অর্ধনির্মিত রামমন্দির উদ্বোধন ভোটের দিকে তাকিয়ে —বলছেন শঙ্করাচার্যরাও

অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তার আগেই প্রধানমন্ত্রীর মতো একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির হাতে মন্দির উদ্বোধনের তীব্র সমালোচনা করলেন শঙ্করাচার্য বলে পরিচিত ধর্মগুরুরা। পুরীর শঙ্করাচার্য স্বামী নিশ্চলানন্দ সরস্বতী সংবাদমাধ্যমকে জানান, এই উদ্বোধনে তিনি যাবেন না। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, এর উদ্দেশ্য রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি। তিনি বলেছেন, যা ছিল সন্ন্যাসী, ধর্মের প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের কাজ, এখন তা করছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর নিজের সীমার মধ্যে থেকে কাজ করা উচিত। সংবিধানসম্মত বিধি-নিষেধ পালন করা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব। এই বিধিকে উপেক্ষা করে নিজের প্রচারের চেষ্টা করা উচিত নয়।’’ বলেছেন, ‘‘সব ব্যাপারে দাদাগিরি করা এবং নেতৃত্ব দিতে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর কাজ নয়! এমন কাজ করা উন্মাদের লক্ষণ’!’ (আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪)

একই সুরে সমালোচনা করেন উত্তরাখণ্ডের জ্যোতিষ পীঠের শঙ্করাচার্য স্বামী অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী। তাঁর বক্তব্য, মন্দির উদ্বোধনে কোনও পরম্পরাও অনুসরণ করা হচ্ছে না। ভারতে রাজনৈতিক নেতা এবং ধর্মীয় নেতারা ছিলেন পৃথক। কিন্তু এখন রাজনৈতিক নেতারাই ধর্মীয় নেতা হয়ে যাচ্ছেন। এটা ভারতের ঐতিহ্যবিরোধী এবং রাজনৈতিক লাভের জন্যই তা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মন্দির সম্পূর্ণ নির্মাণের আগে তার অভিষেক হতে পারে না। এটা হিন্দু ঐতিহ্যের বিরোধী। (দ্য হিন্দু ১০-১-২০২৪)

আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন দ্বারকার সারদাপীঠের (গুজরাট) শঙ্করাচার্য স্বামী সদানন্দ সরস্বতী। কারণ মন্দির উদ্বোধন ঘিরে বিতর্ক রয়েছে। মন্দিরের দখল চলে যাচ্ছে ‘অ-ধার্মিক শক্তি’র হাতে। নষ্ট হচ্ছে পবিত্রতা! (দ্য টেলিগ্রাফ ১৩-১-২০২৪)

একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধর্ম হওয়া উচিত মানুষের ব্যক্তিগত বিষয়। তাকে কখনওই রাজনীতির বিষয় করা উচিত নয়। করলে তা যেমন একদিকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষতার ঘোষিত নীতিকে লঙ্ঘন করে, তেমনই তা সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট হয়। বিজেপি নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রামমন্দির উদ্বোধন নিয়ে সেই কাজটিই করছেন। স্বাভাবিক তাঁর এই কার্যকলাপ ‘রাজনৈতিক হিন্দুত্ব’ বলে সচেতন মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছে। অর্থাৎ ধর্ম নয়, রাজনীতিই রামমন্দির তৈরি এবং তার অকাল উদ্বোধনের আসল লক্ষ্য। অথচ দেশের একজন প্রধানমন্ত্রীর কাজ নাগরিকদের জীবনের বাস্তব প্রয়োজনগুলি– খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান-কর্মসংস্থান যাতে অব্যাহত থাকে তার জন্য নিরলস কাজ করে যাওয়া। দেশের মানুষ দেখছে, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সেই কাজটিতেই তিনি সবচেয়ে অবহেলা করছেন। ফলে মানুষের দুর্ভোগ ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। স্বাভাবিক ভাবেই যাঁরা নিজেদের ধর্মপ্রাণ হিন্দু বলে মনে করেন, যাঁদের সমর্থনকে ভোটব্যাঙ্কে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী তথা বিজেপি সরকারের এই কর্মকাণ্ড, তাঁদের ভাবতে হবে, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর এই কাজকে সমর্থন করে এই স্রোতেই ভাসবেন, না কি ধর্মের নামে এই অন্যায় রাজনীতির প্রতিবাদে সোচ্চার হবেন?