Breaking News

অভয়ার ন্যায়বিচার, মূল্যবৃদ্ধি রোধ সহ নানা দাবি নিয়ে ২১ জানুয়ারি কলকাতায় মহামিছিল

আর জি কর-এর চিকিৎসক-ছাত্রীর ধর্ষণ-খুনের তথ্য-প্রমাণ লোপাটের মামলায় তিন মাস তদন্তের পরও সিবিআই চার্জশিট না দেওয়ায় সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডলের জামিন পেয়ে যাওয়ার ঘটনা কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের যোগসাজশের ফল– ২০ ডিসেম্বর দলের রাজ্য অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন এসইউসিআই(সি)-র রাজ্য সম্পাদক চণ্ডীদাস ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সিবিআইয়ের এই ভূমিকা এ রাজ্য সহ সারা দেশের মানুষকে হতবাক করেছে। ধর্ষণ-খুনের ঘটনার পর ন্যায়বিচারের দাবিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন, সর্বস্তরের মহিলা সহ অগণিত মানুষ রাতের পর রাত জেগেছেন, অসংখ্য সভা মিছিল হয়েছে, মেডিকেল কলেজগুলির চিকিৎসক-ছাত্র-অধ্যাপকরা আন্দোলনে সোচ্চার হয়েছেন, গড়ে উঠেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। হাজার হাজার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত এই প্রতিবাদ গোটা সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছে। গণআন্দোলনের ইতিহাসে এই প্রতিবাদ এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসাবে অম্লান থাকবে। আন্দোলন এই ভাবে যখন তুঙ্গে উঠেছে এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তখন সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে সিবিআই তদন্ত চালাতে থাকে। দেশের শীর্ষ আদালতের তত্ত্বাবধানে শীর্ষ তদন্তকারী সংস্থা এই দায়িত্ব নেওয়ায় রাজ্য সরকার এবং তার প্রশাসনের উপর আস্থা হারানো মানুষের মনে হয়েছিল হয়তো নিহত ছাত্রী ন্যায়বিচার পাবে। কিন্তু সিবিআইয়ের এই ন্যক্কারজনক ভূমিকা মানুষের মধ্যে প্রবল ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। তিনি জামিন পাওয়ার ঘটনাকে দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আশা-আকাঙক্ষার প্রতি সরকারের চরম অবজ্ঞা এবং বিচারের নামে এক নিষ্ঠুর প্রহসন বলে অভিহিত করেন। তিনি আরও বলেন, এটা আজ জলের মতো পরিষ্কার যে, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যোগসাজশের ফলেই সিবিআই চার্জশিট জমা না দিয়ে এই দুই অভিযুক্তকে জামিন পেতে সাহায্য করল– যা ন্যায়বিচারের প্রতি জঘন্য উপহাস ছাড়া কিছু নয়। আসলে, পশ্চিমবঙ্গে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন যেভাবে সমগ্র দেশে প্রভাব বিস্তার করেছে, তার ফলে বিজেপি শাসিত অন্যান্য রাজ্য– যেখানে প্রতিদিন নারী-নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলেছে, তার বিরুদ্ধেও গণআন্দোলন তীব্রভাবে গড়ে উঠবে। এই আশঙ্কা বিজেপি নেতাদের আতঙ্কিত করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও প্রথম দিকে বিজেপি কিছু বিরোধিতা করলেও পরে তারা একেবারে নিশ্চুপ হয়ে গেল। অন্য দিকে রাজ্য সরকার প্রথম থেকেই ধর্ষণ-খুনের এই ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চেয়েছে। এই উদ্দেশ্যেই সিসিটিভি ফুটেজ, সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে প্রভাবশালীদের ফোনে কথাবার্তার নথি মুছে ফেলা হয় এবং এর সবটাই হয় রাজ্য প্রশাসনের মদতে। তারা আড়াল করতে চেয়েছে হাসপাতালের বিরাট দুর্নীতি-চক্রকে, যার পরিণতিতেই এই হত্যাকাণ্ড। তড়িঘড়ি এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে গ্রেপ্তার করে সমস্ত রহস্যের সমাধান বলে তুলে ধরা হল। তাই রাজ্য সরকার এবং বিশেষত তৃণমূল কংগ্রেস অভয়ার ন্যায়বিচারের দাবিতে মৌখিক কিছু বিবৃতি দেওয়া ছাড়া কিছুই করেনি।

দলের রাজ্য অফিসে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য সম্পাদক সহ নেতৃবৃন্দ

পাশাপাশি আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, একদিকে বিজেপি, অন্যদিকে সিপিএম এই আন্দোলনে গড়ে ওঠা সরকারবিরোধী জনমতকে নির্বাচনের স্বার্থে কাজে লাগাতে তৎপর হয়। তিনি বলেন, জামিনে মুক্ত হলেও এই দুই অভিযুক্ত ব্যক্তি জনসাধারণের চোখে ঘৃণ্য অপরাধী হিসাবেই গণ্য হবেন। আন্দোলনের চাপেই সিবিআই এদের গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়েছিল। রাজ্য সরকারকেও কিছু দাবি মানতে বাধ্য করেছিল এই আন্দোলন। কমরেড ভট্টাচার্য বলেন, আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতিতে গণআন্দোলনকে তীব্র্র করার দ্বারাই একমাত্র উভয় সরকার এবং সিবিআইকে বাধ্য করা সম্ভব ন্যায়বিচার দিতে। তিনি বলেন, এই দাবিতে ব্যাপক জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যেই দলের পক্ষ থেকে ২১ জানুয়ারি কলকাতায় মহামিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছে।

অভয়ার ন্যায়বিচারের দাবি ছাড়াও স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যবস্থায় চূড়ান্ত দুর্নীতি ও থ্রেট কালচারের সঙ্গে জড়িত সমস্ত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি রোধ, কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি যা শিক্ষার বেসরকারিকরণ, বাণিজ্যিকীকরণ ও সাম্প্রদায়িকীকরণের নীল নক্সা হিসাবে আনা হয়েছে তা বাতিল করা, কেন্দ্রীয় নীতির অনুসারী রাজ্য শিক্ষানীতি বাতিল, শ্রমিক স্বার্থবিরোধী কেন্দ্রীয় ৪টি শ্রমকোড, নয়া বিদ্যুৎনীতি ও স্মার্ট মিটার চালুর সিদ্ধান্ত বাতিল, কৃষকদের ফসলের ন্যায্য দাম, সরকারি মূল্যে সার, বন্ধ চা-বাগানগুলি খোলা, চা-শ্রমিকদের নূ্যনতম মজুরি, খেতমজুরদের সারা বছরের কাজ, বাড়তে থাকা নারী নির্যাতন রোধ, সমস্ত কর্মক্ষম মানুষের কাজের দাবি সহ জনজীবনের অন্য জ্বলন্ত সমস্যাগুলি সমাধানের দাবিতে এই মহামিছিল। এই সমস্ত সমস্যা থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য নানা ভাবে কেন্দ্রের শাসক দল যে ভাবে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ষড়যন্ত্র করে চলেছে এবং রাজ্যের শাসক দলও যে হীন রাজনীতিতে থেকে মুক্ত নয়, এই মহামিছিল সেই রাজনীতিকে পরাস্ত করতেও।

তিনি বলেন, এই মহামিছিলকে সফল করার জন্য রাজ্য জুড়ে ব্যাপক প্রচার চলছে। বাজার, স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডগুলিতে প্রচার, মিছিল, স্কোয়াড, পথসভা, ট্রেনে-বাসে প্রচার চলছে। সর্বত্র সাধারণ মানুষ গভীর আগ্রহে বক্তব্য শুনছেন এবং আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছেন। তিনি সব স্তরের মানুষকে ২১ জানুয়ারির মহামিছিলে যোগ দিয়ে অভয়ার জন্য ন্যায়বিচার ও অন্য দাবিগুলি মানতে সরকারকে বাধ্য করার আবেদন করেন।