ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) সম্প্রতি ২০১৭ সালে দেশে ঘটে যাওয়া অপরাধ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে৷ হিংসাত্মক অপরাধের দিক দিয়ে ২০১৬ সালের মতো এবারেও এক নম্বরে রয়েছে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ৷ মহিলাদের ওপর অপরাধেও শীর্ষে রয়েছে এই রাজ্য৷ বোঝাই যায়, আইন–শৃঙ্খলা ও নারী–নিরাপত্তা রক্ষায় সে রাজ্যের বিজেপি সরকার আদৌ আন্তরিক ও তৎপর নয়৷ অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যও পিছিয়ে নেই৷ হিংসাত্মক অপরাধ ও মহিলাদের ওপর অপরাধের ঘটনায় রিপোর্টে তার স্থান তৃতীয়৷
কিন্তু যে বিষয়টি এর চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা হল, রিপোর্টে বেশ কিছু অপরাধের তথ্য প্রকাশ করা হয়নি৷ দেশের আকাশ আজ ছেয়ে আছে আছে ফসলের দাম না পাওয়া ঋণগ্রস্ত চাষির হাহাকারে৷ বছরে বছরে দীর্ঘতর হয়ে চলেছে নিরুপায় আত্মঘাতী চাষির মর্মান্তিক মৃত্যুমিছিল৷ অথচ এনসিআরবি–র রিপোর্টে চাষি–আত্মহত্যার কোনও তথ্যই নেই গত ২০১৫ সাল থেকেই আত্মঘাতী চাষির সংখ্যা প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ তখন সামনে ছিল ২০১৯–এর লোকসভা নির্বাচন৷ ‘আচ্ছে দিন’ আর ‘সব কা সাথ সব কা বিকাশ’–এর হুঙ্কারে ভরিয়ে তোলা হচ্ছিল আকাশ–বাতাস৷
এই অবস্থায় দেশের ব্যাপক সংখ্যক চাষির জীবনের মর্মান্তিক চেহারা কি সামনে আসতে দেওয়া চলে ফলে ফরমান জারি হয়েছিল রিপোর্ট থেকে মুছে দাও মৃত চাষিদের নামের তালিকা৷ এবারেও তাই হয়েছে৷ যদিও সত্য চাপা দেওয়া যায়নি৷ তথ্যের অধিকার আইনে বেরিয়ে এসেছে রাজ্যে রাজ্যে চাষিদের দুরবস্থার কথা৷ জানা গেছে, গত চার বছরে বিজেপি সরকারের আমলে মহারাষ্ট্রে প্রতিদিন গড়ে ৮ জন চাষি আত্মহত্যা করেছেন৷ সারা দেশে ২০১৫ থেকে ’১৮–র মধ্যে আত্মঘাতী হয়েছেন ১২ হাজার ২১ জন চাষি৷ অর্থাৎ দিনে প্রায় ১১ জন চাষি আত্মহত্যা করেছেন৷ কী মর্মান্তিক পরিস্থিতি কিন্তু এসব খবর কি প্রকাশ্যে আসতে দেওয়া চলে
শুধু চাষি–আত্মহত্যাই নয়, ২০১৭ সালে গণপিটুনিতে কতজন খুন হয়েছেন, সে তথ্যও প্রকাশ করেনি এনসিআরবি৷ অথচ ঘটনা হল, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকে দেশে গণপিটুনি ব্যাপক হারে বেড়েছে৷ সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপ্রসূত গণপিটুনিতে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, অথচ প্রধানমন্ত্রী বা তাঁর প্রধান সহযোগী অমিত শাহকে একবারও তা নিয়ে মুখ খুলতে দেখা যায়নি৷ দেশ জুড়ে এর বিরুদ্ধে ব্যাপক শোরগোল উঠেছে৷
সম্ভবত সেই কারণেই রিপোর্টে ঘটনাগুলির উল্লেখ পর্যন্ত নেই তথ্য সংগ্রহ করার দায়িত্বে রয়েছেন এনসিআরবি–র এমন এক আধিকারিকের বিস্মিত মন্তব্য– গণপিটুনির সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কেন তা প্রকাশ করা হল না, উঁচুতলার কর্তারাই তা বলতে পারবেন৷ বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, এই তথ্য যাতে ধামাচাপা পড়ে, সেজন্য কোথা থেকে কলকাঠি নাড়া হয়েছে৷
এভাবে গোপনীয়তার আশ্রয় নিয়ে দেশের আসল চেহারা মানুষের কাছ থেকে আড়াল করতে চাইছে কেন্দ্রের সরকার৷ এই আচরণ বুঝিয়ে দেয়, দেশের নিরাপত্তা নিয়ে নেতা–মন্ত্রীরা যতই হুঙ্কার দিন, দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে তাঁদের মাথা ব্যথা নেই৷ বরং এ নিয়ে মানুষের ক্ষোভকে তাঁরা ভয় পান৷