বর্তমান দিনের ভয়াবহ আর্থিক সংকট ও বেকারত্বের মধ্যেও পারিবারিক দৈন্য যতটা ঘোচানো যায়, এমন স্বপ্ন চোখে নিয়েই অগ্নিবীর প্রকল্পে যোগ দিয়েছিল ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর থানার সুখজোড়া গ্রামের সৈকত সিট। কিন্তু তার স্বপ্ন রয়ে গেল অধরাই। পুজোর সমস্ত আনন্দ উৎসাহ ম্লান করে গত দশমীর দিনে বাড়িতে ফিরল তার কফিনবন্দি দেহ। তবে শুধু সৈকত নয় ওই দিন অনুশীলন চলাকালীন ওর আরও একজন সহকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
সৈকত সিট বা তার সহকর্মীর মৃত্যুতে এদের পরিবারের সাথে আমরাও বেদনাহত। তবে সৈকতের মৃত্যুই কেবল একটি আকস্মিক ভাবে ঘটে যাওয়া ঘটনা নয় বরং ধারাবাহিকভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে বিজেপি সরকারের অপরিকল্পিত অগ্নিপথ প্রকল্পের জন্য এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কুড়িজন আত্মহত্যা করেছেন, অনুশীলন চলাকালীন আরও অনেকেই মৃত্যুর কবলে। মেয়েদের ক্ষেত্রে তো নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেশি।
কী এই অগ্নিবীর প্রকল্প? এই প্রকল্প আনা হয়েছিল যখন সারা দেশে করোনা অতিমারিতে মানুষ বিধ্বস্ত। এই প্রকল্পে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে ১৭ থেকে ২৩ বছর বয়সী নির্বাচিত প্রার্থীদের চার বছরের জন্য নথিভুক্ত করা হয়। সাংগঠনিক প্রয়োজনীয়তা এবং সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা প্রবর্তিত নীতির উপর ভিত্তি কর়ে কর্মসংস্থানের মেয়াদ শেষ করার পরে অগ্নিবীরদের স্থায়ী ক্যাডারে তালিকাভুক্তির জন্য আবেদন করার সুযোগ দেওয়ার কথা। এদের সর্বাধিক ২৫ শতাংশকে নিয়মিত ক্যাডার হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীতে নথিভুক্ত করার জন্য নির্বাচিত করা হবে বলা হয়েছে। বেশিরভাগ অগ্নিবীরকে চার বছর পর কিছু টাকা দিয়ে দায়িত্ব সেরে দেবে সরকার।
এই প্রকল্পের সুবিধাগুলি তুলে ধরতে বিজেপি সরকার নিজেদের নেতা-মন্ত্রীদের ছাড়াও কাজে লাগিয়েছে সেনাপ্রধানদের। এই অগ্নিবীর প্রকল্প আনার ক্ষেত্রে তারা কোনও রকম গণতান্ত্রিক পদ্ধতি অবলম্বন করেনি বা অভিজ্ঞ কোনও সেনানায়কদের সঙ্গেও কথা বলেনি।
অগ্নিবীরদের চাকরি অন্তে নেই কোনও পেনশনের সুবিধা বা কোনও প্রভিডেন্ট ফান্ডের ব্যবস্থা। এমনকি তাদের জীবনের নিরাপত্তাও প্রশ্নচিহ্নের মুখে। বাস্তবে বেকার সমস্যায় জেরবার দরিদ্র পরিবারের যুবকদের লাচারির সুযোগ নিয়ে তাদের পুরোপুরি অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে এই প্রকল্পের মধ্য দিয়ে সরকার। তবে আশার কথা এই যে, যতই মন-ভোলানো চমকপ্রদ কথার আড়ালে মাতিয়ে মানুষকে এগুলিতে মজিয়ে রাখার চেষ্টা হোক না কেন, ধীরে ধীরে সেই মোহ ভাঙছে। মানুষ অন্যান্য সংস্কারগুলির সাথে সাথে এই সেনাবাহিনী কেন্দ্রিক সংস্কারের মধ্যে সরকারি ভাঁওতাবাজি ধরতে পারছেন এবং তার বিরুদ্ধে সজাগ হচ্ছেন।
তনুশ্রী বেজ, মেদিনীপুর