স্থায়ী পদে কখনও চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করা যায় না– সম্প্রতি নিয়োগ সংক্রান্ত একটি মামলার শুরুতেই এ কথা বলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবগণনম। তিনি বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কোনও রীতি হতে পারে না। এই ধরনের নিয়োগ ব্যতিক্রম বলে গণ্য হতে পারে। তিনি ক্ষোভের সাথে আরও বলেন, কর্মীর অভাবে জেলা কোর্টগুলি ধুঁকছে। ফাইল বয়ে আনার গ্রুপ ডি কর্মী পর্যন্ত নেই। সরকারি উকিলকে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, আপনারা তো নিয়োগের ক্ষেত্রে চুপ করে বসে আছেন (সূত্রঃ আনন্দবাজার পত্রিকা, ৪ সেপ্টেম্বর ’২৪)।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির এই মন্তব্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্যের তৃণমূল সরকার কী অপদার্থতার পরিচয় দিয়েছে! শুধু কোর্ট নয়, প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মীসংখ্যার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। কেন সরকার তৎপরতার সাথে নিয়োগ করে না? ন্যূনতম যদি কিছু নিয়োগ করেও, কেন স্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ করে না? এর ফলে জনপরিষেবা যে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে,তা নিয়ে সরকার কেন এতটুকু ভাবিত হয় না?
এর মূলে রয়েছে সরকারের জনবিরোধী নীতি। সরকারও একটা পুঁজিবাদী মালিকের মতো কর্মী ও কর্মসংকোচনের নীতি নিয়ে চলছে। পুঁজিপতিরা সর্বোচ্চ মুনাফা করতে সর্বদা ব্যয় সঙ্কোচের নীতি নিয়ে চলে। তারই অন্যতম অঙ্গ হল নূ্যনতম কর্মী নিয়োগ এবং স্থায়ী পদগুলিকে অস্থায়ী করে দেওয়া। স্থায়ী পদে নিয়োগ হলে শ্রম আইন অনুযায়ী আর্থিক যেসব শর্ত মালিককে মানতে হয়, অস্থায়ী নিয়োগ হলে শ্রমিকদের আর তা দিতে হয় না। ফলে মুনাফা সর্বাধিক করতেই সর্বত্র পুঁজিপতিরা এই নীতি নিয়ে চলছে। পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন তত্ত্ব এই নীতিতেই সিলমোহর দিয়েছে। বিশ্বের সব দেশেই তার প্রয়োগ জনপরিষেবাকে ব্যাহত করছে। নূ্যনতম স্থায়ী কর্মী ও সর্বাধিক অস্থায়ী কর্মী নিয়ে চলছে এক একটা প্রতিষ্ঠান।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পরিচালক সরকারও জনস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে একই নীতি নিয়ে চলছে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ব্যাপক হারে শিক্ষকশূন্যতায় ধুঁকছে। এর ফলে শিক্ষাদান মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীরা সরাসরি বঞ্চিত হচ্ছে। আর শিক্ষিত চাকরিপ্রার্থীরা হারাচ্ছে কাজের সুযোগ। রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে এই যে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটছে আর জি করের ঘটনাকে কেন্দ্র করে, তার পিছনে এই ধরনের বঞ্চনার বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্রোধও কাজ করছে।
শূন্য পদে নিয়োগের দাবিতে, বেতন বৈষম্য অবসানের দাবিতে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়বেই। চাকরির স্থায়ী শূন্য পদগুলি নানা অজুহাতে অপূরিত রেখে দেওয়ার অধিকার একটা সরকারের নেই। অতি দ্রুত রাজ্য সরকারকে এই সব শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। রাজ্যের তৃণমূল সরকার যদি দ্রুত এ সব পূরণ না করে তবে যুব বিক্ষোভ আরও ব্যাপক হবে।