরকার তার বিরোধিতা না করে রাজ্যে চালু করতে খুবই তৎপর। পিপিপি মডেলের মধ্য দিয়ে স্কুল বিক্রির চক্রান্ত, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাব মতো স্কুল শিক্ষার সিলেবাস পরিবর্তন সহ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের শিক্ষা সম্পর্কিত এই সব ভ্রান্ত নীতির প্রতিবাদে ১ জুন রাজ্যব্যাপী ছাত্র বিক্ষোভে সামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।