Breaking News

পাঠকের মতামতঃ গণদাবী বিভ্রান্তি দূর করে

১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম গণদাবী কাগজটি আমার চোখে পড়ে একটি মেলাতে। সেই প্রথম ‘শিবদাস ঘোষ’ এই মহান মানুষটির নাম এবং সত্যিকারের বিপ্লবী দল এই ইউ সি আই (সি)-র নাম আমি জানতে পারলাম। আমি বলব– এই মহামূল্যবান পত্রিকাটির মাধ্যমে দেশের অত্যন্ত গরিব মানুষের মুক্তির স্বপ্ন দেখা মানুষগুলির কোথায় কোথায় বিভ্রান্তি আছে, জ্ঞান-বিজ্ঞান, দর্শন, অর্থনীতি, ধর্ম এবং সর্বোপরি রাজনীতি নিয়ে সিপিএম এবং এস ইউ সি আই (সি)-র পার্থক্য কোথায়– এ সব নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লিখুন।

কেউ কেউ এখনও মনে করে, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামে শিল্পে বাধা দিয়ে এসইউসিআই(সি) খুব অন্যায় ও ভুল কাজ করেছে। আমি বলি, গুজরাটের সানন্দে শুরুতে কতগুলো ন্যানো গাড়ি উৎপাদন হত, এখন ওখানে কত উৎপাদন হচ্ছে, কতজন শ্রমিক আছেন, এলাকার কতখানি উন্নতি হয়েছে, বাজারের হাল কেমন– এইসব তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত মানুষের চোখ খুলে দেওয়ার দায় গণদাবীর। আর একটি কথা– বাজারি কাগজগুলি, টিভি এবং স্মার্ট ফোন সমাজে নিত্যদিন যে সব বিভ্রান্তি এবং মিথ্যা ছড়ায়, জনগণের দৃষ্টিকে কৌশলী কথায় আচ্ছন্ন করে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার মরিয়া প্রয়াস চালায়, এর যোগ্য জবাব সুস্পষ্ট করে সচেতন জনগণের জন্য আলাদা একটি শিরোনামে লেখা প্রয়োজন। অবস্থা যা, তাতে গণদাবী দৈনিকের দাবি করে।

শিবদাস ঘোষের চিন্তা ও শিক্ষার সান্নিধ্য না পেলে অনেক অভাবী মানুষের মতো আমি হয়তো উন্মাদ হতাম বা আত্মহত্যা করে জীবনযন্ত্রণা থেকে মুক্তি নিতাম। কিন্তু না, ওই মহামানবের শিক্ষা, জ্ঞান, চরিত্রসাধনা আজও আমাকে চলার পথে প্রতিকূলতার মধ্যে, দারিদ্রের মধ্যেও পথ চলার প্রেরণা দেয়। আত্মমর্যাদা বোধ জাগিয়ে দেয়। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কমরেড প্রভাস ঘোষ আমার কিশোর মনে প্রবল ছাপ ফেলেছিলেন ‘নীতি নৈতিকতার সঙ্কট প্রসঙ্গে’ মূল্যবান একটি পুস্তিকার মাধ্যমে। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু নিয়ে উস্তির একটি ছাত্রসভায় তাঁর একটি মূল্যবান ভাষণ এখনও স্মৃতিতে সমুজ্জ্বল।

শিবদাস ঘোষের অজস্র মূল্যবান শিক্ষা থেকে দুটি কথা বলছি– ‘‘সমালোচক মাত্রেই শিক্ষক। তিনি ঘরের লোক হোন বা বাইরের, এমনকি শত্রু হলেও আমি মনে করি তিনি শিক্ষক।’’ তিনি বলতেন, ‘‘আমি গাছতলাতে আছি, হয়তো গাছতলাতেই মরব, হয়তো রাস্তায় পড়ে মরব, হয়তো কেউ আমার খোঁজও পাবে না মৃত্যুর পর। কিন্তু যা সত্য বলে বুঝেছি– তাই নিয়েই চলব, তাই নিয়েই লড়ব। হয়তো আমাকে গুলি করে মারা যাবে কিন্তু আমাকে কেনা যাবে না।’’ আমৃত্যু এই দুটি কথা আমি ভুলব না। যদি পারেন সবাই কথাগুলি বুকে গেঁথে নিন। এটাই এখনকার দাবি।

শ্যামল হালদার

মৌতেশিয়া, হাওড়া