Breaking News

অভিবাদন তোমাদের এই লড়াইকে

১১ মার্চ জেলায় জেলায় প্রতিবাদ দিবসে কৃষ্ণনগরে বিক্ষোভ

যাদবপুর কাণ্ডের প্রতিবাদে ৩ মার্চ এআইডিএসও-র ডাকা ছাত্র ধর্মঘটকে প্রতিহত করতে পুলিশ এবং শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীরা একযোগে রাজ্যের প্রায় সর্বত্র ধর্মঘটী ছাত্র-ছাত্রীদের উপর যে অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে তা টিভিতে দেখে অনেকেই শিহরিত হয়েছেন। অত্যাচারী শাসকেরা যুগে যুগে কী ভাবে গণআন্দোলনের উপর দমন-পীড়ন চালায়, এটা তারই আর একটা উদাহরণ। ৫ মার্চ টিভিতে অত্যাচারিত ছাত্রীদের দেওয়া বর্ণনাতে জানা গেল, ধর্মঘটের সমর্থনে পথে নামা বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, গবেষক ছাত্রী সুশ্রীতা সরেন, তনুশ্রী বেজ, বর্ণালী নায়ক ও রানুশ্রী বেজকে মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার মহিলা ওসি বেল্ট দিয়ে পিটিয়ে, বুটের লাথি মেরেই ক্ষান্ত হননি, উচ্চস্বরে গান চালিয়ে উল্লাস করেছেন, গুমখুনের ভয় দেখিয়েছেন, এমনকি আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়ে বলে সুশ্রীতাকে জাত তুলে অশ্রাব্য গালিগালাজ করেছেন, আর এই কুকীর্তিকে আড়াল করতে এই সমস্ত কিছুই তিনি করেছেন সিসিটিভি আওতার বাইরে– তখন লজ্জায়, ঘৃণায় রাজ্যবাসীর মাথা হেঁট হয়ে গেছে।

১১ মার্চ জেলায় জেলায় প্রতিবাদ দিবসে এসপ্ল্যানেডে বিক্ষোভ

দেখতে দেখতে অজান্তেই বহু মানুষের চোখে জল এসেছে। সকলেই ভেবেছেন, এ কোন সভ্য সমাজে আমরা বাস করছি, যেখানে একজন কর্তব্যরত মহিলা পুলিশ অফিসার আন্দোলনকারী ছাত্রীদের উপর এমন নৃশংস অত্যাচার চালাতে পারেন! পদ ও ক্ষমতার নেশায় মত্ত মহিলা অফিসার শুধু সভ্যতার সমস্ত সীমা অতিক্রম করেননি, সাথে তিনি তার বিকৃত মানসিকতার পরিচয়ও দিয়েছেন। নির্যাতিতাদের শরীরের ক্ষত হয়তো একদিন ঠিক হবে, কিন্তু এই ঘটনায় সমাজ মননে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তার উপশম হবে কীসে?

এমন একটা পাশবিক, বর্বরোচিত ঘটনা সামনে আসার পরও প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে একটা তদন্তের আশ্বাসও দেওয়া হল না! পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি এমন ঘটনার কথা অস্বীকার করে একে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা ষড়যন্ত্র বলেছেন। রাজ্য সরকারের দুঁদে অ্যাডভোকেট জেনারেল হাইকোর্টে ঘাম ঝরাচ্ছেন সুশ্রীতাদের ন্যায়বিচারের দাবি আটকাতে। রাজ্যের মানুষ আবারও চাক্ষুষ করছেন কী ভাবে ন্যায়বিচারের দাবি উপেক্ষিত হচ্ছে।

মনে পড়ে কয়েক মাস আগের কথা– অভয়ার ন্যায়বিচারের দাবিতে কাতারে কাতারে মানুষ ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গের ভেদাভেদ ভুলে পথে নেমেছে। লম্বা মিছিলে পা মিলিয়েছে, স্লোগান দিয়েছে, রাতের পর রাত রাস্তায় থেকেছে। অভয়ার ন্যায়বিচার এখনও অধরা। নির্যাতিতার মা-বাবা এখনও বিচারের দাবিতে হাইকোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে ছুটে চলেছেন। অভয়ার ক্ষত এখনও আমাদের মন থেকে শুকিয়ে যায়নি। সময়ের সাথে সাথে অনেকেই অভয়া আন্দোলনের চেতনা বুকে ধারণ করেও ব্যস্ত কর্মজীবনে ফিরে গেছেন। ভেবেছেন একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

কিন্তু সময়ের দীর্ঘ সরণি দেখাচ্ছে শাসক আজও তার অভ্যাস বদলায়নি। আগের মতো ঠিক একই কায়দায় সে প্রতিবাদের ভাষাকে স্তব্ধ করতে চায় গলা টিপে দম বন্ধ করে। আশার কথা, এমন ছাত্রছাত্রীরা আজও রাস্তায় আছে, যারা প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়, শাসককে নির্ভীক কণ্ঠে গলা তুলে প্রশ্ন করে– ‘রাজা, তোর কাপড় কোথায়’? এরাই সকলের সামনে বিবেকের আয়না হয়ে দেখা দেয়। এরাই যুগে যুগে গণআন্দোলনের পতাকা বহন করে। জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে, শাসকের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে এ ভাবেই বারবার ফিরে আসে কখনও নির্ভয়া কখনও অভয়া কখনও তনুশ্রী, রানুশ্রী, বর্ণালী, সুশ্রীতা নামে।

এদের দেখে গর্ব হয়, অনেক হতাশার মধ্যেও আশার সঞ্চার হয়। নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখায় ওরা। অনেক অত্যাচারেও ওরা মাথা নত করেনি। গণআন্দোলনকে বাঁচিয়ে রাখতে ওরা মরণপণ লড়াই করছে– এ একটা অসম লড়াই। একদিকে রাষ্ট্র তার সমস্ত শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আর একদিকে কিছু অকুতোভয় নিরস্ত্র মানুষ, যারা শোষণ-বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের স্বপ্নে বিভোর।

সুশ্রীতা, তনুশ্রীরা আজ আর একা না। লাখো লাখো মানুষ পথে-প্রান্তরে নানা অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। এঁরা সকলেই পাশে আছেন। এদের অদম্য সাহস, বিপ্লবী স্পর্ধা সঞ্চারিত হবে অসংখ্য মানুষের মধ্যে। এ ভাবেই লাল আগুনের দাবানল জ্বলে উঠবে। সুশ্রীতাদের লড়াইকে অভিবাদন!