Breaking News

নো কিংস আন্দোলনে উত্তাল আমেরিকা

নো কিংস আন্দোলনে রাজপথে আমেরিকার নাগরিকরা

ক্ষমতায় বসার পর থেকেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খরচ ছাঁটাই নীতি নিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে বহু সরকারি দপ্তরে বরাদ্দ কমাচ্ছেন। তার ওপর গত ২২ দিন ধরে (২৩ অক্টোবর পর্যন্ত) চলা ‘শাট ডাউন’-এর ফলে আমেরিকা জুড়ে চলছে ছাঁটাই, লে-অফ। অনেক সরকারি কর্মীকে বেতন ছাড়া কাজ করে যেতে হচ্ছে।

শিক্ষা এবং গবেষণা খাতে সরকার বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ায় অনেকে অন্য দেশে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ, স্বাধীন চিন্তা ও সংবাদমাধ্যমের উপর লাগামছাড়া আক্রমণ, দেশ জুড়ে দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা– ট্রাম্প সরকারের এই ভূমিকায় মানুষের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। এর ওপর মার্কিনীদের স্বার্থের কথা বলে অভিবাসীদের ভিসা বাতিল ও তাদের বিতাড়নের সিদ্ধান্তে তাদের ক্ষোভ মাত্রাছাড়া হয়।

এই অভিবাসী নীতিতে দেশের শিক্ষা ও গবেষণা ক্ষেত্র তো বটেই, সমস্ত ক্ষেত্রে সংকট তৈরি হচ্ছে। চড়া শুল্ক-নীতির ফলে ওষুধ, ইস্পাতজাত সামগ্রী থেকে শুরু করে বহু জিনিসের দাম বিপুল হারে বেড়েছে। কৃষিপণ্যেরও দাম বাড়ছে। এতে সংকটে পড়েছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ এবং তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্র ও নানা ব্যবসায়ী সংগঠন। ট্রাম্প সরকারের স্বৈরাচারী পদক্ষেপে আগেও দু’বার ব্যাপক বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন অসংখ্য মানুষ। ১৭ অক্টোবর আবারও ‘নো কিংস ইন আমেরিকা’ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল গোটা দেশ। ‘উই দ্য পিপল’ ব্যানারে ‘আমাদের কোনও রাজা নেই’, ‘আমাদের চুপ করানো যাবে না’ স্লোগানে মুখরিত মিছিল ওয়াশিংটন, লস এঞ্জেলস, মন্টানা, আটলান্টা, কলরাডো সহ নানা শহরে প্রতিবাদের ঢেউ তোলে। ‘আমেরিকান ফেডারেশন অব টিচার্স’, ‘সোসাল সিকিউরিটি ওয়ার্কার্স’, ‘কমিউনিকেশনস ওয়ার্কার্স অফ আমেরিকা’, ‘আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন’ সহ ২০০টির বেশি প্রগতিশীল সংগঠনের ডাকে ৭০ লক্ষের বেশি মানুষ এই বিক্ষোভে পা মেলান। ছিলেন শিক্ষক, আইনজীবী, প্রাক্তন সেনাকর্মী, ছাঁটাই শ্রমিক, ছাত্র, অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সকলেই। সেনাবাহিনী নামিয়ে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করে সরকার। তার তোয়াক্কা না করে ২ হাজারের বেশি স্থানে বিক্ষোভ হয়।

 এই বিক্ষোভকে ‘কমিউনিস্ট ‘ও ‘মার্ক্সবাদী’দের কাজ বলে তোপ দেগেছে সরকারি দল রিপাবলিকানের নেতারা। তারা একে ‘হেট আমেরিকা’ আন্দোলন আখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছেন। যদিও এতে ভুলছেন না আমেরিকার নাগরিকরা।

১৭৭৬ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের পতন ঘটে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল আমেরিকায়। বর্তমানে ট্রাম্প সরকারের নানা পদক্ষেপে মার্কিন নাগরিকরা মনে করছেন, আবার ‘রাজতন্ত্র’ ফিরে এসেছে। খর্ব হচ্ছে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। আসলে শাসকের চেয়ারে ট্রাম্প বা বাইডেন যেই থাকুক না কেন, বর্তমান মুমূর্ষু বুর্জোয়া ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের অবশেষটুকুও যে নেই তা এই আন্দোলনে মানুষের ‘গণতন্ত্র ফেরানোর’ দাবি থেকেই স্পষ্ট।