আর জি করের চিকিৎসক-ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষীদের আড়াল করার অভিযোগে রাজ্য জুড়ে মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে। ঠিক সেই সময়েই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ধর্ষণের ঘটনায় দোষীর শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে তড়িঘড়ি নতুন আইন ‘অপরাজিতা মহিলা ও শিশু (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন সংশোধন) বিল ২০২৪’ আনার ঘটনাকে মানুষ প্রহসন ছাড়া আর কিছুই মনে করছে না। বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে নতুন বিল এনে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ধর্ষণের ঘটনায় মৃত্যুতে কিংবা নির্যাতিতা জীবন্মৃত হয়ে গেলে একমাত্র শাস্তি হিসাবে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে এসেছেন। অন্যান্য ক্ষেত্রেও শাস্তির কঠোরতা বাড়িয়েছেন।
আর জি করের ঘটনায় দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে যখন গোটা সমাজ উত্তাল হয়ে উঠেছে, মানুষ যখন এই ঘটনা আড়াল করার দায়ে পুলিশ ও রাজ্য সরকারকেই দায়ী করছে, এমন এক সময়েই রাজ্য সরকার এই আইন নিয়ে এল। স্বাভাবিক ভাবেই জনমনে এ প্রশ্ন প্রকট হয়ে উঠছে যে, সরকারের এমন একটি বিল আনার উদ্দেশ্য কী? এই বিলের কি সত্যিই কোনও প্রয়োজন ছিল? যে আইন ইতিমধ্যেই রয়েছে তাতেই কি দোষীকে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া যায় না?
বাস্তবে গোটা সমাজ জুড়ে বিক্ষোভ ফুঁসে ওঠার পরই মুখ্যমন্ত্রী দোষী বলে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিকে ফাঁসি দেওয়ার কথা বলেছিলেন। সেই ফাঁসি নিশ্চিত করতেই কি এই কঠোর সাজার বিল নিয়ে এলেন তিনি? প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের আনা এই বিলের কঠোরতা অপরাধী না অপরাধ কার বিরুদ্ধে? অপরাধীই কি এই বিলের লক্ষ্য? যদি তাই হয় তবে তো তিনিও জানেন, আর জি করের ঘটনা এই আইন হওয়ার আগে ঘটেছে। অতএব তা এই আইনের আওতার বাইরে। দ্বিতীয়ত, এক জন অপরাধীর যত দিনে ফাঁসি হবে, তত দিনে আরও অনেকগুলি অপরাধের ঘটনা ঘটে যাবে। অথচ যে সামাজিক পরিবেশ প্রতি মুহূর্তে সমাজে এমন অসংখ্য অপরাধীর জন্ম দিয়ে চলেছে, সেই পরিবেশকে বদলানোর কোনও কথা সরকারের ভাবনাতেও নেই, আইনেও নেই। সরকারের রাজ্যপাট চালানোর গোটা প্রক্রিয়াতেই তা নেই। বরং তাঁদের শাসন-নীতিই অপরাধী তৈরি হওয়ার জমি ক্রমেই উর্বর করে চলেছে।
দোষীদের আড়াল করার সরকারি আয়োজন
দেখা যাক সত্যিই অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া এই আইনের লক্ষ্য কি না। প্রথম থেকেই আর জি করের ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা প্রশাসনের সমস্ত স্তরে প্রকট। চিকিৎসকের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা, এফআইআর করতে অযথা দেরি করা, পরে যাঁদের সাসপেন্ড করা হল, শুরুতেই তাঁদের এমনকি জিজ্ঞাসাবাদটুকুও না করা, পদত্যাগ করতে বাধ্য হওয়া অধ্যক্ষকে অতি দ্রুত আর একটি মেডিকেল কলেজে অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগপত্র দেওয়া, মৃতদেহ যেখানে পাওয়া যায় সেই সেমিনার রুম সংলগ্ন অংশ অতি দ্রুততায় ভেঙে ফেলা, বহিরাগত দুষ্কৃতীদের দ্বারা আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের মঞ্চ ও হাসপাতালে ভাঙচুর আটকাতে এবং তাদের পিছনে আসল মাথাগুলিকে গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হওয়ার মতো ঘটনাগুলির কোনওটিই সরকারের অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতারের সদিচ্ছার প্রমাণ নয়।
ইতিমধ্যে এই সরকারের শাসনে ঘটে যাওয়া পার্ক স্ট্রিট-কামদুনি-কাটোয়া-হাঁসখালির মতো ধর্ষণের ঘটনাগুলির কোনওটিতেই সরকারের এই আগ্রহ প্রকাশ পায়নি। বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী থেকে নানা মন্ত্রী নানা কথার ছলে ঘটনার গুরুত্ব লঘু করার চেষ্টা করেছেন। পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণের অভিযোগ উঠলে মুখ্যমন্ত্রী এক কথায় তাকে সাজানো ঘটনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। পরে তদন্তে ধর্ষণের প্রমাণ মিললে তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ অফিসারকে অন্যত্র বদলি করে দিয়েছেন। কামদুনির ঘটনায় প্রতিবাদকারীদের মাওবাদী বলে ধমক দিয়েছিলেন। ২০১২ সালে কাটোয়ায় ধর্ষণের অভিাযোগ উঠলে, ঘটনাকে নস্যাৎ করে দিয়ে বলেছিলেন, মহিলার স্বামী বিরোধী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। হাঁসখালির ঘটনাতেও ধর্ষণকে লঘু করে দেখাতে তিনি বলেছিলেন, মেয়েটির সঙ্গে ধর্ষকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
ধর্ষণের এই ঘটনাগুলির কোনওটিতেই মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যান্য নেতাদের আচরণে অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার মনোভাব প্রকাশ পায়নি। সমাজ পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে যে কারণগুলি– যেমন, মদের ঢালাও লাইসেন্স, পর্নোগ্রাফির ছড়াছড়ি, সরকার ও শাসক দলের উচ্চ থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়লেও সে সব না দেখার ভান করে প্রশ্রয় দিয়ে চলা এবং এর মধ্য দিয়ে ‘যাকে যা খুশি করতে পারি’ মনোভাবকেই প্রশ্রয় দেওয়া– যা প্রকারান্তরে ধর্ষণের মতো ঘটনাকে বাড়িয়ে তুলতেই সাহায্য করছে, এগুলির কোনওটির বিরুদ্ধেই তৃণমূল নেতৃত্বকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। তা হলে হঠাৎ আর জি করের ঘটনায় পর অপরাধীকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকার তড়িঘড়ি আইন আনতে গেল কেন?
সরকারের প্রতি জনতার অবিশ্বাস
বাস্তবে ঘটনার শুরু থেকেই সরকারের আচরণ জনমনে প্রশাসন তথা সরকার সম্পর্কে অবিশ্বাসের মনোভাবের জন্ম দিয়েছে। সরকারের একের পর এক পদক্ষেপ সেই অবিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে। আর সরকারের প্রতি এই অবিশ্বাসই জুনিয়র চিকিৎকদের শুরু করা আন্দোলনের পাশে বৃহৎ অংশের মানুষকে এনে জড়ো করেছে। এই ভাবে আন্দোলন অভাবনীয় গতিতে সারা রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে এবং রাজ্য সরকার যে অপরাধীদের আড়াল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সেই বিশ্বাসও একই ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় প্রবল জনমতের সামনে কোণঠাসা রাজ্য সরকার নিজের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় যতই একের পর এক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে থাকে ততই সেগুলির অন্তঃসারশূন্যতাও প্রকট হতে থাকে।
মহিলাদের ‘নিরাপত্তা সম্পর্কে উদ্বেগ’ দেখাতে প্রশাসন প্রথম নির্দেশ দেয়, রাতে যেন মহিলারা কাজে কম বেরোন। যার মানে, মহিলারা যেন নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরা বুঝে নেন। এই ভাবে আড়াল করার চেষ্টা করতে গিয়ে প্রশাসন তার অপদার্থতাকেই আরও প্রকট করে তুলল। নতুন বিলে অপরাধীকে দ্রুত এবং কঠোর শাস্তির কথা বলে মৃতুদণ্ডের ঘোষণাও স্বাভাবিক ভাবেই জনমনে কোনও দাগ কাটতে পারেনি। তাই এই নতুন বিলকে কোনও গুরুত্ব না দিয়েই প্রতিদিন আন্দোলন আরও বৃহৎ আকার নিচ্ছে।
এ বার আসা যাক নতুন বিলের কথায়। বিলটিকে পূর্ণাঙ্গ করার থেকেও সেটিকে পাশ করিয়ে তড়িঘড়ি জনসমক্ষে আনাটিই যে মুখ্যমন্ত্রীর মূল লক্ষ্য ছিল বিলের ছত্রে ছত্রে তার প্রমাণ ছড়িয়ে আছে। প্রথমত, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ আইন, সমাজ জুড়ে যার গভীর তাৎপর্য রয়েছে, তা নিয়ে আলোচনার কোনও সুযোগই কোনও স্তরে দেওয়া হল না। অত্যন্ত তড়িঘড়ি করে মাত্র একদিনে কয়েক ঘণ্টার মামুলি আলোচনায় এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করিয়ে নেওয়া হল।
দ্বিতীয়ত, আইনটির মধ্যে নতুন কিছুই নেই। ভারতীয় ন্যায়সংহিতা আইনের কঠোরতাকেই শুধুমাত্র বাড়ানো হয়েছে।
তৃতীয়ত, এই আইনে ধর্ষণে মৃত্যু কিংবা জীবন্মৃতের ঘটনায় বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। অথচ ১৯৮৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের ‘মিঠু বনাম স্টেট অফ পঞ্জাব’ মামলায় শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় দিয়েছিল, আইনে কোনও অপরাধের সাজা হিসাবে যদি একমাত্রই মৃত্যুর সংস্থান থাকে, তবে সেই আইন ভারতীয় সংবিধানের পরিপন্থী। সেই দিক থেকে বিচার করলে এই আইন শেষ বিচারে ধোপে টিকবে কি না সন্দেহ রয়েছে।
আন্দোলন থেকে দৃষ্টি সরাতেই নয়া আইন
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, সমাজে মহিলাদের উপর অপরাধ কমাতে কঠোর শাস্তি প্রয়োজন, এ কথা ঠিক, কিন্তু শুধুমাত্র শাস্তির কঠোরতা দিয়েই কি তা কমানো যেতে পারে? কঠোর আইন এই ধরনের অপরাধ কতটা কমাতে পারে তার বিচার না করেই কি অপরাধীর উপর তা প্রয়োগ করা চলে? বাস্তবে প্রবল গণবিক্ষোভের মুখে পড়ে আইনের কঠোরতা বাড়ানোকেই সরকার যৌন অপরাধের বিরুদ্ধে নিজের দৃঢ়তা প্রমাণের সহজ উপায় বলে মনে করছে। এর দ্বারা সমাজে যৌন হয়রানির আসল কারণকে চিহ্নিত করে তা দূর করার আপাত কঠিন কাজটি থেকে মানুষের দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরোর তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে প্রতি ১৫ মিনিটে দেশে একজন মহিলা ধর্ষিতা হয়েছেন। নির্ভয়া কাণ্ডের পরে প্রবল গণবিক্ষোভের ধাক্কায় আইন বদলেছে, কঠোর হয়েছে সাজা। কিন্তু তার দ্বারা পরিস্থিতি বদল হয়নি। ওই তথ্যই বলছে, ২০২২ সালেও প্রতি ১৫ মিনিটে ধর্ষিতা নারীর সংখ্যাটা একই রয়েছে।
এ কথা কে না জানে, দোষীর মৃত্যুদণ্ড চাওয়া বা আইন হিসাবে তা পাশ করানোর মানে নির্যাতিতাকে বিচার পৌঁছে দেওয়া নয়। বিচারের আগেকার দীর্ঘ পথ– পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা, সাক্ষীর অভাব, সাক্ষীর নিরাপত্তার অভাব, পুলিশের সদিচ্ছার অভাব নির্যাতিতার কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে সব সময়ই দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে সরকার তথা প্রশাসন নির্যাতিতার প্রতি কতটুকু সহানুভূতিশীল ভূমিকা পালন করে, তা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
বিচার নির্ভর করে পুলিশি তদন্তের উপর
তা ছাড়া অপরাধের যাতে সঠিক এবং দ্রুত তদন্ত হয়, তা সুনিশ্চিত করতে সরকারের ভূমিকা কী? সরকার নির্বিশেষে পুলিশের ভূমিকা দলদাসের। পূর্বতন সিপিএম সরকারের আমলেও যা ছিল এখনও তাই। পুলিশ যদি নিরপেক্ষ না হয় কোনও অভিযোগেরই তদন্ত নিরপেক্ষ হতে পারে না। আইন যত কঠোরই করা হোক না কেন, তার শাস্তি তথা বিচার নির্ভর করে পুলিশি তদন্তের উপর। ঢিলেঢালা তদন্তের জন্য বহু সাক্ষ্য হারিয়ে যায়। বিচারপতি তদন্তের উপর নির্ভর করেই রায় দেন। দেখা যাচ্ছে, ধর্ষণ এবং মহিলাদের উপর আক্রমণের যত অভিযোগ ওঠে তার ৩০ শতাংশের কম অভিযোগ প্রমাণ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, শাস্তি তো তার পরের ব্যাপার। তাই দণ্ডে কঠোরতার উপর সরকারের এত জোর পুলিশ তথা প্রশাসনের ‘জো হুজুর’ ভূমিকাকে আড়াল করার আর এক ছল বলেই আন্দোলনে যুক্ত মানুষের ধারণা। তাই পুলিশের নিরপেক্ষতা আন্দোলনের অন্যতম দাবি।
চাই বৃহত্তর সামাজিক সংস্কার
এই অবস্থায় সত্যিই মহিলাদের উপর নিগ্রহ এবং ধর্ষণের মতো ঘটনাকে আটকাতে গেলে যেমন প্রয়োজন প্রশাসনিক নজরদারি, শক্তিশালী ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা, তেমনই প্রয়োজন বৃহত্তর সামাজিক সংস্কার। এই সামাজিক সংস্কার মানে সমাজে নারী ও পুরুষ উভয়কেই সমান দৃষ্টিতে দেখতে শেখা। সমাজ বিকাশে নারী ও পুরুষ উভয়ের ভূমিকা যে সমান এবং নারী বা পুরুষ নয়, উভয়েরই প্রথম পরিচয় মানুষ, এই শিক্ষাটার আজ বড় প্রয়োজন। আর এই শিক্ষাটা একেবারে ছোট থেকেই শুরু হওয়া দরকার। অধিকাংশ পরিবারেই শিশুরা শৈশব থেকেই শেখে মহিলারা পুরুষের থেকে সব দিক দিয়েই পিছিয়ে। মহিলামাত্রেই ভোগের সামগ্রী। মহিলারা যে সব দিক থেকেই পুরুষের সমান ক্ষমতার অধিকারী– এই শিক্ষাটাই গড়ে ওঠে না। তাই মহিলাদের সম্মান দিতে, মর্যাদা দিতে তারা শেখে না। বরং অনেক সময়ই একটা বিদ্বেষের মনোভাব গড়ে ওঠে। এমনকি বড় বড় ডিগ্রিধারীরাও নিজেদের ক্ষমতা বোঝাতে হামেশাই উল্লেখ করেন যে, তাঁরা চুড়ি পরে থাকেন না। টিভি সিরিয়ালগুলোতে অধিকাংশ নারী চরিত্রকেই দেখানো হয় বস্তাপচা কুসংস্কারে আচ্ছন্ন, পুরুষের নির্দেশে চলা কিছু পুতুল হিসাবে। ব্লেডের বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপনে পর্যন্ত নারী দেহ প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে নারীকে ভোগের বস্তু হিসাবে তুলে ধরা হয়। মুখ্যমন্ত্রী কি পারবেন সমাজের এমন মনোভাব পাল্টানোর ব্যাপারে এতটুকুও উদ্যোগী হতে?
বাস্তবে মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রশাসনকে যদি এ ব্যাপারে এতটুকও সক্রিয় করতে হয় তবে আন্দোলন থামালে চলবে না, বরং তা প্রবল ভাবে জারি রাখতে হবে। এবং সেই আন্দোলনকে স্বতঃস্ফূর্ততার জায়গায় ফেলে না রেখে তাকে সংগঠিত রূপ দিতে হবে, আন্দোলনের মধ্যে সমাজ বদলের লক্ষ্যকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যুক্ত করতে হবে সাংস্কৃতিক কর্মসূচিকে। আপসহীন আন্দোলন জনসাধারণের মধ্যে নতুন নৈতিকতার জন্ম দেয়, হারিয়ে যাওয়া নৈতিকতাকে ফিরিয়ে আনার প্রয়াস চালায়। এ কথা মনে রাখতে হবে, নবজাগরণ এবং স্বাধীনতা আন্দোলন সমাজে যে চেতনা এবং সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছিল, শাসকদের অবহেলা, উদাসীনতা এবং ক্রমাগত আক্রমণে তাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা ব্যাহত হয়েছে। গণআন্দোলন থেকেই সেই অর্জিত চেতনা ও সংস্কৃতিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। একমাত্র শক্তিশালী চেতনা ও সংস্কৃতিই পারে একদিকে যেমন সমাজে মহিলাদের সম্পর্কে মনোভাবকে বদলাতে, তেমনই শাসকদেরও বাধ্য করে সজাগ প্রশাসনিক নজরদারি ও বিচারপ্রক্রিয়াকে যথাযথ ভাবে পরিচালিত করতে। না হলে প্রবল আন্দোলনের চাপে একটা ধর্ষণ-খুনের বিচার আদায় হলেও ঠিক একই সময়ে আরও বিশটা এমন ঘটনা ঘটে যাবে, ঘটতে থাকবে।