Breaking News

বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশে ১০,৭৮৪টি প্রাইমারি স্কুল বিলুপ্তির পথে

উত্তরপ্রদেশের বিদ্যালয় শিক্ষার ডিরেক্টর জেনারেল কাঞ্চন ভার্মা সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রাজ্যের ১ লাখ ৩২ হাজার সরকারি স্কুলের মধ্যে ১০,৭৮৪টি প্রাইমারি স্কুল অন্য স্কুলের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। কেন এতগুলি স্কুলের বিলুপ্তি? মূলত ছাত্রসংখ্যা কমে যাওয়া এবং দুর্বল পরিকাঠামোর জন্যই এই স্কুলগুলিকে নিকটতম বড় স্কুলের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

ছাত্রসংখ্যা কমছে কেন? কেনই বা স্কুলের পরিকাঠামো দুর্বল? ছাত্র কমে যাওয়ার সমাধান কি স্কুল তুলে দেওয়া! দ্রুত স্কুলের পরিকাঠামোর উন্নতি ঘটিয়ে স্কুলছুট ছাত্রদের স্কুলে ফেরানোর সব রকম চেষ্টা করাই কি একটা দায়িত্বশীল সরকারের কর্তব্য নয়? উত্তরপ্রদেশ তো বিজেপির বহুঘোষিত ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজ্য! তা হলে সেই রাজ্যের শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের ইঞ্জিনে তেল এত কম পড়ছে কেন?

আসলে স্কুল সংযুক্তির নামে রাজ্যে রাজ্যে স্কুল তুলে দেওয়ার পদক্ষেপ শুরু হয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ মেনেই। এতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ এবং সুযোগ সুবিধার অংশীদার করতেই এই ধরনের সংযোজন বা সমন্বয়। যদি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দিতে হয়, তার জন্য কি একটা স্কুল তুলে দিয়ে আরেকটা স্কুলের সাথে জুড়ে দিতে হবে? একটি স্কুলে যা অতিরিক্ত সুবিধা আছে, আরেকটি স্কুলেও তা চালু করার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না কেন?

এর ফল কী দাঁড়াচ্ছে? বাড়ির কাছাকাছি স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়াতে ছাত্রদের একটা বড় অংশ পড়া ছেড়ে দিচ্ছে। এর শিকার হচ্ছে মূলত গরিব ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলি। বিশেষ করে দলিত এবং মুসলিম পরিবারের মেয়েরা শিক্ষার জগৎ থেকে ছিটকে যাচ্ছে। কার্যত শিক্ষার অধিকার আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন যোগী সরকার এই বেআইনি কাজটিই করে চলেছে। সরকারের এই ভূমিকায় বেসরকারি স্কুলের বাজার আরও খুলে গিয়েছে। বহু পরিবার ঘটিবাটি বিক্রি করে হলেও শিক্ষার কথা ভেবে সন্তানদের বেসরকারি স্কুলে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। স্কুল বন্ধের অভিযানে উত্তরপ্রদেশ জুড়ে শিক্ষানুরাগী মানুষের মনে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। লক্ষ্ণৌতে ১৫৪টি প্রাইমারি স্কুলের বিলুপ্তি ঘটেছে। লক্ষ্ণৌতে মালিহাবাদ তহশিলের পাহাড়পুরে একটি স্কুলকে ৩ কিলোমিটার দূরের একটি স্কুলের সঙ্গে জুড়়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী শিশুর বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে স্কুল থাকা বাধ্যতামূলক। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত এই শিশুরাই বাড়াচ্ছে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা। যাদের জ্ঞানার্জন করার কথা, যারা সমাজে অনেক অবদান রেখে যেতে পারত, সরকারের ভূমিকায় সেই সব সম্ভাবনার মৃত্যু ঘটছে। একই সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে বহু সামাজিক সঙ্কটের। এর ফলে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত মেয়েদের মধ্যে অবধারিত ভাবে বাড়বে বাল্যবিবাহের সমস্যা।

অন্য দিকে হাজার হাজার শিক্ষক, শিক্ষামিত্র উদ্বৃত্ত হবেন, তাঁদের কাজ কতদিন থাকবে কেউ জানে না। ইতিমধ্যে শিক্ষক সংগঠনগুলি এর প্রতিবাদে পথে নেমেছে। তারা এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

শুধু উত্তরপ্রদেশেই নয়, বহু রাজ্যে স্কুল বিলোপ একটা মারাত্মক সমস্যা হিসাবে এসেছে। পশ্চিমবঙ্গও তার বাইরে নয়। তৃণমূল সরকারের শাসনে এ রাজ্যের প্রতিটি জেলায় বহু সংখ্যক স্কুল তালিকাবদ্ধ হয়েছে বিলুপ্তির জন্য। এ রাজ্যে ৮ হাজার স্কুল বন্ধ করা হয়েছে। কেন্দে্রর শাসক দল, রাজ্যের শাসক দল এ ভাবেই জনশিক্ষা নিয়েছিনিমিনি খেলছে। ছাত্র সংগঠন এআইডিএসও দীর্ঘ দিন ধরে স্কুল অবলুপ্তির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে পথে নেমেছে। অল ইন্ডিয়া সেভ এডুকেশন কমিটি জাতীয় শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে। কমিটি যথার্থই বলেছে, সরকারি শিক্ষার এই পরিকল্পিত সমাধি ঘটানো হচ্ছে বেসরকারি শিক্ষা-ব্যবসার বাজার সম্প্রসারণ ঘটাতেই। একে রুখতে হলে সর্বত্র আন্দোলনের কমিটি গঠন করে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে।