এসইউসিআই (সি)-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ ২ অক্টোবর এক বিবৃতিতে বলেন, আট বছর আগে নির্ভয়ার পাশবিক গণধর্ষণ ও খুন, ২০১৭ সালে শাসক বিজেপির প্রাক্তন বিধায়কের মদতে সংগঠিত উন্নাওয়ের বীভৎস ধর্ষণকাণ্ড গোটা দেশের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছিল। আবার এক ভয়ঙ্কর ঘটনায় শিউরে উঠেছে সারা দেশ। গত ১৪ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশের হাথরাসের অনুন্নত দলিত সম্প্রদায়ের ঊনিশ বছর বয়সী একটি মেয়েকে ‘উচ্চবর্ণের’ চারজন কুখ্যাত দুষ্কৃতী মাঠে টেনে নিয়ে গিয়ে পাশবিক অত্যাচার ও গণধর্ষণ করে। মেয়েটির শ্বাসরোধ করে, মেরুদণ্ডে আঘাত করে তাকে মারাত্মক আহত করে। এই ‘উচ্চবর্ণ’ভুক্ত গোষ্ঠী তাদের বর্ণের তথাকথিত আভিজাত্য জাহির করতে পেশিশক্তির আস্ফালনে সিদ্ধহস্ত। গরিব-পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষকে দাবিয়ে রাখার জন্য হয়রানি ও নির্যাতনের কাজে এদের কুখ্যাতি সর্বজনবিদিত। ২৯ সেপ্টেম্বর নির্যাতনের শিকার নিরীহ মেয়েটির মৃত্যু হয়। আরও বড় বিষয় হল, রাজ্য পুলিশ ঘটনার প্রমাণ ও সত্যকে চাপা দিতে মৃতের শোকাহত পরিবারকে ঘরে তালাবন্ধ করে রেখে রাতের অন্ধকারে কেরোসিন ঢেলে দেহ পুড়িয়ে দেয়। জনবিক্ষোভের চাপে বিজেপি পরিচালিত উত্তরপ্রদেশ সরকার একটি বিশেষ তদন্তকারী দল ‘সিট’ গঠন এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ সরকারের অভিসন্ধি চাপা থাকে না যখন, ব্যক্তিগত গোপন অঙ্গগুলি ছিন্নভিন্ন হলেও ফরেন্সিক পরীক্ষায় ভিসেরাতে ধর্ষণের প্রমাণ নেই বলে ময়নাতদন্তের ‘চূড়ান্ত রিপোর্ট’ নিয়ে সরকার আসরে নামে। এতে বলা হয় মৃত্যুর কারণ কোনও ভারি বস্তুর দ্বারা শিরদাঁড়ায় পরোক্ষ আঘাত। অথচ ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে নিশ্চিতভাবে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধের কথা আছে।
এটা পরিষ্কার, গেরুয়াধারী স্বঘোষিত সন্ন্যাসী রাজ্যপ্রশাসনের প্রধান হিসাবে গণতান্ত্রিক আচরণের ন্যূনতম ধ্যানধারণাগুলিকেও দুপায়ে মাড়িয়ে চলেছেন। এই চূড়ান্ত অমানবিক আচরণ তাঁর প্রশাসনের আসল মুখ এবং এনসিআরবি প্রকাশিত ক্রাইম রিপোর্টকেই মান্যতা দিয়েছে। এনসিআরবি-র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৬থেকে ২০১৯-এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের উপর নির্যাতনের ঘটনা কুড়ি শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এই ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশ দেশের মধ্যে শীর্ষস্থান পেয়েছে। সামগ্রিকভাবে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে এই জঘন্য অপরাধমূলক কাজ সংগঠিত করাকে আমরা তীব্র নিন্দা করছি। দেশবাসীর কাছে আমাদের আবেদন দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং মহিলাদের উপর ক্রমবর্দ্ধমান পাশবিক নির্যাতন রুখতে অবিলম্বে কার্যকরী ব্যবস্থার দাবিতে শক্তিশালী ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলুন।