
রাজ্যের সাধারণ মানুষ যখন জীবনের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি সামাল দিতে নাজেহাল এবং ভোটসর্বস্ব দলগুলি সাম্প্রদায়িক জিগির তুলতে, কেউ তার পাল্টা জিগির তুলেআসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের ঘুঁটি সাজাতে ব্যস্ত তখন সেই সমস্যাগুলি নিয়ে এস ইউ সি আই (কমিউনিস্ট)-এর ডাকে ৩ এপ্রিল জেলায় জেলায় আইন অমান্য, বিক্ষোভে তোলপাড় হল রাজ্য। লাগাতার আন্দোলনে শামিল। ৭৪৮টি জীবনদায়ী ওষুধ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি রোখা, অভয়ার ন্যায়বিচার, জাল ওষুধ চক্র বন্ধ, বেকারি, সীমাহীন দুর্নীতি, ধর্ষণ, জাতীয় ও রাজ্য শিক্ষানীতি-কৃষিনীতি বাতিল, কৃষকের ফসলের ন্যায্য দাম সুনিশ্চিত করা, মেদিনীপুর কোতোয়ালি মহিলা থানায় ছাত্রীদের উপর নৃশংস অত্যাচারে যুক্ত দোষী পুলিশ অফিসারদের শাস্তি, প্রিপেড স্মার্ট মিটার বসানো বন্ধ, রাজস্ব বৃদ্ধির অজুহাতে মদের দোকান চালু না করার দাবিতে ও শাসক দলগুলির সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ষড়যন্ত্র রুখতেই ৩ এপ্রিল এসইউসিআই(কমিউনিস্ট) জেলায় জেলায় আইন অমান্য এবং কলকাতায় বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়। জেলাগুলিতে হাজার হাজার মানুষ আইন অমান্য করে গ্রেফতার বরণ করেন। বহু জায়গাতেই পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে। এই উপলক্ষে রাজ্য জুড়ে গত এক মাস ধরে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়। সর্বত্রই দলের কর্মসূচি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ করা গেছে। তাঁরা দলের বক্তব্য ধৈর্য ধরে শুনেছেন, পরামর্শ দিয়েছেন, অর্থ দিয়েছেন এবং দলের আন্দোলনের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। অন্য দিকে শাসক দলগুলির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রতিযোগিতায় প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বীরভূমঃ জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শত শত ছাত্র যুব মহিলা শ্রমিক কৃষক সিউড়ি পুলিশ লাইনের সামনে থেকে এক সুসজ্জিত স্লোগান মুখরিত মিছিল করে শহর পরিক্রমার পর ডিএম দপ্তরে উপস্থিত হন। রাস্তার দু-পাশের মানুষ মিছিলকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। মিছিল প্রশাসনিক দপ্তর অবরোধ করতে গেলে পুলিশ কর্মীদের সাথে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলতে থাকা বিক্ষোভে বক্তারা ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিলের জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ী করে বলেন, কর্মচ্যুত যোগ্য শিক্ষকদের দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে হবে। দুর্নীতিতে যুক্ত শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের কঠোর শাস্তি চাই। সেখান থেকে মিছিল সিউড়ি বাসস্ট্যান্ডে এসে রাস্তা অবরোধ করে।
পূর্ব মেদিনীপুরঃ অন্যান্য দাবির সঙ্গে কোতোয়ালি থানায় আন্দোলনকারী গবেষক ছাত্রীদের উপর পুলিশী নির্মম অত্যাচারের বিচার, জেলার বন্যা প্রতিরোধ ও জলনিকাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধান, কাঁথির জুনপুটে মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র বন্ধ সহ হরিপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিল, সরকারি উদ্যোগে বহুমুখী হিমঘর এবং গবেষণাগার নির্মাণ, মহাত্মা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভবন নির্মাণ করে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া, জেলায় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়-আইন ও আর্ট কলেজ স্থাপনের দাবিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাশাসক দপ্তরে আইন অমান্যে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হন। মিছিলে দাবি ওঠে, হলদিয়া-নন্দীগ্রাম তেরপেখিয়া-ট্যাংরাখালি-পুরসাঘাট সহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলিতে নদীর উপর কংক্রিটের ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে, পাঁশকুড়া-তমলুকের ধারিন্দা-মানিকতলা ও তালপুকুরে রেল লাইনের উপর ফ্লাইওভার নির্মাণ করতে হবে ও ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কের দেউলিয়া এবং ১১৬বি জাতীয় সড়কে মহাশ্বেতা সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্রসিং-এ ফ্লাইওভার অথবা আন্ডারপাস নির্মাণ করতে হবে। শুরুতে নিমতৌড়ি মোড়ে বিক্ষোভ সভায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা উত্তর ও দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা কমিটির সম্পাদক প্রণব মাইতি ও অশোকতরু প্রধান ও দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমল সাঁই। আইন অমান্যকারীদের এক সুসজ্জিত মিছিল বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রমা করে জেলাশাসক দপ্তরে পৌঁছে পুলিশি কর্ডন ভেঙে এগিয়ে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাধে। পুলিশের আক্রমণে ৪ জন আইন অমান্যকারী আহত হন। ১২৩৭ জন আইন অমান্যকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

পশ্চিম মেদিনীপুরঃ সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চালানো, ডেবরা-বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ, অপারেশন চালু প্রভৃতি দাবিতে পশ্চিম মেদিনীপুর উত্তর ও দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার পক্ষ থেকে একটি সুসজ্জিত মিছিল মেদিনীপুর শহর পরিক্রমা করে জেলাশাসক দপ্তরে প্রবল বিক্ষোভ দেখায় এবং অফিস অবরোধ করে। মিছিলে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ আন্দোলনে অন্য মাত্রা যোগ করে। নেতৃত্ব দেন পশ্চিম মেদিনীপুর উত্তর ও দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার দুই সম্পাদক কমরেড নারায়ণ অধিকারী ও কমরেড তুষার জানা।
বাঁকুড়াঃ প্রচণ্ড গ্রীষ্মের দাবদাহ উপেক্ষা করে বাঁকুড়ার বিভিন্ন ব্লক থেকে আসা শত শত কর্মী-সমর্থক বাঁকুড়া শহরের হিন্দু হাইস্কুলের সামনে থেকে মিছিল করে শহর পরিক্রমা করে জেলাশাসক দপ্তরে পৌঁছলে পুলিশ ব্যারিকেড করে বাধা দেয়। ব্যারিকেড সরিয়ে মিছিল ভেতরে ঢুকে পড়ে। ৫ জনের প্রতিনিধি ডিএমকে স্মারকলিপি দেন। জেলা সম্পাদক জয়দেব পাল সহ জেলা নেতারা কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন।

বারাসাত-বনগাঁঃ বারাসাত স্টেশন চত্বর থেকে মিছিল ডিএম অফিসের গেটে পৌঁছে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শতাধিক কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড গোপাল বিশ্বাস সহ জেলা কমিটির সদস্য ও কর্মীদের পাশাপাশি বহু সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
ব্যারাকপুরঃ এসডিও অফিসের সামনে কর্মী ও নেতৃবৃন্দ আইন অমান্য করেন।
বসিরহাটঃ বসিরহাট টাউন হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল মহকুমা শাসকের দপ্তরে পৌঁছলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশ শতাধিক কর্মীকে গ্রেফতার করে।
হাওড়াঃ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে হাওড়া ময়দানে সংক্ষিপ্ত সভার পর জেলা সম্পাদক সৌমিত্র সেনগুপ্ত, জেলা কমিটি সদস্য কমরেড জৈমিনী বর্মন ও অলক ঘোষের নেতৃত্বে এক সুসজ্জিত মিছিল জেলাশাসকের দপ্তরে পৌঁছে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়।
হুগলিঃ চুঁচুড়া তোলাফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ঘড়ির মোড়ে পৌঁছে মিছিল ব্যারিকেড ভাঙলে এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন জেলা সম্পাদক কমরেড সন্তোষ ভট্টাচার্য।
দার্জিলিংঃ শিলিগুড়ির এয়ার ভিউ মোড় থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল কোর্ট মোড়ে পৌঁছলে দেখা যায় পূর্বঘোষিত হওয়া সত্তে্বও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা রাখেনি। প্রতিবাদে ভেনাস মোড় অবরোধ করা হয়। পুলিশ আন্দোলনকারী পাঁচ শতাধিক কর্মীকে গ্রেপ্তারের কথা ঘোষণা করে এবং জেলা কমিটির সদস্য সহ ছ’জনকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন জেলা সম্পাদক কমরেড গৌতম ভট্টাচার্য, জেলা কমিটির সদস্য কমরেডস তন্ময় দত্ত, জয় লোধ, আবুল কাশেম, জয়ন্তী ভট্টাচার্য প্রমুখ।
জলপাইগুড়িঃ জেলাশাসকের কার্যালয়ে আইন অমান্য হয়। সমস্ত বন্ধ চা বাগান অবিলম্বে খোলা, চা-বাগানের ৩০ শতাংশ জমি অধিগ্রহণ করে চা পর্যটন কেন্দ্র করার বিরুদ্ধে এবং প্রান্তিক চা-চাষিদের কাঁচা পাতার সহায়ক মূল্য চালুর দাবিতে শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র, যুবক, রিক্সাচালক সহ বিভিন্ন পেশার প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষ অংশ নেন। মিছিল শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে জলকামান সহ বিশাল পুলিশ ব্যারিকেড বাধা দেয়। জেলা সম্পাদক কমরেড সুজিত ঘোষ সহ ১৮ জন কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।
আলিপুরদুয়ারঃ চৌপথি থেকে এক সুসজ্জিত মিছিল কোর্টমোড়ে জেলাশাসক দপ্তর ডুয়ার্স কন্যায় আইন অমান্য করে। প্রশাসন শতাধিক কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করে। নেতৃত্বে ছিলেন জেলা সম্পাদক কমরেড অভিজিৎ রায়, জেলা কমিটির সদস্য কমরেড তরণী রায়, কমরেড পীযূষকান্তি শর্মা ও অফিস সম্পাদক কমরেড মৃণালকান্তি রায়।
কোচবিহারঃ কোচবিহার ফাঁসির ঘাটে ব্রিজ নির্মাণ, বামনহাট থেকে শিলিগুড়ি (ভায়া ফালাকাটা) ইলেকট্রিক লোকাল ট্রেন চালু, বিকল্প ব্যবস্থা না করে বাঁধের পাড়ের বস্তি উচ্ছেদ না করা সহ জেলার নানা দাবি নিয়ে ৩ এপ্রিল কোচবিহারে আইন অমান্য কর্মসূচি পালিত হয়। রামমোহন স্কোয়ারে সংক্ষিপ্ত সভার পর রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য, জেলা সম্পাদক কমরেড শিশির সরকারের নেতৃত্বে দু-হাজারের বেশি মানুষের মিছিল শহর পরিক্রমা করে সাগরদিঘির পাড়ে সদর মহকুমা শাসকের দপ্তরের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আইন অমান্য করে। পুলিশের সঙ্গে কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়। জেলা সম্পাদক কমরেড শিশির সরকার সহ প্রায় এক হাজার আন্দোলনকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
উত্তর দিনাজপুরঃ রায়গঞ্জে যানজট নিরসন, রায়গঞ্জ-কালিয়াগঞ্জ-বুনিয়াদপুর রেল যোগাযোগ, গোয়ালপোখরে কলেজ নির্মাণ, বারসই সড়ক যোগাযোগ চালু, আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনেজ ব্যবস্থা চালু সহ নানা দাবিতে সুসজ্জিত এক মিছিল রায়গঞ্জ মার্চেন্ট ক্লাব ময়দান থেকে বিদ্রোহী মোড, রায়গঞ্জ বাসস্ট্যান্ড হয়ে কোর্টের সামনে পৌঁছালে রায়গঞ্জ থানার আইসি সকলকে গ্রেফতার করেন। পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কর্মসূচি শেষে সকলে ফিরে গেলে হঠাৎ রাত ১০টায় দলের রায়গঞ্জ লোকাল কমিটির সম্পাদক কমরেড গোপাল চুনাড়িকে পুলিশ বাড়ি থেকে থানায় ডেকে নিয়ে যায় এবং গ্রেফতার করে। দলের জেলা সম্পাদক, জেলা কমিটির প্রবীণ সদস্য কমরেড সনাতন দত্ত এবং এআইডিএসও উত্তর দিনাজপুর জেলা কমিটির সম্পাদক কমরেড শ্যামল দত্ত সহ মোট ১০০ জনের নামে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করে পুলিশ। অথচ এই আইন অমান্যের কথা আগেই জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, এসপি ও আইসিকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছিল। পুলিশের অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী আচরণের তীব্র নিন্দা জানিয়ে পর দিন জেলা জুড়ে প্রতিবাদ দিবস হয়। দলের পক্ষ থেকে অবিলম্বে নেতা-কর্মীদের উপর থেকে সমস্ত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করা হয়। সাধারণ মানুষ পুলিশের এই আচরণকে তীব্র ধিক্কার জানায়।

দক্ষিণ দিনাজপুরঃ প্রায় একশো কর্মী-সমর্থক বালুরঘাট শহরে জেলাশাসক দপ্তরে আইন অমান্য করেন। জেলার বিভিন্ন ব্লক থেকে কর্মীরা শহরে স্টেট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সমবেত হন। সেখান থেকে বিভিন্ন দাবি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুনে সজ্জিত মিছিল জেলাশাসক দপ্তরে পৌঁছে পুলিশ ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যায়। নেতৃত্ব দেন জেলা কমিটির সদস্যরা। বিক্ষোভে মহিলাদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য।
মালদাঃ এ দিন দলের উদ্যোগে জেলাশাসক দপ্তরে বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। জেলা সম্পাদক গৌতম সরকারের নেতৃত্বে একটি দল অতিরিক্ত জেলাশাসকের সঙ্গে দাবিসনদ নিয়ে আলোচনা করেন। মোথাবাড়িতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য প্রশাসনিক তৎপরতা, গঙ্গাভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধান, শহরে জঞ্জাল কর বাতিল, সুষ্ঠু জল নিকাশি ব্যবস্থা এবং জেলার কৃষকদের ন্যায্য ফসলের দামের বিষয়গুলি সুনিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। দাবিগুলির সঙ্গে সহমত জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার কথা জানান অতিরিক্ত জেলাশাসক।
মুর্শিদাবাদঃ বিড়ি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, ডোমকল মহকুমাকে রেলপথে সংযুক্তিকরণ, বহরমপুর সদর হাসপাতালকে পুনরায় চালু করা সহ জনজীবনের নানা দাবি নিয়ে ৩ এপ্রিল মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর, লালবাগ এবং জঙ্গিপুর মহকুমায় আইন অমান্য হয়। বহরমপুরে দলের কর্মীরা পুলিশের প্রথম ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে গেলে দ্বিতীয় ব্যারিকেডের সামনে থেকে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও বহরমপুর কো-অর্ডিনেটর কমরেড অভিজিৎ মণ্ডল সহ ৩৬ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। লালবাগ এসডিও দপ্তরের সামনে আইন অমান্যে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙলে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও মুর্শিদাবাদ কো-অর্ডিনেটর কমরেড মনিরুল ইসলাম সহ ২৫০ জনকে গ্রেফতার করে। তিন জায়গাতেই শুরুতে সহস্রাধিক মানুষের দাবি সংবলিত সুসজ্জিত মিছিল শহর পরিক্রমা করে।

নদিয়া উত্তরঃ কৃষ্ণনগর-করিমপুর রেল লাইন স্থাপন, বল্লভপাড়া ঘাটের ব্রিজ নির্মাণ সহ নানা দাবিতে পলাশিতে বিক্ষোভ মিছিল ও জাতীয় সড়ক অবরোধ হয়। নেতৃত্ব দেন জেলা সম্পাদক কমরেড মহিউদ্দিন মান্নান, হররোজ আলি সেখ, বশিরউদ্দিন আহমেদ ও কামালউদ্দিন সেখ সহ জেলা নেতৃবৃন্দ।
নদিয়া দক্ষিণঃ করিমপুর-কৃষ্ণনগর রেল লাইন চালু, বেলডাঙা রেলগেটে উড়ালপুল নির্মাণ, অঞ্জনা খাল সংস্কার, যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি বাতিলকে ধিক্কার জানিয়ে জেলাশাসক দপ্তরে গণবিক্ষোভ হয়। বক্তব্য রাখেন দলের নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক মৃদুল দাস, জেলা কমিটির সদস্য অপর্ণা গুহ প্রমুখ। জেলাশাসক দপ্তরে ডেপুটেশন দেন জেলা কমিটির সদস্য কমল দত্ত, জাকিমুদ্দিন শেখ, বরুণা দত্ত, চন্দন চক্রবর্তী।
পুরুলিয়া উত্তরঃ জেলার খরা সমস্যার স্থায়ী সমাধান, দূষণ রোধ, পথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও বিদ্যুতের স্মার্ট মিটার বাতিল সহ জনজীবনের জ্বলন্ত সমস্যা সমাধানের দাবিতে রঘুনাথপুর মহকুমা শাসকের দপ্তরে আইন অমান্য হয়। দলীয় কার্যালয় থেকে সুসজ্জিত মিছিল বরাকর রোড ধরে এসডিও অফিসে পৌঁছে গেটে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখায় এবং সেখানেই রাস্তার উপর কর্মীরা বসে পড়লে রঘুনাথপুর সাঁওতালডি রাজ্য সড়ক অবরুদ্ধ হয়। নেতৃত্ব দেন জেলা সম্পাদক লক্ষ্মী নারায়ণ সিনহা।
পুরুলিয়া দক্ষিণঃ জেলা সদর পুরুলিয়ায় দলের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ ও আইন অমান্য কর্মসূচি হয়। উপস্থিত কয়েকশো কর্মী-সমর্থক একের পর এক পুলিশি ব্যারিকেড ভেঙে এগোতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়। পরে রাস্তা অবরোধ করে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ চলে।
কাকদ্বীপঃ অন্যান্য দাবির সঙ্গে সমস্ত উপকূলীয় বাঁধের স্থায়ী মেরামত, রায়পুরের বাজি কারখানায় ৮ জনের মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে দক্ষিণ ২৪ পরগণায় দলের কাকদ্বীপ সাংগঠনিক জেলা কমিটির পক্ষ থেকে শহরের দীর্ঘ পথ ধরে মিছিলের পরে কাকদ্বীপ এসডিও দপ্তরে কয়েকশো কর্মী-সমর্থক আইন অমান্য করেন। ব্যারিকেড ভেঙে আন্দোলনকারীরা এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয়। প্রতিবাদে সেখানেই সভা শুরু হয়। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন দলের রাজ্য কমিটির সদস্য ও কাকদ্বীপ সাংগঠনিক জেলা সম্পাদক কমরেড সুজিত পাত্র সহ জেলা নেতৃবৃন্দ।
বারুইপুরঃ সাংগঠনিক জেলা কমিটির পক্ষ থেকে সর্বত্র উঁচু নদীবাঁধ নির্মাণ ও রাস্তা সারাই, ৮০ নং রুটে বাস চালু, যাত্রী অনুপাতে ট্রেন সংখ্যা বাড়ানো সহ বিভিন্ন দাবিতে ৩ এপ্রিল সহস্রাধিক সাধারণ মানুষ বারুইপুর রেল ময়দানে জমায়েত হয়ে এসডিও অফিসের সামনে আইন অমান্য করেন।
ক্যানিংঃ মজবুত কংক্রিটের নদী বাঁধ নির্মাণ, হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা ডাক্তার নার্স সহ উন্নত চিকিৎসা, ব্লকে হিমঘর স্থাপন, ক্যানিং লাইনে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো ও গদখালিতে ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে ৩ এপ্রিল ক্যানিং হাসপাতাল মোড় থেকে কয়েকশো মানুষের এক মিছিল শহর পরিক্রমা করে এসডিও অফিসে পৌঁছলে পুলিশ আটকানোর চেষ্টা করে। আন্দোলনকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আইন অমান্য করে। কমরেড ইয়াহিয়া আখন্দ ও কমরেড নারায়ণ নস্কর বক্তব্য রাখেন।

ডায়মন্ড হারবারঃ স্থায়ী নদী বাঁধ নির্মাণ, শিয়ালদা দক্ষিণে রেলপথ সম্প্রসারণ, ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি, সেচের জল ও নিকাশির সুব্যবস্থা, হিমঘর নির্মাণ, শ্রমনির্ভর শিল্প স্থাপন, ব্লক হাসপাতালগুলির সার্বিক উন্নয়ন, সুন্দরবনে নদীতে মানুষের অধিকার রক্ষা এবং জীবন-জীবিকার অনুসারী শিল্প স্থাপন, মদের প্রসার বন্ধ করার দাবিতে ডায়মন্ডহারবার মহকুমা শাসকের দপ্তরে গণআইন অমান্য সংগঠিত হয়। পাঁচ শতাধিক মানুষ সামিল হন। পরে জাতীয় সড়ক অবরোধ হয় এবং এসডিও দপ্তরের সামনে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের ধস্তাধস্তি হয়। নেতৃত্ব দেন জেলা কমিটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কমরেড গুণসিন্ধু হালদার, বিশ্বনাথ সরদার, জ্ঞানতোষ প্রামাণিক, শ্যামল প্রামাণিক, সঞ্জয় মণ্ডল প্রমুখ।
কলকাতাঃ এ দিন কলেজ স্কোয়ার থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল এসপ্ল্যানেডে গিয়ে শেষ হয়। শুরুতে বক্তব্য রাখেন রাজ্য সম্পাদক কমরেড চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য ও অন্য নেতৃবৃন্দ। রাজ্য সম্পাদক দাবি জানান, চাকরি বাতিল হওয়া শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের দায়িত্ব রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন কমরেডস অমিতাভ চ্যাটার্জী, অশোক সামন্ত, তরুণ মণ্ডল, ধ্রুবজ্যোতি মুখার্জী, সুব্রত গৌড়ী, নভেন্দু পাল প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।