বিদ্যুতের মাশুল কমানো, লেট পেমেন্ট সারচার্জ (এলপিএসসি) ব্যাঙ্ক রেটে নেওয়া, প্রি-পেইড মিটার বাধ্যতামূলক না করা, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারে বিধি নিষেধ আরোপ না করা সহ ১৬ দফা দাবিতে ২ মার্চ অল বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন (অ্যাবেকা) বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানি ও বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে বিক্ষোভ দেখায় ও ডেপুটেশন দেয়। বহুবার এ কথা জানানো হয়েছে, ২০১৬-১৭ বর্ষে কয়লার দাম ৪০ শতাংশ কম হওয়া, কয়লার উপর জিএসটি-তে ৭ শতাংশ কম হওয়া এবং সিইএসসি ও রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানিতে কারিগরি ও বাণিজ্যিক ক্ষতি ২ শতাংশ কম হওয়ায় দুই কোম্পানির সাশ্রয় হয়েছে মোট ৪ হাজার কোটি টাকা। ২০১৬ সালে রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশন মাশুল অর্ডারে ইউনিট প্রতি ১ টাকা মাশুল কমাতে বলেছিল।
রাজ্যের বর্তমান বিদ্যুৎমন্ত্রী গত দূর্গাপূজার প্রাক্কালে ঘোষণা করেছিলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কয়লার ৬০ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে ৩০ শতাংশ রিবেটে পাওয়া ক্যাপটিভ কয়লাখনিগুলো থেকেই পাওয়া যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন ক্যাপটিভ কয়লাখনি থেকে কয়লা পাওয়া গেলে বিদ্যুতের দাম কমবে। গত ১ জানুয়ারি, ডব্লুবিপিডিসিএল-এর চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর জানিয়েছেন, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ কমিয়ে এবং নানাবিধ পদক্ষেপের মাধ্যমে বিদ্যুৎ শুল্কে প্রতি ইউনিটে ৭০ পয়সা কমিয়ে উল্লেখযোগ্য মূল্যহ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে, এবং প্রয়োজনীয় কয়লার ৬৮ শতাংশ নিজেদের কয়লা খনিগুলো থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। গত ২৫-৮-২১ রাজ্য বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ এর রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির ঘোষিত ট্যারিফ অর্ডারের থেকেও এটা প্রমাণিত। এই অর্ডারে পরিস্কার বলা হয়েছে ২০১৬-১৭ বর্ষের বিদ্যুৎ মাশুল হিসাবে যা নেওয়া হয়েছে সেই একই মাশুল থেকেই পিডিসিএল-এর পাওনা টাকা এবং কোম্পানির পরবর্তী বৎসরগুলির প্রয়োজনীয় রেভিনিউ আদায়ের মোট পরিমাণ উঠে যাচ্ছে। এর সাথে ঐ অর্ডারে ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত এমভিসিএ (মান্থলি ভ্যারিয়েবল কস্ট অ্যাডজাস্টমেন্ট) খাতে কোনও টাকা আদায় করা যাবে না বলে জানানো হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে ২০১৬-১৭ বর্ষে অস্বাভাবিক হারে মাশুল বাড়ানো হয়েছিল, যা তখনকার সময়ে কোম্পানির প্রয়োজনেরও বেশি। আবার নেওয়া যাবে না বলা হলেও এমভিসিএ খাতে এপ্রিল ২০১৯ থেকে আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত কোটি কোটি টাকা গ্রাহকদের পকেট কেটে কোম্পানি তুলে নিয়েছে। সুতরাং মাশুলের বাড়তি টাকা এবং এমভিসিএ খাতের অন্যায়ভাবে কেটে নেওয়া টাকা গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া উচিত এবং বিদ্যুতের মাশুল মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো এবং ন্যায্যত কমানো উচিত।
এলপিএসসি ব্যাঙ্ক রেটে করার বিষয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী এবং কমিশনের চেয়ারম্যান যুক্তিসঙ্গত বলে মেনে নিলেও আজও তা কার্যকরী হয়নি। দেশের পাঁচটি কৃষি প্রধান রাজ্য কৃষিতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দিলেও এ রাজ্যে কৃষিতে বিদ্যুতের মাশুল দেশের মধ্যে সর্বাধিক। গত লকডাউনে ক্ষুদ্র শিল্প পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও তাদের উপর বিশাল অঙ্কের ফিক্সড চার্জ চাপানো হয়েছে। এর ফলে রাজ্যে হাজার হাজার ক্ষুদ্র শিল্প বন্ধ হয়ে চলেছে। নতুন বিদ্যুৎ আইনে প্রি-পেইড মিটার লাগানো এবং সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহারে বিধি নিষেধ আরোপের রেগুলেশন জারি করা হয়েছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা জনবিরোধী বিদ্যুৎনীতির সমালোচনা করেন এবং ন্যায্য দাবি আদায়ে তীব্র গ্রাহক আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে ঘোষণা করেন। সংগঠনের সহ সভাপতি প্রদ্যুৎ চৌধুরীর নেতৃত্বে সুভাষ ব্যানার্জী, শিবাজী দে, নীরেন কর্মকার বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের অফিসে স্মারকলিপি জমা দেন। চেয়ারম্যান ২৩/২৪ মার্চ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। সহ সভাপতি অমল মাইতি ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বিশ্বাসের নেতৃত্বে প্রদীপ দাস, রবীন দেবনাথ বিদ্যুৎ বন্টন কোম্পানির দপ্তরে স্মারকলিপি দিয়ে আলোচনা করেন। ডিস্ট্রিবিউশন ডাইরেক্টর সহ পাঁচ জন আধিকারিকের সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনাতে বন্ধ ও খারাপ মিটার দ্রুত পরিবর্তন, গ্রাহকদের অভিযোগ গ্রহণ বাধ্যতামূলক, এলপিএসসি মকুব করে কৃষিবিদ্যুৎ গ্রাহকদের বকেয়া মেটানো, যে কোনও লোডেই নতুন কানেকশন দেওয়া, প্রি-পেইড মিটার না লাগানো– এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বিদ্যুতের মাশুল কমানো ও এলপিএসসি ব্যাঙ্ক রেটে করার বিষয়ে তাদের বিরোধিতা নেই, নিয়ন্ত্রণ কমিশনের সিদ্ধান্ত তারা মেনে নেবেন বলে জানিয়েছেন। বিদ্যুৎ ভবনের সামনে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ পরিচালনা করেন সভাপতি অনুকূল ভদ্র।