Breaking News

পেমেন্ট কোটা বাতিলের দাবিতে কর্ণাটকের দাভাঙ্গেরেতে বনধ

কর্ণাটকে প্রথম সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ‘ইউনিভার্সিটি ব্রহ্মাপ্পা দেবেন্দ্রাপ্পা টাভানাপ্পানাভার কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং’ (ইউবিডিটি) ১৯৫১ সালে তৈরি হয়েছিল দাভাঙ্গেরে এলাকার বহু মানুষের দানে। উদ্দেশ্য ছিল দরিদ্র ও পিছিয়ে-পড়া পরিবারের মেধাবী ছাত্রদের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সুযোগ করে দেওয়া। কিন্তু কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মতোই কংগ্রেস পরিচালিত কর্ণাটক রাজ্য সরকারের শিক্ষার পণ্যায়ন ও বেসরকারিকরণের নীতি বিখ্যাত এই কলেজটিকে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ঠেলে দিতে চাইছে।

বর্তমানে কর্ণাটকে সমস্ত সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ফি বাড়িয়ে ৪৭ হাজার টাকা করে দেওয়ায় সেখানে ভর্তি হওয়া দরিদ্র ছাত্রদের পক্ষে দুরূহ হয়ে উঠেছে। এমন সময়ে ইউবিডিটিও তার ৫০ শতাংশ আসনে ‘পেমেন্ট কোটা’ চালু করে ৯৭ হাজার টাকা ফি-র বিনিময়ে ছাত্র-ভর্তির কথা ঘোষণা করেছে। এমনকি কোনও প্রশাসনিক নোটিশ ছাড়াই সেখানে এই কোটা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

স্বাভাবিক কারণেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন কর্ণাটকের মানুষ। এআইডিএসও-র নেতৃত্বে গত একমাস ধরে ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসা সত্ত্বেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। ইউবিডিটি-তে ৫০ শতাংশ পেমেন্ট-কোটা বাতিলের দাবিতে হাজার হাজার মানুষের স্বাক্ষর সংগ্রহ করে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হয়। মন্ত্রী সেই দাবি নস্যাৎ করে দিয়ে জানায়, শিক্ষা এখন আর সরকারের দায়িত্ব নয়।

এই অবস্থায় দাবি আদায়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছাত্রছাত্রীরা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে তাঁদের মতামত নেয় এবং ‘ইউবিডিটি বাঁচাও’-এই ব্যানারে একযোগে ১৬ অক্টোবর দাভাঙ্গেরে বনধের ডাক দেয়। এলাকার মানুষের পাশাপাশি শ্রমিক, কৃষক, দলিত, বাম ও প্রগতিশীল মানুষের ৪৫টি সংগঠন শিক্ষা বাঁচানোর দাবিতে এই বনধে সামিল হয়। বনধের সমর্থনে শহরজুড়ে হাজার হাজার পোস্টার লাগানো হয়। সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসে ছাত্রদের সঙ্গে বনধের প্রচারে সামিল হন।

১৬ অক্টোবর কর্ণাটকের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে এক উল্লেখযোগ্য দিন। ইউবিডিটি কলেজে পেমেন্ট-কোটা বাতিলের দাবিতে এলাকার মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই বনধকে সর্বাত্মক সফল করেন। প্রশাসন থেকে বার বার বনধ ব্যর্থ করার আবেদন জানানো সত্তে্বও গোটা শহর সেদিন ছিল স্তব্ধ, এমনকি ফুটপাতের ছোট ছোট দোকানগুলিও বন্ধ ছিল। বনধ ডাকা বেআইনি বলে ঘোষণা করে ছাত্রনেতাদের পুলিশ গ্রেফতার করলে কৃষক ও দলিত সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ব্যাপক সংখ্যায় সমবেত হয়ে প্রবল বিক্ষোভ দেখান এবং পুলিশকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ছাত্রনেতাদের অবিলম্বে মুক্তি না দিলে তাঁরা হাইওয়ে ও রেললাইন অবরোধ করবেন। চাপে পড়ে পুলিশ গ্রেফতার হওয়া ছাত্রদের ছেড়ে দেয়। সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে এআইডিএসও-র নেতৃত্বে দাভাঙ্গেরের মানুষের এই প্রতিবাদ কর্ণাটক রাজ্য ও গোটা দেশের সামনে নজির হয়ে থাকল।