
এআইইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক কমরেড শঙ্কর দাশগুপ্ত ১৭ অক্টোবর এক বিবৃতিতে বলেন, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শক্তিমন্ত্রক বিদ্যুৎ বিল (সংশোধনী) ২০২৬-এর খসড়া প্রকাশ করে ৩০ দিনের মধ্যে দেশের একচেটিয়া পুঁজিমালিক সংগঠনগুলির মতামত জানতে চেয়েছে। যথারীতি ‘শিল্পের প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কার’ হিসাবেই এই খসড়া বিলকে দেখানো হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল বিদ্যুতের মূল ব্যবহারকারী বিরাট জনসংখ্যা–শ্রমিক, কর্মচারী, কৃষক এবং সাধারণ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কোনও মতামত চাওয়া হয়নি! বাস্তবে বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থাকে পুরোপুরি একচেটিয়া পুঁজিমালিকদের হাতে তুলে দেওয়া এবং সম্পূর্ণ শক্তিক্ষেত্রকেই বেসরকারিকরণের লক্ষ্যে এই বিল আনা হচ্ছে।
২০২২-এ কৃষক, শ্রমিক, কর্মচারী ও সাধারণ মানুষের তীব্র প্রতিরোধ আন্দোলনের সামনে বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার। এখন তারা যে কোনও উপায়ে বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার নানা ছল করছে।
আদানি, টাটা, গোয়েঙ্কা, টরেন্ট, এসার ইত্যাদি বৃহৎ পুঁজিমালিকদের স্বার্থেই এই বিলের খসড়া তৈরি হয়েছে। কমরেড শঙ্কর দাশগুপ্ত বলেন, খাদ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কাজ ইত্যাদির মতো বিদ্যুতও সমস্ত মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে পড়ে। ফলে বিদ্যুতকে মুনাফার দৃষ্টিতে দেখা চলে না। এই খসড়ায় বলা হয়েছে ইলেক্ট্রিসিটি রেগুলেটারি কমিশনগুলিকে অবশ্যই লাভজনক হারে বিদ্যুৎ মাসুল ঠিক করতে হবে। বিলে কোনও বিশেষ ধরনের গ্রাহকের ওপর বোঝা না চাপানোর কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ এক দিকে ব্যক্তি মালিকদের সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করা হবে, অন্য দিকে শিল্প, বাণিজ্য, গৃহস্থ, কৃষক গ্রাহকদের এই ভাগগুলি তুলে দিয়ে বৃহৎ মালিকদের সুবিধা করে দেওয়া হবে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার পরিকাঠামো ব্যবহার করে একাধিক কোম্পানিকে একই এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের লাইসেন্স দেওয়া হবে, তারা জনগণের টাকায় গড়া পরিকাঠামো ব্যবহার করে মুনাফা করবে। লাভজনক এলাকাগুলি বেসরকারি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দিয়ে অলাভজনক এলাকাগুলি সরকারি কোম্পানির জন্য রেখে দেওয়া হবে। কোম্পানিগুলির অবাধ সুযোগের নামে সর্বত্র নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবা পৌঁছানোর দায়বদ্ধতাকে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এর ফলে নিশ্চিত ভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়বে এবং প্রিপেড স্মার্ট মিটারের জন্য সিংহ দরজা খুলে দেওয়া হবে। গভীর উদ্বেগের বিষয় হল এই বিলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ‘ক্রস সাবসিডি’ তুলে দিয়ে বৃহৎ গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলা হয়েছে। এই পদক্ষেপ বাস্তবে সমস্ত বিদ্যুৎগ্রাহকদের জন্যই ভর্তুকি তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে। রেগুলেটরি কমিশনকে গ্রাহকদের বক্তব্য না শুনেই একতরফা ভাবে মাসুল নির্ধারণের ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ‘ব্যবসার সহজ পরিবেশ’ গড়ার নামে ফ্রানচাইজিদের লাইসেন্স সহ নানা ধরনের নিয়ম শিথিল করে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রকে কর্পোরেট পুঁজিমালিকদের মুনাফা শিকারের অবাধ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে একচ্ছত্র ক্ষমতা তুলে দিয়ে রাজ্যগুলির অধিকারকে পুরোপুরি খর্ব করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে, শক্তিক্ষেত্রের বেসরকারিকরণের পরীক্ষা ইতিমধ্যেই পুরোপুরি ব্যর্থ বলে প্রমাণিত। ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের নানা শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ বেসরকারি হাতে দিয়ে কোম্পানিগুলির শোচনীয় পরিষেবার জন্য তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে হয়েছে। কমরেড শঙ্কর দাশগুপ্ত বলেন, এআইইউটিসিইউসি দৃঢ়ভাবে মনে করে বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থার পূর্ণ বেসরকারিকরণ করে ভারতের সংকটগ্রস্ত পুঁজিপতি শ্রেণির পলিটিক্যাল ম্যানেজার বিজেপি সরকার তাদের সংকট মেটানোর চেষ্টা করছে। এই বিল সংসদে পাশ হলে কোটি কোটি বিদ্যুৎ গ্রাহক এবং ১৫ লক্ষ স্থায়ী ও ১২ লক্ষ অস্থায়ী বিদ্যুৎ কর্মচারীর স্বার্থ বিপন্ন হবে। একচেটিয়া মালিকদের স্বার্থে রচিত এই বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে এআইইউটিইউসি।