Breaking News

পাঠকের মতামতঃ পদ ৭ হাজার, দরখাস্ত সাড়ে ৯ লক্ষ! লাইনে পিএইচডি-রাও

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কথিত ডবল ইঞ্জিন সরকারের উন্নয়নের গল্পকথা সর্বজনবিদিত। বিজেপি তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার আগে ভারতবর্ষের মানুষ মোটামুটি জেনে গেছে যে আচ্ছে দিন, বছরে দু’কোটি চাকরি, কালো টাকা ফেরত আর সর্ববৃহৎ অর্থনীতির প্রতিশ্রুতি ছিল ভুয়ো। আজ কোটি কোটি বেকার বাড়িতে বসে আছে, কারণ তাদের হাতে কাজ নেই। উচ্চশিক্ষার মূল্য চোকাতে হচ্ছে ভিক্ষে করে, ধার নিয়ে। লক্ষ লক্ষ মাস্টার ডিগ্রি, পিএইচডি করা ছেলেমেয়ে আজ সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি, ড্রাইভার অথবা অফিসের রিসেপশনিস্টের কাজ করছে। একই অবস্থা ইঞ্জিনিয়ারদের। কয়েক বছর আগে উত্তরপ্রদেশে পিয়নের চাকরির একটি পদের জন্য কাতারে কাতারে মাস্টার ডিগ্রি, পিএইচডি এবং ইঞ্জিনিয়াররা পরীক্ষা দিতে বসেছিল।

বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের ভোপালে ৭ হাজার কনস্টেবল পদের জন্য আবেদন জমা পড়েছে ৯ লক্ষ ৩৯ হাজারের বেশি। বলা হচ্ছে একটি পোস্টে গড়ে ১৩ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল এই আবেদনকারীদের মধ্যে ৪২ জন পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং প্রায় ১২ হাজার ইঞ্জিনিয়ার আছেন (এই সময়, বুধবার, ৮ অক্টোবর, ’২৫)। ভারতের প্রায় সব বহুল প্রচারিত কাগজেই এই খবরটা বেরিয়েছে।

বাস্তবের অবস্থা আরও অনেক বেশি খারাপ। কোটি কোটি কর্মক্ষম মানুষ বেকার হয়ে বাড়িতে বসে আছে, অথবা এমন কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে যেখানে শিক্ষাগত দক্ষতা-যোগ্যতা কোনও কাজেই আসছে না। শিক্ষিত বেকাররা সামান্য একটু রোজগারের আশায় সুইগি, জোমাটো ডেলিভারি করছে। বহু শিক্ষিত বেকার শুধু কাজ পাওয়ার আশায় ভোটের কাজে রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে দিনমজুরের মত খাটছে। আর বেশিরভাগ শিক্ষিত বেকাররা টাকার লোভে আর অভাবের তাড়নায় নেশাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সঙ্গে সঙ্গে অসামাজিক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ছে।

আজ দেখা যাচ্ছে যে ঘরবাড়ি বেচে, ঋণ করে ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষা দেওয়ার পর হাতে তাদের কোনও কাজ নেই। সে জন্যই তো ৪২ জন পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং প্রায় ১২ হাজার ইঞ্জিনিয়ার একটা পিওন বা কনস্টেবলের পদের জন্য আবেদন করছে–এই আশা করে যে কিছু তো অন্তত পাওয়া যাবে। আবার এর মধ্যে সরকারের টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়া তো আছেই, যার প্রকাশ্য অবস্থা পশ্চিমবঙ্গে এসএসসি পরীক্ষার দুর্নীতিতে দেখা যাচ্ছে বা এই মধ্যপ্রদেশের ব্যপম দুর্নীতিতে দেখা গেছে। ব্যপম দুর্নীতির কোনও কিনারা হয়নি। পশ্চিমবঙ্গের এসএসসি দুর্নীতিরও কোনও কিনারা হবে কি না কেউ জানে না।

সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনও ক্ষেত্রেই স্থায়ী চাকরি প্রায় নেই। যৎসামান্য মাইনেতে চাকরি পেলেও সেই চাকরি থাকবে কি না তারও কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই পিএইচডি ডিগ্রিধারী, ইঞ্জিনিয়ার এবং মাস্টার ডিগ্রি পাস করা ছাত্রছাত্রীরা আজ সুইপারের কাজ করছে, ডোমের কাজ করছে, লিফটম্যানের কাজ করছে, হাজার হাজার গ্রুপ ডি পোস্টে কাজ করছে। এই সকল চাকরি পাওয়ার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা ধার করে শাসক দলের নেতাদের ঘুষ দিচ্ছে যাতে চাকরিটা অন্তত পাওয়া যায়।

ভোপালের এই খবরটা কোনও বিচ্ছিন্ন খবর নয়। সারা দেশে একই অবস্থা। বিজেপি পরিচালিত ডবল ইঞ্জিন সরকার হোক কি পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূলের সরকারই হোক, গরিব সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের কাছে পরিস্থিতি দুঃসহ হয়ে উঠেছে।

শীর্ষ দাশগুপ্ত

কলকাতা